শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিখোঁজের ৮ দিনের মাথায় ফিরলেন আবু ত্ব-হা

ব্যক্তিগত কারণে চারজন আত্মগোপনে ছিলেন : রংপুর পুলিশ যেভাবে ফিরলেন আবু ত্ব-হা ত্ব-হাও নীরব হয়ে যান কি না, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন : আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিনের মাথায় তরুণ ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান ফিরে এসেছেন তিন সঙ্গীসহ। তাদের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সারা দেশেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ত্ব-হাকে ফিরে পেতে তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভক্তরা বিভিন্ন পোস্ট দেন। যেখানে বারবারই তাকে ফিরে পেতে দাবি জানানো হচ্ছিল। তবে পুলিশ বলছেন, নিখোঁজ নয়, ব্যক্তিগত কিছু কারণে আবু ত্ব-হা এবং তার সঙ্গীরা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। তবে আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের অনুরোধে এখনই তাদের আত্মগোপনের সেই কারণ পুলিশ প্রকাশ করেনি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের ডিসি আবু মারুফ হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। অন্যদিকে আবু ত্ব-হা ফিরে আসায় অত্যন্ত খুশি হয়েছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সারোয়ার হোসেন। নিখোঁজ থেকে ফিরে আসা অন্যদের মতো আবু ত্ব-হা নীরব হয়ে যান কি না, সে বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

তার ভাই তারেক সাংবাদিকদের বলেন, ত্ব-হা শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বাড়ি ফিরে পানি ছাড়া কিছু খাওয়ারও সুযোগ পাননি।
গতকাল শুক্রবার ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আবু ত্ব-হার ফিরে আসার বিষয়টি তার স্ত্রী আমাকে নিশ্চিত করেছেন। চারটি জীবন ফিরে এসেছে। আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আবু ত্ব-হার ভাগ্য ভালো যে, অন্য নিখোঁজদের মতো তার অবস্থা হয়নি।

গতকাল রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশনের ডিসি আবু মারুফ হাসান সাংবাদিকদের আরো বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছি, ব্যক্তিগত কিছু কারণে তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। যেহেতু ব্যক্তিগত কারণ, তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেটি প্রকাশ করছি না। তবে ত্ব-হা আমাদের জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ ঘটেনি। তারপরও আমরা সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেব। ঘটনার দিন, অর্থাৎ তথাকথিত নিখোঁজ হওয়ার দিন আবু ত্ব-হা গাবতলী থেকে গাইবান্ধা চলে যান। সেখানেই এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। শুক্রবার তিনি রংপুরে আবহাওয়া অফিস মাস্টারপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে আসেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। তিনি আমাদের হেফাজতেই আছেন।

তিনি আরো বলেন, গত ১০ জুন থেকে আবু ত্ব-হা, তার দুই সঙ্গী আব্দুল মুহিত ও মোহাম্মদ ফিরোজ এবং গাড়িচালক আমির উদ্দিনের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানিয়েছিল তাদের পরিবার। শুক্রবার জানা যায়, ত্ব-হা তার রংপুরের বাড়িতে ফিরেছেন। এরপর তাকে প্রথমে রংপুর কোতোয়ালি থানা ও পরে রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

উপকমিশনার ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি শ্বশুরবাড়িতে আছেন জানার পর আমরা তাকে নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার সঙ্গী আমির উদ্দিনের সন্ধান আমরা পেয়েছি, তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আরেক সঙ্গী আব্দুল মুহিত, তার বাড়ি মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট এলাকায়। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। চতুর্থ যে ব্যক্তি মোহাম্মদ ফিরোজ, তার বাড়ি বগুড়ায়। সেখানেও সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাকেও সংশ্লিষ্ট থানা নিয়ে আসবে। সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা জানিয়ে উপকমিশনার বলেন, আমাদের যে আইনি প্রক্রিয়া, আমরা সেটি অনুসরণ করব। নিয়ম অনুযায়ী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে তারা যে বক্তব্য বা জবানবন্দি দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যেভাবে ফিরলেন ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা : আট দিন নিখোঁজ থাকার পর আবু ত্ব-হা শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় রংপুর নগরীর চার তলা মোড় মাস্টারপাড়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে ফেরেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জুমার নামাজের সময় আবু ত্ব-হা আদনান একাই শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময় তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। শ্বশুর বাড়িতে এসে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই তিনি কথা বলেন। এছাড়াও এলাকাবাসীর সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবেই তিনি কথাবার্তা বলছিলেন। তবে এই আট দিনে তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন এসব বিষয়ে তিনি এখনো কিছু বলেননি স্বজনদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এলাকাবাসী বলেন, নামাজের সময় আমি হঠাৎ দেখি আদনান তার শ্বশুর বাড়ির দিকে আসছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন? আপনাকে নিয়ে সারা দেশে হইচই পড়ে গেছে। তখন তিনি ঠোঁটে আঙুল ইশারা করে চুপ থাকতে বলেন। পরে কথা হবে জানিয়ে তিনি বাসায় ঢুকে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আবু ত্ব-হা আদনান জুমার নামাজের সময় একাই শ্বশুর বাড়িতে ফিরে আসেন। এ সময় এলাকাবাসী তার কাছে জানতে চায় এতদিন কোথায় ছিলেন, কেন ছিলেন বা কারা এসব করল, কোথা থেকে ফিরে এলেন। এমন প্রশ্ন করলেও তার কোনো উত্তর দেননি আদনান। এদিকে বিকেল তিনটার দিকে মেট্টোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশ আদনানকে হেফাজতে নেয়। মেট্টোপলিটন কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক এরশাদ আলী ও মজনু মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এসে আদনানকে নিয়ে যান। বর্তমানে তাকে মেট্টোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।

তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সারোয়ার হোসেন বলেন, আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজ হওয়ার পর যারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে সাংবাদিক ভাইদের বিশেষ ধন্যবাদ। সাংবাদিকরা নিখোঁজের পরিবারের আকুতি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। সবাই এক হয়ে প্রতিবাদ জানালে যে ফল পাওয়া যায়, তা প্রমাণিত হয়েছে। সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানালে, ঝাঁপিয়ে পড়লে কোনো অন্যায় হতে পারে না।

ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান চাইলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাবে। তবে আমি উদ্বিগ্ন। নিখোঁজ থেকে ফিরে এসে অন্যরা যেভাবে নীরব হয়ে যান, ত্ব-হার অবস্থা এরকম হয় কি না। আমার মনে হয় আবু ত্ব-হার অবস্থাও তাদের মতোই হবে। হয়তো তার অবস্থা দেখে মনে হবে, তিনি নিজেই লুকিয়ে ছিলেন। গত ১০ জুন রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন আবু ত্ব-হা ও তার তিন সঙ্গী। সর্বশেষ রাত দুইটা ৩৬ মিনিটে যখন আবু ত্ব-হার সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তখন তিনি ঢাকার গাবতলীতে ছিলেন। এরপর থেকে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর এ ৮দিন নিখোঁজ ছিলেন তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Muhammad Nazrul Islam ১৯ জুন, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 0
গাড়ির ও মন আছে। সেও অভিমান করতে পারে। তাই হয়ত পাশের ফ্লাটের BMW এর সাথে রাগ করে গাড়িটিও আত্মগোপনে চলে গেছে। সবাই আত্মগোপন থেকে ফিরে আসলেও এখনো গাড়িটি নিখোঁজ....
Total Reply(0)
জা চৌধুরী ১৯ জুন, ২০২১, ১:৪৭ এএম says : 0
সবই অবিশ্বাস্য/সবই সম্ভব, এটার নাম বাংলাদেশ !
Total Reply(0)
Abdul Wahid ১৯ জুন, ২০২১, ১:৪৯ এএম says : 0
আবু তোহা আদনান যদি নিজ মুখে স্বীকারোক্তিও দেয়, তবুও বুঝবেন এটি মিথ্যা, এটাই বাস্তবতা! প্রশাসন জনগণের সাথে একটি খেলা খেলতেছে, আগামিতে যেন কেউই গুম হওয়া ব্যক্তির পাশে না দাড়ায়, আদনান ভাইকে দিয়ে সম্ভবত সেই রকম কিছু করাবে! অর্থাৎ উনাকে দিয়েই বলা বে যে, তিনি ব্যক্তিগত কারণে লুকিয়ে ছিলেন।
Total Reply(0)
আদিব আহমদ ১৯ জুন, ২০২১, ১:৪৯ এএম says : 0
· প্রায় এক যুগ ধরে জনগনকে এভাবে গলা চেপে ধরে আছে উগান্ডা সরকার। একটু শব্দ উচ্চারন করলেই বিরোধীদলীয় বানিয়ে কখনো টর্চার,কখনো রড দিয়ে কখনো জেলে পুরে দিয়ে জীবনের তেরোটা বাজিয়ে দেয়। অবশ্যই সে হিসেবে আমরা বাংলাদেশীরা ভালো আছি, জয় বাংলা।
Total Reply(0)
Jakariya Hossain Likhon ১৯ জুন, ২০২১, ১:৫০ এএম says : 0
কত সুন্দর একটা নাটক হতে পারতো! কিন্তু স্কিপটা অতি দূর্বল তাই মার্কেট এ তেমন চলবেনা। একই স্কিপ এর নাটক আর জনগণ খায় না...
Total Reply(0)
Masud Miah ১৯ জুন, ২০২১, ১:৫০ এএম says : 1
ব্যক্তিগত কারণে আবু ত্ব-হা লুকিয়ে ছিলেন। তার সহোযোগীরাও একই সময় ব্যক্তিগত কারণেই লুকিয়ে ছিলেন প্রশাসনের ভাষ্যে তা হলে রাষ্ট্রকে বিব্রত করার দায় তাদের বিচার কেন সরকার করবেনা!!
Total Reply(0)
Nahid Al Saad ১৯ জুন, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
আজ পর্যন্ত গুম থেকে ফিরে এসে কেউ কি কখনও মুখ খুলেছেন? গুম ফেরতের গল্পের স্ক্রিপ্ট জনগণ কখনই গুরুত্ব দেয়নি। বরং জীবন ফিরে পাওয়াকেই সৌভাগ্য মনে করেছে। তবে এবার স্যোসাল মিডিয়া দূর্দান্ত বুদ্ধিভিত্তিক এক লড়াই করেছে। গুমতন্ত্রকে বাধ্য করেছে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে ফেরত দিতে। এটাই সবচাইতে বড় স্বস্তি। সময়ের বড় বিজয়। গল্পের স্ক্রিপ্ট যেভাবেই তৈরি করা হোক না কেন। দর্শক শ্রোতারাই মূল্যায়ন করবে, তারা স্ক্রিপ্ট বিশ্বাস করবে কি না। সব ক্রসফায়ারের গল্পের স্ক্রিপ্ট যেমন একই। গুম ফেরতের স্ক্রিপ্টও একই। গল্পকাররা দেশের মানুষকে কি মনে করে?
Total Reply(1)
Dadhack ১৯ জুন, ২০২১, ১২:৩৩ পিএম says : 0
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যখন বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গেল তখন একজন তরুণ আইটি স্পেশালিস্ট বলেছিল যে এটা ভিতরের কাজ তখন তাকে গুম করা হলো যখন তাকে গুম থেকে ফেরত দেওয়া হল তখন সে একদম নিশ্চুপ থেকে গেল কারণ হলো যদি সে বলতো যে আমাকে গুম করা হয়েছে টর্চার করা হয়েছে তাহলে তাহলে তাকে হয়তো অবার গুম করে মেরে ফেলা হতো তার মানে কি ভিতরের লোকরাই তাহলে এই বিলিয়ন ডলার পাওয়া করে দিয়েছে
S M Rajib Mahbub ১৯ জুন, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
শেষ জামানায় ইমান ধরে রাখা এমন কঠিন হবে যে হাতে জলন্ত কয়লা ধরে রাখার মতন- ঊনার মুখ থেকেই শুনে ছিলাম। প্রমান পেয়ে গেলাম।
Total Reply(0)
Shayek Ahmod ১৯ জুন, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
"আল্লাহ যাকে খুশি সম্মান দান করেন যাকে খুশি অপদস্ত করেন" জনাব ত্বহা কতটা ভাগ্যবান এটা প্রতিটি মানুষ অতীত বর্তমান অভিজ্ঞতায় অনুভব করতে পারে।তাঁকে ফিরে পাবার বিশাল প্রাপ্তিতে নাটকীয়, সত্য, সংশয় গায়ে লাগা সামান্য অপবাদ অতি তুচ্ছ অপ্রাসঙ্গিক বলেই মনে করি।
Total Reply(0)
Shamsul Haque ১৯ জুন, ২০২১, ৬:৩৩ পিএম says : 0
আল্লাহ তায়ালা সবাই ইমান দান করেন এবং সবাই হেফাজত করেন। আমীন ছুম্মা আমীন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন