শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাজেটে অগ্রাধিকারের বিষয় কম গুরুত্ব পেয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাজেট আলোচনায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে মূল অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তবে সংক্রামণ ঠেকাতে বাজেটে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং স্বাস্থ্যবিধি উপখাত যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ার বিষয়টির বিরুদ্ধে লড়াই এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে বাধাগ্রস্থ করবে।

ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ও এমএইচএম নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বক্তারা এ কথা বলেন। এ সময় এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে স্বাস্থ্যবিধি উপখাতে যথাযথ গুরুত্বারোপসহ গ্রাম ও শহরের মধ্যে ওয়াশ খাতে বিনিয়োগ ও বরাদ্দের বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত বরাদ্দ দেয়ার উপর অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলে মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি ৬ অর্জনের গতিকে আরো ত্বরান্বিত করার জন্য অসমতা দূর করে জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান বক্তারা।

আলোচনায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ওয়াশ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভৌগলিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। তার পরেও গ্রামাঞ্চল, চর, পার্বত্য অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকার তুলনায় শহর ও মহানগরগুলোতে পূর্ববর্তী বছরগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হলেও সঠিক বরাদ্দ এখনও অবহেলিত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ও ব্যয়ের বিশ্লেষনে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর বাজেটে ওয়াশ খাতে আর্থিক বরাদ্দের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও আগামী অর্থবছরে তা কিছুটা কমেছে। বরাদ্দকৃত ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা কমিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। সারাবছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরেও স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) উপখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তাবিত ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের একটা বড় অংশই শহরাঞ্চলের দিকে ঝুঁকছে যা মূলত প্রধান শহরগুলোতে ওয়াসার বরাদ্দর কারণে হয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চল ও দেশের দুর্গম এলাকাগুলো বরাদ্দের ক্ষেত্রে যথেষ্টই উপেক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার জেলাগুলোতে উল্লেখযোগ্য উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে ভাইরাসের সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি এবং ওয়াশ সোবর সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ প্রয়োজন।

আরো বলা হয়, ভৌগলিক অবস্থান বিচারে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসমতা। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে, ৪টি ওয়াসা এবং ১১ টি সিটি কর্পোরেশনে ওয়াশ খাতে বেশিরভাগ বরাদ্দের ধারা অব্যাহত রয়েছে। গ্রামাঞ্চল, চর, দুর্গম এলাকাগুলোতে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে শহর ও মহানগরগুলোতে তুলনামূলকভাবে বরাদ্দের হার অনেক বেশি। শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের বরাদ্দ বিশ্লেষনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছর সময়কালে শহরে (৮০ শতাংশ-৮৩ শ তাংশ) ও গ্রামীণ অঞ্চলে (২০ শতাংশ -১৭ শতাংশ) বরাদ্দের হারের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর সরকারের ভ্যাট মওকুফ এর এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য এখনই প্রয়োজন একটি পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার। এতে করে সরকারি এ মহতী ঘোষণার ফলাফল কিশোরী এবং নারী উভয়ই পেতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিতভাবে কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত খাতগুলোকে একত্রিত করার জন্য বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে ওয়াশ খাতের স্বতন্ত্র্ উপখাতগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধিকে একটি আলাদা উপখাত হিসেবে চিহ্নিত ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে পৃথক উপ-বিভাগীয় লাইন-আইটেম হিসাবে হাইজিনকে আলাদা করতে হবে।

গ্রাম ও শহরের মধ্যে এবং বিভিন্ন নগরীরর মধ্যে বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে বিপুল বৈষম্য আছে তা দূর করতে ওয়াশ খাতের বরাদ্দের অগ্রাধিকার নির্ধারণে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। নিরাপদ পানি সম্পর্কিত পরিবেশ ও ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের জন্য নেয়া উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়, তবে দুর্যোগ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে, বিশেষত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এসব প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বন্যা প্রবণ ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ উপকূলীয় এলাকায় প্রকল্প বাড়াতে হবে। এবং ভালো নীতি থাকলেও বাস্তবায়নের ঘাটতির জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল মিলছে না। এ ক্ষেত্রে ওয়াশ খাতে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন