যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে শত শত বাংলাদেশী বন্দী অবস্থায় চরম মানবেতর দিন যাপন করছেন। স্বপ্নের ইউরোপের পথে পাড়ি জমাতে এসব বাংলাদেশী মূলত সাগর পাড়ি দেয়ার সময় দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকতে থাকতে অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দূতাবাসের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মাধ্যমে মাঝে মধ্যে অনেকে মুক্তির পর দেশে ফেরত আসছেন।
সম্প্রতি গাদামেস শহরের নিকটবর্তী একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশীদের সর্বশেষ অবস্থা সরেজমিন দেখতে যায় লিবিয়ার ত্রিপোলিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলরের (শ্রম) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় দূতাবাসের পক্ষ থেকে আটক বাংলাদেশীদের কাউন্সিলিং করা হয়।
গত রোববার দুপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) আসাদুজ্জামান কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, ৭০০ কিলোমিটার দূরের গাদামেস ডিটেনশন সেন্টারে আমরা গিয়েছিলাম। তাদের সাথে কথা বলে দেশে ফিরে যাওয়ার অফার দিলে তারা আমাদের প্রস্তাবে দেশে ফিরতে রাজি হয়েছে। ছয় মাস ধরে তারা সেখানে আছে।
আইওএমের সহযোগিতায় তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করব জানিয়ে তিনি বলেন, মূলত এসব বাংলাদেশী দুবাই হয়ে বেনগাজি আসে দালালদের মাধ্যমে। এরপর সেখান থেকে ত্রিপোলি হয়ে ১১০ কিলোমিটার দূরের সাগরঘাট দিয়ে ট্রলারে ইতালি পাড়ি দেয়ার আগেই দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা অবৈধ পথে নানাভাবে আসছে তাদের বিষয়ে দূতাবাসের তেমন কিছু করার থাকে না। পুরো লিবিয়াতে কতগুলো ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে এবং সেখানে কী পরিমাণ বাংলাদেশী আটক আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ দেশে তো ডিটেনশন ক্যাম্পের সংখ্যা অনেক। তবে সেখানে কী পরিমাণ বাংলাদেশী আছে সেটি বলা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিনিয়ত লোক বাড়ে ও কমে।
লিবিয়ার ত্রিপোলি দূতাবাস ও স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটি-সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার জীবনযাত্রা এখনো অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যেই রয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চল শহরটি এখনো হাফতার খলিফা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিসহ পশ্চিমাঞ্চল জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক লিবিয়ানদের নিয়ে গঠিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
তারা বলছেন, ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় বৈধভাবে বাংলাদেশী শ্রমিক আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঢাকা থেকে প্রতিনিয়ত বডি কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ভিজিট ভিসায় দুবাই, এরপর তিউনেশিয়া হয়ে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল বেনগাজি আসছে। কিছু দিন অবস্থান করার পর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ত্রিপোলি হয়ে স্বপ্নের ইউরোপের পথে পাড়ি জমাতে তাদেরকে সাগরপথে ট্রলারে তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু লোক যেতে পারলেও পথে অনেকে ধরা পড়ছে। এসব মানুষের শেষমেশ ঠাঁই হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে। আবার অনেকে মাফিয়া গ্রুপের হাতে আটক হয়।
সেখানেও তারা নির্যাতিত হয়। একপর্যায়ে তাদেরকে মুক্ত করাতে দেশ থেকে স্বজনদের মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে হয়। সর্বশেষ লিবিয়ার গ্যাংস্টার বাহিনীর হাতে মিশকাতে আটক হওয়ার পর একজন লিবিয়ানকে গুলি করে খুন করার ঘটনার জের ধরে ২৬ বাংলাদেশীসহ মোট ৩০ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। লিবিয়ার এই ঘটনা সারা বিশ্বে তোলপাড় হয়। তার পরও থামেনি অবৈধ পথে দেশ থেকে মানবপাচারের ঘটনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন