শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুনির হাতে এবার বাবা-মা-বোন খুন

পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন ঘাতক মেহজাবিন : পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর হাইস্কুল রোডে একটি বাসা থেকে বাবা, মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই পরিবারের শিশুসহ আরও দুজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মেহজাবিন আক্তার মুন নামে আরেক মেয়েকে আটক করা হয়েছে। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ কেরানিগঞ্জে মেহজাবিনের প্রথম বিয়ে হয়েছিল। সেই স্বামীকে খুনে দায়ে তার জেল হয়েছিল। পাঁচ বছর জেল খেটে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন তিনি। তবে এবার বাবা-মা-বোনকে হত্যা করে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কিছু ক্লু পেয়েছেন। যেসব ক্লু নিয়ে কাজ করলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

নিহতরা হলেন- মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম (৪৫) ও মেয়ে জান্নাতুল (২১)। হাসপাতালে যে দুজনকে ভর্তি করা হয়েছে, তারা হলেন- মাসুদ রানার আরেক মেয়ে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তাদের পাঁচ বছরের মেয়ে মার্জান তাবাসসুম তৃপ্তি। ঘাতকের চাচাতো বোন শিলা বলেন, মেহজাবিন তার পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। সে তার আগের ঘরের স্বামীকেও খুন করেছিল। সেই মামলায় মেহজাবিনসহ তার নিহত বাবা-মা ও বোনের জেল হয়েছিল। পাঁচ বছর জেল খেটে তারা জামিনে ছাড়া পায়। তিনি আরও বলেন, গত দুদিন আগে স্বামী সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবিন। এসেই তার ছোট বোনের জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে বলে বাবা-মাকে অভিযোগ করে। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়। তার জেরেই হয়তো সে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

এছাড়া প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, জায়গা সম্পত্তি নিয়েও পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ছিল মেহজাবিনের। সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য বাবা-মাকে অনেক চাপ দিত। এ নিয়ে এর আগে বৈঠক শালিস হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান মেহজাবিন। সবাই অচেতন হয়ে পড়লে মা-বাবা ও বোনকে রশি দিয়ে বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। স্বামী ও শিশু সন্তানকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। তবে তারা অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।

পুলিশ আরও জানায়, মেহজাবিন তার বাবা-মা ও বোনকে হত্যা করে ৯৯৯-এ কল করে। এ সময় তিনি বলেন, আপনার দ্রুত না আসলে আমার স্বামী ও মেয়েকে খুন করে ফেলব। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। অন্য দুজনকে অচেতন অবস্থায় ঢামেকে পাঠায়। পুলিশের ধারণা, শুক্রবার রাতে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে তিনজনকে গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা লাশগুলো হাত পা বাঁধা অবস্থায় পেয়েছি। গত শুক্রবার রাতে তাদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছে তাদেরই আরেক মেয়ে। সেই মেয়েকে আটক করা হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল বলেন, গত শুক্রবার রাতে তিনি স্ত্রী ও সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে যাওয়ার পরে তার স্ত্রী মেহজাবিন সবাইকে চা দেন। চা খাওয়ার পরে তার আর কিছু মনে নেই। ওই চা তার শ্বশুর শাশুড়িও খেয়েছেন। শফিকুল আরও বলেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির কারও সম্পর্ক ভালো না। প্রায়ই তাদের মধ্যে কলহ চলতো।

কদমতলী থানার এএসআই আলম জানান, আমরা অচেতন অবস্থায় শফিকুল ইসলামকে নিয়ে আসি। তাকে স্টমাক ওয়াশ (পাকস্থলী পরিষ্কার) করে মিডফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কদমতলী থানার এসআই কবীর হোসেন বলেন, শিশু তৃপ্তিকে স্টমাক ওয়াশ (পাকস্থলী পরিষ্কার) করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশি পাহারায় তার চিকিৎসা চলছে।

ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, কদমতলীর ঘটনায় দুজনকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে শিশু তৃপ্তিকে এখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এবং তার বাবা শফিকুল ইসলামকে মিডফোর্ডে পাঠানো হয়।

যেভাবে মা-বাবা ও বোনকে হত্যা: কেন এই হত্যাকাণ্ড। নেপথ্যের কারণ হিসেবে মাহজাবিন পুলিশের কাছে জানিয়েছে, তার বাবা মাসুদ রানা ১২ বছর ধরে বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। কিন্তু ওই সময় তার মা মৌসুমী তাকে ও তার ছোট বোনকে দিয়ে খারাপ কাজ করাতো। এরই মধ্যে মাহজাবিনের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু তার মায়ের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। ছোট বোনকে দিয়েও চালাচ্ছিল সেই কাজ। বাধ্য হয়ে মাহজাবিন তার ছোট বোনকে তার বাসায় নিয়ে যায়। সম্প্রতি তার মা ছোট বোনকে নিয়ে আসেন এবং আবারও একই কাজ করতে বাধ্য করছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে মাহজাবিন তার মাকে নিষেধ করেন এবং সেটি বন্ধেরও অনুরোধ করেন। কিন্তু মা শুনছিল না।

তবে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত মাসুদ রানা কয়েক বছর ধরে সৌউদীতে ছিলেন। বছর খানেক হলো দেশে ফিরছেন। অন্যদিকে ৬ বছর আগে মেহজাবিন মুন ও শফিকুল ইসলাম-এর বিয়ে হয়। এরপর পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ায় মেহজাবিন-এর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু বছর খানেক হলো মেহজাবিনকে মেনে নেয় পরিবার। এতেই বাধে বিপত্তি। নিহত মৌসুমী ইসলামের বড় বোন জাহানারা বলেন, মেহজাবিনের ছোট বোন মোহিনীর সঙ্গে স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এজন্য তাদের পরিবারে ঝগড়া হতো। তবে গত শুক্রবার কী ঘটেছিল, তা আমি জানি না। তবে আমাদের ধারণা, পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই এই ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য শফিকুলকেই দায়ী করেন ওই পরিবারের স্বজনরা।

মাহজাবিনের বরাত দিয়ে পুলিশ জনায়, গত শুক্রবার রাতে সে স্বামী ও তার সন্তানকে নিয়ে বাবা বাড়ীতে আসে। এরপর রাতে খাবারের সঙ্গে বাসার বৃদ্ধা দাদী ছাড়া সকলকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। এক পর্যায় তারা অচেতন হয়ে পড়লে সে বাবা, মা ও বোনের হাত বা বেঁধে তাদের হত্যা করে। এরপর সকালে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে। কল করে মাহজাবিন বলেন, তিনজনকে মেরে ফেলছি। আরও দু‘জন আছে। তারা জীবিত। তাদের জীবিত নিতে চাইলে দ্রুত চলে আসেন। এরপর মাহজাবিন বাসার ঠিকানাসহ বলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। বাকী দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থাায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইফতেখার আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতের কোনো এক সময় চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাদেরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মিলেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Bongo... ২০ জুন, ২০২১, ১২:১৬ এএম says : 0
After all She is a woman, no punishment will reach her this time as well.
Total Reply(0)
Sanjida Sanjo ২০ জুন, ২০২১, ৩:৫৫ এএম says : 0
Oo meyer fasi howa ocit
Total Reply(0)
Renu Prodhan ২০ জুন, ২০২১, ৩:৫৭ এএম says : 0
কি বলবো বলার ভাষা নেই ।
Total Reply(0)
Md Rumanur Rahman ২০ জুন, ২০২১, ৩:৫৮ এএম says : 0
ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন..
Total Reply(0)
নুর নাহার আক্তার নিহার ২০ জুন, ২০২১, ৩:৫৯ এএম says : 0
কঠিন শাস্তি না হওয়ার ফলে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে।
Total Reply(0)
Peyar Ali Bhai ২০ জুন, ২০২১, ৪:০১ এএম says : 0
সুস্থ্য মস্তিষ্কের মানুষ এমনটা করতে পারে না৷ দেখতে সুস্থ্য অথচ মানসিক ব্যাধিতে ভুগছে৷ এমন অসংখ্য মানসিক রোগী সমাজে, পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে! এসব মানসিক রোগীরা যেকোন সময় এমন বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে৷ তাই কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন৷ দেশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বাড়ানো প্রয়োজন৷ অনেক মানুষ তো জানেই না দুঃশ্চিন্তা, হতাশা এসবের চিকিৎসা রয়েছে৷ এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে৷৷
Total Reply(1)
Mafia League ২০ জুন, ২০২১, ১০:৫৯ এএম says : 0
Agree
Md Al Amin Siddiki ২০ জুন, ২০২১, ৪:০১ এএম says : 0
কত বড় পাপিষ্ঠ হলে এইধরনের কাজ করতে পারে।এই জন্য শৈশব থেকেই কুরআন—সুন্নাহ আলোকে শিশুকে গড়ে তোলা উচিত।নৈতিকতা শেখানো উচিত।
Total Reply(1)
Mafia League ২০ জুন, ২০২১, ১১:০০ এএম says : 0
Agree
Dadhack ২০ জুন, ২০২১, ১২:৫১ পিএম says : 0
আল্লাহর বিধান দিয়ে দেশ চলে ক্লাস ওয়ান থেকে মাস্টার ডিগ্রী পর্যন্ত কোরআন-হাদিসের শিক্ষা দেওয়া হতো তাহলে মানুষের নীতি নৈতিকতা ভালো হতো এবং তারা কখনো যিনা-ব্যভিচার খুন গুম হত্যা লুট মাদক এসবের মধ্য যেত না...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন