শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কেন এফটিসির প্রধান হিসাবে লিনা খানকে বেছে নিলেন বাইডেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০২১, ৭:৪৬ পিএম

ফেসবুকের প্রধান মার্ক জুকারবার্গের প্রথম নীতি হ’ল, ‘সব কিছু ভেঙে প্রচণ্ড গতিতে সামনে এগিয়ে যান।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি নীতি সম্পর্কিত সাবেক বাণিজ্য সহকারী সচিব ব্রুস মেহলম্যান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, সেই একই নীতি এখন এখন ভোক্তা-সুরক্ষা সংস্থা ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে (এফটিসি) গাইড করতে পারে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে লিনা খানের নাম ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) কাজ মূলত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য কমিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ানো। সে সঙ্গে গ্রাহকের অধিকার রক্ষার দায়িত্বও কমিশনটির। ৩২ বছর বয়সী লিনা খান ‘অ্যামাজনস অ্যান্টিট্রাস্ট প্যারাডক্স’ এর জন্য সর্বাধিক পরিচিত, এটি একটি নিবন্ধ যা তিনি ২০১৬ সালে লিখেছিলেন ইয়েল আইন স্কুলের ছাত্রী হিসাবে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, যদি গ্রাহকরা বিনামূল্যে পরিষেবাদি থেকে উপকৃত হন তবে কোনও ক্ষতি হচ্ছে না, এই ধারণা অ্যামাজনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলির শক্তি মোকাবেলায় অপর্যাপ্ত। কারিগরি জায়ান্টরা ছোট সংস্থাগুলোর ক্ষতি করতে আকর্ষনীয় দাম এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

লিনা খানের আরও দুটি সাম্প্রতিক রচনা দেখায় যে, তিনি প্রযুক্তিকে কত গভীরভাবে গ্রহণ করেছেন। তিনি ‘অবিশ্বাস’ বিষয়ে হাউসের বিচার বিভাগের উপকমিটির দ্বারা গত বছর একটি প্রতিবেদনে অবদান রেখেছিলেন। সেখানে সুপারিশ করা হয়েছিল যে, বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরায় চালু করা দরকার। কলম্বিয়া আইন পর্যালোচনায় তিনি বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোতে ‘কাঠামোগত পৃথকীকরণের’ পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি ‘অবিশ্বাস’ আইনের টুলকিট ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে প্রচলিত জ্ঞানের চেয়েও অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছেন।

তবে লিনা খানের অনেকগুলো মতামত রক্ষণশীলদের কাছেও জনপ্রিয়, যারা বড় আকারের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের আকার এবং মুক্ত বক্তৃতা দমিয়ে রাখার জন্য চাপ দেয়। ‘তিনি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব, তবে রাজনৈতিক মহলে একটি খুব জনপ্রিয় ব্যক্তি,’ নিউ স্ট্রিট রিসার্চ নামে একটি বিশ্লেষণ সংস্থা বলেছেন।

সাবেক এফটিসি কমিশনার লেভিনের মতে, প্রযুক্তি জায়ান্টদের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এজেন্ডাটিতে চারটি ফ্রন্ট থাকবে। লিনা খান বিলে কংগ্রেসের সাথে কাজ করবেন (যাদের দ্বিপক্ষীয় সমর্থন রয়েছে এমন একটি ডিগ্রি রয়েছে) উদাহরণস্বরূপ, তাদের নিজস্ব পরিষেবাকে সমর্থন করা থেকে নিষেধ করে। দ্বিতীয়ত, তিনি ইউরোপীয় নিয়ামকদের সাথে সহযোগিতা করবেন, যারা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৃতীয়ত, তিনি তদন্ত শুরু করবেন। এবং চতুর্থত, তিনি মামলা করতে পারবেন। এখানে তিনি সবচেয়ে বেশি বাধা পেতে পারেন। আদালত ব্যবসায়ের পক্ষে রয়েছে, বিশেষত যেহেতু ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৩৪ জন বিচারককে মনোনীত করেছেন।

ই-কমার্স সেবাদাতা আমাজনের বড় সমালোচক হিসেবে পরিচিত লিনা খান। অসম প্রতিযোগিতা হ্রাসের জন্য কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এ–বিষয়ক আইনগুলোতে পরিবর্তনের জন্যও সোচ্চার তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, ‘বিগ টেক’ হিসেবে পরিচিত অ্যাপল, আমাজন, গুগল, ফেসবুকের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর খড়্গহস্ত হতেই লিনা খানকে বেছে নেয়া হয়েছে। মার্কিন সিনেটে মঙ্গলবার ৬৯-২৮ ভোটে নির্বাচিত হন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির আইনের সহযোগী অধ্যাপক লিনা। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্ম হলেও তার মা-বাবা পাকিস্তানি। লিনার বয়স যখন ১১, তখন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে আইন নিয়ে পড়াশোনার সময় পরিচিতি পান লিনা খান। সে সময় আধুনিক অ্যান্টিট্রাস্ট আইনগুলো ই-কমার্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আমাজনের আসল ক্ষমতা নির্ণয়ে কী কারণে ব্যর্থ, তা নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সে গবেষণাপত্র খবরের শিরোনাম যেমন হয়েছিল, তেমনই নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিও কেড়েছিল।

চুপচাপ স্বভাবের লিনা খান বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে গেছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রায় ১৬ মাসের তদন্তে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির হয়ে কাজ করেছেন। এফটিসির কমিশনার রোহিত চোপড়ার উপদেষ্টার ভূমিকাতেও দেখা গেছে তাঁকে। গত বছর তিনি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ফেডারেল ট্রেড কমিশনে মোটে পাঁচ কমিশনার। লিনা খানসহ তাদের তিনজন ডেমোক্র্যাট। তারা সবাই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কঠোর আইন প্রবর্তনের পক্ষে। ফলে এখন থেকে পাঁচ সদস্যের কমিশনে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের মাধ্যমে মিসেস খান সম্ভবত প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর একচেটিয়া ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে আরও আক্রমণাত্মক পরীক্ষার দিকে পরিচালিত করবেন। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন