বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিদ্যুতের দাম ১১৮ শতাংশ বৃদ্ধি

১১ বছরে ১০ বার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশে গত ১১ বছরে দশবার বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১১৮ শতাংশ এবং খুচরা দাম ৮৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া প্রতি বছর বিদ্যুৎ খাতে সাত থেকে আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়, যা দামের সঙ্গে যুক্ত হলে বিদ্যুতের প্রকৃত মূল্য আরো বেশি হবে।
গতকাল কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং ভোক্তাকণ্ঠ আয়োজিত জ্বালানি রূপান্তরে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। ভোক্তাকণ্ঠ সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান এবং ক্যাব সংগঠক সৈয়দ মিজানুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মনজুরুল আহসান।
লিখিত প্রবন্ধে মনজুরুল আহসান বলেন, পিডিবি ভেঙে দুটি কোম্পানি হওয়ায় জনবল বাবদ ব্যয় বেড়েছে। তাদের দেয়া তথ্য-উপাত্তে এ ব্যয়ের বিষয়গুলো দেখা যায়। কিন্তু অনিয়মের অনেক খবর আড়ালে থেকে যাচ্ছে। এগুলোর শেয়ার বিক্রি করে বেসরকারি মালিকানায় দেয়া হচ্ছে। এই কোম্পানিগুলোর অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে এই শেয়ারের অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা কেউ জানে না। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দেখানো হয় যে, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বরং তা কমানো যেতে পারে। অথচ বিদ্যুতের দাম গত ১১ বছরে ১০ দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। পিডিবি বা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমলাতন্ত্রের সম্পর্কে।
সাংবাদিক মনজুরুল বলেন, অনিয়ম-অসঙ্গতিতে কোম্পানির বোর্ড সদস্যদের দায় থাকে না। লাভ-লোকসানের দায় তারা নেন না। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি দেখান যে, একই ব্যক্তি সচিবালয়ে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আবার কোম্পানিতে এসে মূল্য নির্ধারণ করেন তখন নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বাধাগ্রস্ত হয়। আলোচনায় ক্যাবের উপদেষ্টা ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সঠিক দাম ও মানে পাওয়া আমাদের অধিকার। একই সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার দিকটিও সংবিধান নিশ্চিত করেছে। তিনি জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, আমাদের দেশের চেয়ে তাদের দেশে বিদ্যুতের মূল্য কম। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের উন্নয়নে রূপান্তরের বিষয়ে প্রশ্ন আসছে। রূপান্তর নিয়ে দেশে ১৭ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানিকে বশে আনতে সরকার দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম মূল্যহার নির্ধারণ করা হলেও তা কোম্পানিগুলো তোয়াক্কা করছে না। রেগুলেটরি কমিশনের দায়িত্ব ছিল ভোক্তা অধিকার রক্ষা করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা। এখন দেখা যাচ্ছে, বিনিয়োগের প্রফিট মার্জিন এত বেশি রাখা হয়েছে যে, এখানে বিনিয়োগের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দুর্নীতির জন্য প্রকৃত দামের চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা চায় জ্বালানি খাতে পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ কমুক এবং বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকুক। তিনি বলেন, গত ১১ বছরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বেড়েছে ১১৮ শতাংশ। এই পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রভাব ফেলেছে ভোক্তাপর্যায়ে। এখানে কুইক রেন্টালসহ বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত খরচ কেউ জানে না। সরকার বিদ্যুৎ খাতে একটি ইনডেমনিটি আইন করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, যে সম্পদের মালিক জনগণ সে সম্পদকে লুটেরা ও ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। কোম্পানিগুলোর বোর্ড সদস্যদের অনিয়মকে আমরা নিষ্ক্রিয় থেকে বৃদ্ধি করছি। নতুন সংযোগসহ বিদ্যুৎসংক্রান্ত সেবা পেতেও ভোক্তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্যাবের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি ক্যাবকে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে আহ্বান জানান।
দৈনিক বণিক বার্তার উপব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাংবাদিক মুসা মিয়া বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশে কত কম রাখা যায় তা নিয়ে ভোক্তাপর্যায় থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, তারা বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভিয়েতনামের কথাও উল্লেখ করে বাংলাদেশকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে গোলাম রহমান বলেন, আমাদের জ্বালানি খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। যতক্ষণ না সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ততক্ষণ আমাদের সোচ্চার খাকতে হবে। শুধু ক্যাবকে কথা বললে হবে না সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Ali Mohammad ২২ জুন, ২০২১, ৬:১৩ এএম says : 0
এটা কোন ব্যাপার না বাংলাদেশে।কারণ আমরাতো আগের মত গরিব না। মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ!
Total Reply(0)
রেফায়েতুল ইসলাম ফাহিম ২২ জুন, ২০২১, ৬:১৩ এএম says : 0
বাংলাদেশের মানুষ খাচ্ছেত, না খেলে একটা কথা ছিল। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে, ইনশাআল্লাহ বাংলার মানুষ সাদরে গ্রহন করবে।
Total Reply(0)
MD Ibrahim MD Ibrahim ২২ জুন, ২০২১, ৬:১৩ এএম says : 0
সাধারণ মানুষের পকেট ফাকা তো হচ্ছে দিরে দিরে এর মধ্যে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলি এভাবে দাম সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে পকেটে অবসিস্ট বলে আর কিছু ই থাকবে না সাধারণ মানুষের ভাগ্যে।
Total Reply(0)
Al Mamun ২২ জুন, ২০২১, ৬:১৩ এএম says : 0
বাংলাদেশের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত সেক্টর বিদ্যুৎ সেক্টর! এখনতো ডিজিটাল মেশিনে ডিজিটাল চুরি!
Total Reply(0)
M Mohitul Islam Roby ২২ জুন, ২০২১, ৬:১৪ এএম says : 0
যেখানে বিল আদায় করা ফরজ সেখানে গা ঢাকা দিয়ে সরকার চুপিচুপি ঘুরা ফিরা করে আর যারা সঠিকভাবে বিল আদায় করে আসতেসে তাদের সাথেই যত ভাব দেখায়, এটা তখনই ঠিক হবে যখন রাষ্ট্রীয় স্থান গুলোতে শুরুতে প্রিপেইড মিটার এর আওতায় আনতে হবে, সেটা সংসদ ভবন হোক, গণভবন হোক, মন্ত্রণালয় হোক এরকম যত কার্যালয় সবখানে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন