বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জাতীয় সংসদে জন স্বার্থ সম্পৃক্ত বিষয়ে প্রধান্য দিন

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

জাতীয় সংসদে এখন বাজেট অধিবেশন চলছে। সাধারণত এ অধিবেশনে বাজেটের নানা দিক নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধী দল বক্তব্য দিয়ে থাকে। বিরোধী দল বাজেটের সঙ্গতি-অসঙ্গতি এবং তা কতটা জনবান্ধব, সেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করে। এর জবাবে সরকারি দল ব্যাখ্যা দেয়। এভাবে নানা বিষয়ে আলোচনার পর সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন শেষে বাজেট পাস হয়। বাজেট অধিবেশনে জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনায় আসতে পারে। তবে এবারের বাজেট অধিবেশনে এসব বিষয় ছাপিয়ে এক নায়িকার কান্ডকীর্তিসহ ক্লাব ও মদ-জুয়ার অপসংস্কৃতি নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সংসদে উত্তাপ ছড়িয়েছে, ক্লাব, মদ, জুয়া, ডিজে পার্টি, টিকটকের ঘটনা। সরকারি ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা এ নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি ও তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। অথচ করোনাকালে সাধারণ মানুষের যে দুর্গতি ও দুঃসময় চলছে, তা নিয়ে খুব কমই আলোচনা হচ্ছে। জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। এর পরিবর্তে জুসি বা রসালো বিষয় আলোচনায় বেশি উঠে আসছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘বাজেট অধিবেশন হলেও সংসদে যেসব ইস্যুতে কথা হচ্ছে, তাতে এটা প্রতীয়মান হয়, সংসদ সদস্যদের বিবেচনায় বাজেট প্রাধান্য পাচ্ছে না। বাজেট অধিবেশন নিয়ে অনেক এমপির আগ্রহ কম। বাজেটের ওপর আলোচনার জন্য বস্তবে যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও ধ্যানধারণা থাকা দরকার তা অনেকেরই নেই। এর ফলে বাজেটের ওপর আলোচনার জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে তারা অন্য ইস্যুতে চলে যান।’ তার এ বক্তব্য উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।

সংসদ সদস্যরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে স্ব স্ব এলাকার নানা সমস্যা, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলা এবং কিভাবে তা থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়, এ নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়াই তাদের উল্লেখযোগ্য কাজ। এর বাইরে অন্যান্য বিষয়ও আলোচনা হতে পারে। তবে তা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পেছনে ফেলে প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হতে পারে না। দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক দিন ধরে এক নায়িকাকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত অন্যান্য অনাকাক্সিক্ষত বিষয়ই সংসদ সদস্যদের আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ধরনের আলোচনা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়াও বাঞ্চনীয় নয়। আমাদের চারপাশে নানা সমস্যা বিরাজমান। এসব বিষয় যেন সংসদে গুরুত্ব পাচ্ছে না। বর্ষা-বৃষ্টিতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পানিবদ্ধতা ও যানজটে অসহনীয় পরিস্থিতি ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, সে ব্যাপারে সংসদ সদস্যদের আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, একের পর এক নৃশংস হত্যাকান্ড, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস, মূল্যস্ফীতি, টিকা কার্যক্রমের অনিশ্চয়তা, করোনার কারণে আয় কমে যাওয়া, নতুন দরিদ্র হওয়া, রফতানি আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা, বিদেশে শ্রমবাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়া ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। জাতীয় সংসদে এসব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া উচিৎ। গত কয়েক দিন ধরে জনগুরুত্বহীন বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা ও মন্তব্যে দেশ ও জাতির কি উপকার হয়েছে বা হচ্ছে, তা সংসদ সদস্যরাই ভাল বলতে পারবেন। করোনার এ সময়ে মানুষের বেঁচে-বর্তে থাকাই কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সীমাহীন দৈনদশায় তারা নিপতিত। চাকরি হারানো, বেতন কমে যাওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সন্তানদের শিক্ষা ব্যাহত হওয়া, তাদের মন ও মননশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়া, নদ-নদী ভাঙনে অসংখ্য বাড়ি-ঘর, ফসলী জমি, প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা পানিতে তলিয়ে যাওয়া, হাজার হাজার মানুষের উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়ার মতো বিষয়গুলোর সমাধান কীভাবে হতে পারে জাতীয় সংসদ থেকে সে দিকনির্দেশনাই আসার কথা। অথচ এসব বিষয় কোনো গ্রাহ্যতা পাচ্ছে না। এর চেয়ে অপরিনামদর্শিতা আর কি হতে পারে?

জাতীয় সংসদে দেশের সকল সমস্যা তুলে ধরা ও তার সমাধান নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার সর্বোচ্চ প্ল্যাফর্ম। আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনার সুচিন্তিত পরামর্শ, জাতীয় ও নাগরিক সমস্যাদির কাক্সিক্ষত সমাধান ইত্যাদিই সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে জনগণ আশা করে। তাদের জন্য জনগণের ট্যাক্সের বিপুল অর্থ অকাতরে ব্যয় হয়। এর বিনিময়ে তারা কি দিচ্ছেন, সঙ্গতকারণেই সে প্রশ্ন ওঠে। সংসদ সদস্যদের অনেকেই হিসাবে রাখছেন না, সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রতিদিন কত টাকা ব্যয় হয় এবং তা কোথা থেকে আসে। জনগণের অর্থের এতটুকু অপচয় সমর্থনীয় হতে পারে না। আমরা মনে করি, সংসদ সদস্যদের উচিৎ হাল্কা ও চটুল বিষয় নিয়ে কিংবা পারস্পরিক দোষারোপে অধিক সময় ব্যয় না করে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সংসদে বেশি বেশি আলোচনা করা। জনগণের সীমাহীন দুর্ভোগ ও দুর্গতি এবং সমস্যা তুলে ধরে কিভাবে সমাধান করা যায় তার দিক নির্দেশনা দেয়া। সংসদ সদস্যরা দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে যথার্থ ভূমিকা রাখবেন, এটাই প্রত্যাশিত।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dadhack ১৯ জুন, ২০২১, ১২:৪৬ পিএম says : 0
যতদিন আমাদের দেশে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন করা না হবে ততদিন আমাদের পরে 50 নির্যাতন করে যাবে.. আমাদের কষ্ট অর্জিত ট্যাক্সের টাকায় বেতন পেয়ে আমাদের উপর ঐতিহাসিক পৈচাশিক নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকবে যদি না আমরা বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী দের কাছ থেকে যেভাবে আমরা সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম আবারো সেই ভাবে আমাদের সংগ্রাম করে দেশটাকে স্বাধীন করতে হবে তাহলেই আমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারব.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন