শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কাবুল বিমানবন্দরের সুরক্ষায় তুরস্ক

আঙ্কারার প্রস্তাবকে স্বাগত পাকিস্তানের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনা সরিয়ে নেয়ার পরে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তান ও হাঙ্গেরিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান। এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষজ্ঞরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান।

গত সোমবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে জোটের শীর্ষ সম্মেলনের সময় ন্যাটো নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেরকে এরদোগান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ের পর তুরস্ক আফগানিস্তানে নতুন মিশনে পাকিস্তান ও হাঙ্গেরিকে জড়িত করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সিনেট প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান মুশাহিদ হুসেন সৈয়দ আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক উন্নয়ন।’ তিনি বলেন, আফগানিস্তানের ‘শান্তি, সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতার’ জন্য ইসলামাবাদ এবং আঙ্কারা মূলত দু’দেশের মধ্যকার গভীর বিশ্বাস, বন্ধুত্ব এবং আস্থার সম্পর্কে বলিয়ান গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আমেরিকা ও বিদেশী সেনারা আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল অবস্থায় রেখে চলে যাচ্ছে। যেমনটা তারা আগেও করেছিল ১৯৮৯ সালে। সে সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে তাদের রেড আর্মি বের করে নিয়ে যায়। এই কথা উল্লেখ করে মুশাহিদ হুসেন বলেন, ‘আফগানিস্তানের শান্তি, সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও তুরস্কের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।’ তিনি বলেন, দুই দেশ হার্ট অফ এশিয়া-ইস্তাম্বুল প্রক্রিয়ার অংশ হয়েছে, যার লক্ষ্য রাজনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাতের সমাধানের লক্ষ্যে চলমান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

এদিকে, নয়াদিল্লি-ভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার মনোজ জোশী এরদোগানের প্রস্তাবটিকে ‘কার্যক্ষম’ বলে মন্তব্য করেছেন। জোশি আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি কার্যকর কারণ এটি কেবল বিমানবন্দরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পাকিস্তানের জড়িত থাকার ফলে তুর্কি মিশন আরও সহজ হয়ে উঠবে যেহেতু ইসলামাবাদ তালেবানদের রসদ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে।’ তিনি বলেন, মূলত আশেপাশের সীমান্তে অবস্থানের কারণে এই মিলিশিয়া গোষ্ঠীর উপরে ইসলামাবাদ যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানান, আফগানিস্তান থেকে সামরিক জোট ন্যাটোর সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্ব পালন করবে তুরস্ক। এক কনফারেন্স কলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত সোমবার নিজেদের মধ্যকার প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনাকে প্রত্যাহার করার জন্য ১১ সেপ্টেম্বরের আগে তুরস্কের মিশন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে বলে সম্মত হয়েছেন।তিনি বলেন, এ সময় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইঙ্গিত করেন যে, এক্ষেত্রে সমর্থন প্রয়োজন হতে পারে। তখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিশ্রুতি দেন যে সমর্থন আসবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিশ্রæতির পর এ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কাজ করতে নিজেদের দলকে নির্দেশ দেন তারা।

গত সোমবার ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠকের পর বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এরদোগান। তিনি বলেন, ন্যাটো বাহিনী প্রত্যহারের পর আফগানিস্তানে তুর্কি মিশনে পাকিস্তান ও হাঙ্গেরির সম্পৃক্ততা চায় তুরস্ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তুর্কি কর্মকর্তা বলেন, তুরস্ককে যদি আফগানিস্তানে থাকতে হয় তাহলে তারা কীসের ভিত্তিতে সেখানে থাকবে? ন্যাটো জোটের অধীনে কিংবা দ্বিপক্ষীয় শর্তে? যদি এটি ন্যাটোর পৃষ্ঠপোষকতায় হয় তাহলে তারা কার কর্তৃত্বে সেখানে থাকবে? ওই কর্মকর্তা বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানে তুরস্কের উপস্থিতি দেখতে চায়। তারা কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চায়। তিনি জানান, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সম্ভাব্য সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। ওয়াশিংটন কিছু বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা এবং ভূমধ্যসাগরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান নিয়ে বিরোধের পর থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্কে কিছুটা ফাটল দেখা দিয়েছে। এখন কাবুল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পেলে পশ্চিমাদের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, তারা তুরস্কের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু এই কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনেক কিছু চাইছে আঙ্কারা।

এদিকে কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনা করতে তুরস্ক যে প্রস্তাব দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র সুহেল শাহীন বলেছেন, ২০২০ সালের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে তুরস্কের উচিত নিজেদের সেনাদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা। রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তালেবানের মতামত জানতে চাইলে দোহাভিত্তিক এক মুখপাত্র জানান, ২০ বছর ধরে তুরস্ক ন্যাটোর অংশ ছিল। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী তুর্কি সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। তালেবান মুখপাত্র আরও বলেন, তুরস্ক একটি মুসলিম দেশ। আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতে যখন আমরা নতুন ইসলামি সরকার গঠন করবো তখন তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ভালো সম্পর্ক প্রত্যাশা করি। তালেবানের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার ‘কোনও আশা’ রাখা উচিত নয়। দূতাবাস ও বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আফগানদেরই দায়িত্ব। সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
SA S Nadim ১৯ জুন, ২০২১, ২:০২ এএম says : 0
এরদোয়ান আফগানিস্তান কে আর্মেনিয়া ভাবছে
Total Reply(0)
Mohammad Abdul Majed ১৯ জুন, ২০২১, ২:০২ এএম says : 0
সব ফ্রন্টে খেলতে নাই।যদি তা আফগান হয়।তুর্কীদের মধ্যপ্রাচ্য সহ অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোর উপর নজর দিক।এতে তুরস্কের জনপ্রিয়তা বাড়বে।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ আসআদ হাসান ১৯ জুন, ২০২১, ২:০২ এএম says : 0
এইটা ঠিক হবে না।
Total Reply(0)
Rabiul Hasan Rana ১৯ জুন, ২০২১, ২:০৩ এএম says : 0
এবার কৌশলে তুরস্ককে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে আমেরিকা | তালেবান ,তুর্কী সংঘাত সময়ের ব্যাপার মাত্র |
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৯ জুন, ২০২১, ২:০৪ এএম says : 0
তুরস্ককে দিলে সবার জন্যই ভালো হবে। তবে তালেবানের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন