শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধামাচাপা দুদকের অনুসন্ধান

অতিরিক্ত সরকারি পৌনে সাত কোটি টাকা উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। তা সত্ত্বেও ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রকল্পের পৌনে ৭ কোটি টাকা। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ঢাকা জোনে ঘটেছে এই ঘটনা। লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করলেও অজ্ঞাতকারণে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে সেটি। যদিও সংস্থাটির সচিব ড. মুহা: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার দাবি করেছেন, কোনো অনুসন্ধানই ধামাচাপা দিয়ে রাখার সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত অক্টোবরে একটি অভিযোগ হাতে পায় দুদক। ‘অভিযোগ বাছাই কমিটি’র প্রাথমিক বাছাইপর্ব চুকিয়ে বিষয়টি ‘অনুসন্ধান-যোগ্য’ মর্মে অভিমত পায় অভিযোগটি। এ প্রেক্ষিতে সংস্থার অনুসন্ধান-তদন্ত শাখা-১ এর অধীন একজন সহকারী পরিচালককে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে থেমে যায় অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তথ্য-প্রযুুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ঢাকা জোনের জন্য ৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় (সিএও) থেকে বিল বাবদ অর্থ পরিশোধ করা হয় ৪৬ কোটি টাকার। অতিরিক্ত ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয় বরাদ্দের অতিরিক্ত। এ অর্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আক্তারুজ্জামান, কয়েকজন ঠিকাদার সিএও’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে এ অর্থ ভাগ-ভাটোয়ারা হয়।
এদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যাদেশ সম্পর্কে সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত কাজ সঠিক সময় সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। একই ঠিকাদারকে বার বার কার্যাদেশ দেয়া যাবে না। আগের কাজ সময় মতো সম্পন্ন করতে পারেনি-এমন ঠিকাদারকে আর কার্যাদেশ দেয়া যাবে না। সরকারি এই নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করে পূর্বের কাজ সম্পন্ন না করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার বার কার্যাদেশ দিয়েছে ঢাকা জোন। অভিযোগটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রকল্পের আওতায় ঢাকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পছন্দসই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী বার বার কাজ পরিসমাপ্তির সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে ঢাকা কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, সরকারি তিতুমীর কলেজের বিজ্ঞান ভবন, একাডেমিক ভবন, সিদ্বেশ্বরী কলেজের একাডেমিক ভবন, শের-ই-বাংলা স্কুল ও কলেজের হোস্টেল নির্মাণ কাজ দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে আছে অসমাপ্ত অবস্থায়। মিরপুর বাঙলা কলেজ, ধানমন্ডি মহিলা কলেজ, ভিকারুন্নিসা নূন কলেসহ ঢাকা জোনের অনেক উন্নয়ন কাজ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। কার্যাদেশ প্রদানেও ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আক্তারুজ্জামান অবলম্বন করছেন অভিনব কৌশল। একই প্রতিষ্ঠানকে বার বার কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে। টেন্ডারে অংশ নেয়া কোনো প্রতিষ্ঠানই নতুন কোনো কার্যাদেশ দেয়া হয় না। এর ফলে টেন্ডারে অংশ নেয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটছে। তারা টেন্ডারের সিকিউরিটি মানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এ সময় টেন্ডারে অংশ নেয়া ঠিকাদারদের কাছ থেকে এই মর্মে মুচলেকা নেয়া হয় যে, কার্যাদেশটি অন্য কেউ পেলেও এতে তাদের কোনো দাবি-দাওয়া থাকবে না।
অভিযোগ মতে, প্রায় চার বছর একই চেয়ারে রয়েছেন ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আক্তারুজ্জামান। এ সময়ে তিনি যোগসাজশের মাধ্যমে পছন্দসই ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। অবৈধ অর্থে চলতিবছর জানুয়ারিতে বিনা অনুমতিতে তিনি সপরিবারে ভ্রমণ করেছেন সিঙ্গাপুর। অভিযোগের বিষয়ে জানতে একেএম আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। প্রতিবারই ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন