শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

মহিলা কাউন্সিলরদের ক্ষমতা বাড়াতে গেজেট সংশোধন করতে হবে : ডিএনসিসি মেয়র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২১, ৭:০০ পিএম | আপডেট : ৪:০২ পিএম, ২৩ জুন, ২০২১

সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের আইনগত ক্ষমতা বাড়াতে গেজেট সংশোধন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত “শক্তিশালী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন:নারী কাউন্সিলরদের ভূমিকা” বিষয়ক অনলাইন সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, কাউন্সিলরদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্রান্ত গেজেটে ওয়ারিশান, চারিত্রিক, নাগরিকত্ব সনদসহ অন্যান্য সনদ প্রদান করতে পারে না। এটা ভালো দেখায় না। এ বিষয়টি সুরাহা করতে এ সংক্রান্ত গেজেট সংশোধন করতে হবে। আমি দেশের একমাত্র মেয়র যে, মহিলা কাউন্সিলরদের আইনগত ক্ষমতার সমতার জন্য দাবি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, আমি একজন নারীর গর্ভ থেকে জন্মেছি। আমার মায়ের জাতির সদস্যরা সমাজে অসমতার শিকার হোক এটা আমি কোনভাবেই চাই না। এজন্য আমি ডিএনসিসির করোনাকালীন বরাদ্দের সময় সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সমভাবে বরাদ্দ দিয়েছি। কিন্তু‘, সবক্ষেত্রে আমি এটা করতে পারিনা। কেননা, তাদের পদটি ‘সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর।’

নারীদের ক্ষমতায়নের ব্যক্তিগত অবস্থান সম্পর্কে মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসিতে অনেক নারী পরি”ছন্নতা কর্মি রয়েছে। সমাজের অসহায় পরিচ্ছন্নতাকর্মিদের জন্য ডিএনসিসিতে পেনশনভাতা চালু করা হয়েছে। এ সুবিধা আওতা অনেক নারীর স্বাভাবিক জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এসময় দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের ৮০ ভাগ নারীর অবদানের কথা স্বীকার করেন। একজন গার্মেন্ট শিল্প উদ্যোক্ততা, বিজিএমইএ নেতৃত্বে থাকার কারণে নারীদের বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আমাদের নারীরা এখনো সবাই কথা বলতে পারে না। নারীদের স্বাধীনভাবে কথাবলার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কেননা, নারীদের পেছনে ফেলে রেখে সামনে এগুনো কোনভাবেই সম্ভব না। এ প্রসঙ্গে আমি একটি ঘটনা শেয়ার করতে চাইÑআমার নির্বাচনের সময় মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় গণসংযোগ চলাকালীন সময়ে পাশের বহুতলা ভবন থেকে একটি চিরকুট আমার সামনে পড়ে। সেটা তুলে দেখি একজন গৃহকর্মীর আকুতি। তিনি যেখানে তার মালিক তাকে আটকে রেখেছিলেন। এমন হাজারো ঘটনা রয়েছে আমাদের সমাজে নারীদের। এজন্য নারীদের কথা বলার অধিকার নিশ্চিতে সবাইকে সচেষ্টভাবে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (নগর উন্নয়ন-২ অধিশাখা) সায়লা ফারজানা বলেন, সরকারকে নানা ধরণের টার্গেট বাস্তবায়নে কাজ করতে হয়, তার মধ্যে নারীর উন্নয়নের জন্য নানামুখী কাজ করতে হয়। নারী কাউন্সিলরদের ভূমিকা বৃদ্ধি করতে হলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে, তাদের পেছনে রেখে এই টার্গেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়, সংবিধানে, আইনে সামাজিক উন্নয়নে নারীদের অবদান রাখার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে , কিন্তু বাস্তবে তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে গ্যাপ রয়েছে যেমন: ক্যাপাসিটির গ্যাপ , তথ্যগত গ্যাপ আছে। নির্বাচনী ইশতেহার থাকা দায়িত্ব গুলোতে গ্যাপ চিহ্নিত করে বাস্তবায়নে সকলকে কাজ করতে হবে। নারী কাউন্সিলরদের নিজ অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে, গুণগত পরিবর্তনে গুরুত্ব দিতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারীদের ও দূর করতে হবে, নিজের গ্যাপ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় জায়গায় যেতে হবে। ওয়ার্কিং গ্রুপ করে পুরো আইনটির সংশোধনের জন্য কাজ করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, সমতাপূর্ণ, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটা অনুকূল সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা জানি গণতন্ত্র, সুশাসন, উন্নয়ন নারীর ক্ষমতায়ন এগুলো অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত এবং গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় সরকার এখানে অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করে। ঢাকা মহানগর একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নগর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ যা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার। এই নগরীতে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। এই নাগরিকদের সকল পরিষেবা দেয়ার দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সাথে সঙ্গতি রেখে তাদের প্রাপ্য সকল সুবিধা দেয়ার দায়িত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মেয়র এবং কাউন্সিলর আছেন তাদের, তাদের এই দায়িত্ব যদি তারা পালন করতে চান তাহলে তাদের ব্যক্তিগত সদিচ্ছা, রাজনৈতিক সদিচ্ছ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং দূরদৃষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজন। যেকোন স্থানীয় সরকার যদি সঠিকভাবে কাজ করতে চায় তাকে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সমন্বয় করে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে নিজস্ব পরিকল্পনায় অবশ্যই স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে, সকল নাগরিককে প্রাপ্য পরিষেবা দিতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত মেয়রদের ভূমিকা যেমন রয়েছে, পাশাপাশি নির্বাচিত নারী-পুরুষ সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের এই পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা বাস্তবায়ন করতে কিভাবে সিটি কর্পোরেশনকে শক্তিশালী করা যায়, ঢাকা নগরের উন্নয়নে কিভাবে কাজ করা যায়, নারী কাউন্সিলরদের ক্ষমতায়নে কিভাবে কাজ করা যায় সেবিষয়ে তথ্য আজকের আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে এমন প্রত্যাশা তিনি ব্যক্ত করেন।

এ ভার্চুয়াল সভার সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ডা. ফাওজিয়া মোসলেম। এছাড়া অনলাইন সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন