শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উঁচু ব্রিজে বাধা পাউবো!

জটিলতা কাটছে না মেগা প্রকল্পে : প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান এলাকাবাসী

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) দৃষ্টিনন্দন করার জন্য মেগা প্রকল্প প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ডিএনডি এলাকার পানি নিস্কাশন করে মানুষের পানিবদ্ধতার দুর্দশা লাঘব করা। সেই সাথে ডিএনডি’র খালকে ময়লা, আবর্জনামুক্ত করে স্বচ্ছ পানি প্রবাহে নৌযান চলাচলের উপযোগী করা। সে লক্ষ্যে এগিয়ে চলছিল প্রকল্পের কাজ। কিন্তু মাঝপথে খালের উপর উঁচু ব্রিজ নির্মাণে বাধা দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের উপর তাদের নিজস্ব ডিজাইনের নিচু ব্রিজ নির্মাণ করতে চাচ্ছে। এতে করে প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। একই সাথে খাল থেকে ময়লা আবর্জনা নিস্কাশনও করা যাবে না। চলাচল করতে পারবে না নৌকা বা নৌযান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে পরিকল্পনা নিয়ে মেগা প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে পারলে এটি ঢাকাসহ সারাদেশের জন্য একটা মডেল হয়ে থাকবে। আর যেনতেনভাবে বাস্তবায়ন করলে এর সুফল পাওয়া যাবে না।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ কে এম ওয়াহেদ উদ্দিন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) দৃষ্টিনন্দন মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ডিএনডি এলাকার পানি নিস্কাশন করে মানুষের পানিবদ্ধতার দুর্দশা লাঘব করা। এ প্রকল্পে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএনডি মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী ইনকিলাবকে বলেন, এখন নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সে কারণে ব্রিজগুলোর নির্মাণকাজের গতি কমিয়ে পানি নিস্কাশনের উপর জোর দেয়ার কথা বলে হয়েছে। কিন্তু ব্রিজের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়নি। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫০ভাগ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী শাসন, পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা এবং ৫টির মধ্যে দুটি পাম্প হাউজ নির্মাণ শেষ হয়েছে। এছাড়া ২২টি ব্রীজের মধ্যে ১০টির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। অন্যান্য ব্রিজের নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ কারণে মাঝপথে থমকে গেছে এ মেগা প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, উঁচু ব্রিজ নির্মাণে জটিলতার কারণে বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পের আরডিপিপি (পুনঃপ্রকল্প প্রস্তাব) একনেকে পাস করানো নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা শুরু হয়েছে।

সেনাবাহিনীর অধীনে প্রকল্পের ত্বরিত গতির কাজ দৃশ্যমান হওয়ার পরপরই কৃত্রিম পানিবদ্ধতা থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি মিলতে শুরু করে ডিএনডিবাসীর। গত দুই বছরে সেনাবাহিনী পুরো ডিএনডি এলাকার ৯৩ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার খালের মধ্যে ৮৮দশমিক ৯৫ কিলোমিটার উদ্ধার এবং ৬৩ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি ডিএনডির এই প্রকল্পের পানি নিস্কাশনের জন্য নতুন ও আধুনিক পাম্পগুলোও বসানোর কাজ চলছে। ৫টির মধ্যে দুটি পাম্প বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একনেকের সভায় ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হওয়ার খবরে সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, ঢাকার ডেমরাসহ আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সরকার। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনী চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন।

এদিকে প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও দেখা দেয় নানা প্রতিবন্ধকতা। এর আগে প্রকল্পটি আরডিপিপি’র ফাইলটি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যেতেই সময় লেগেছে প্রায় ১৫ মাস। বিশেষ করে কয়েক যুগ দখলে থাকা ডিএনডি এলাকার প্রায় ৯৪ কিলোমিটার উদ্ধার হওয়া খাল এবং নতুন করে খনন করা খালগুলো আবারও বেদখল হতে থাকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি করলে আবার উচ্ছেদ করা খালের জমি দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এতে করে গত ২ বছরে প্রকল্পে ব্যয় করা অর্থ ও পরিশ্রম দুটিই ভেস্তে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রকল্পের আরডিপিপি পাস হলে ডিএনডি’র প্রায় ৩০ লাখ বাসিন্দার দুই যুগের কৃত্রিম পানিবদ্ধতা আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান মিলবে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনীর ত্বরিত গতির কাজে গত দুই বছরে সেনাবাহিনী পুরো ডিএনডি এলাকার ৯৩ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার খালের মধ্যে ৮৮ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার উদ্ধার এবং ৬৩ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে নতুন করে আনা পাম্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক ডিভাইস, যাতে পাম্পগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পানি টানার কাজ করবে। এতে বাঁচবে বিশাল অঙ্কের বিদ্যুৎ খরচও। প্রকল্পের আওতাধীন ডিএনডি’র নিজস্ব জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ২৭টি মসজিদ, ১১টি মাদরাসা, ১৩টি সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও কলেজ, একটি মন্দির, ১টি পুলিশ চেকপোস্ট, ৪টি পেট্রল পাম্প ও ওয়াসার পাম্প হাউস, ৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা উচ্ছেদ করার হয়েছে। সে সময় বিশাল জটিলতা পড়তে হয়েছে এ সেনাবাহিনীকে। তারপরও প্রায় ২৮টি অবৈধ দখলদার উচ্চ ও নিম্ন আদালতে রিট করায় উচ্ছেদ অভিযানে বাধা পেতে হয়েছে সেনাবাহিনীকে। সব বাধা দুর হলেও এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রধানমন্ত্রীর এই মেগা প্রকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে যে ব্যয় ধরা হয়েছিল সেখান থেকে নানা কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পের ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে প্রস্তবিত আরডিপিপিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৯ কোটি টাকার বেশি।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ইনকিলাবকে বলেন, হাতিরঝিলের মতো ডিএনডি এলাকাকে কীভাবে দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন করা যায় সেটি প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছেন। ডিএনডি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন আমরা দ্রুত শেষ দেখতে চাই। এখনে কোন কর্মকর্তা বাধা দিলে তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Nannu Mia Hawladar ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫১ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পে পাউবো বাধা দিবে সেটা কিভাবে সম্ভব। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
Total Reply(0)
রফিকুল ইসলাম ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫২ এএম says : 0
এটা বাস্তবায়ণ হলে একদিকে ময়লা দূর হয়ে সুন্দর দৃশ্য ভোগ করা যাবে।
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫৩ এএম says : 0
নিচু ব্রিজ সবসময় সমস্য্ ্রতৈরি করে কিন্তু উচু ব্রিজ কি সমস্যা করবে।
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
জটিলতা কাটিয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা হোক।
Total Reply(0)
রুকাইয়া খাতুন ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫৪ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রীর অসাধারণ একটি উদ্যোগ। এটা যেভাবেই সফল করতে হবে।
Total Reply(0)
নোমান মাহমুদ ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
পানি উন্নয়ণ বোর্ড কাজটা ঠিক করে নি। হাতিরঝিলের মতো সুন্দর একটা প্রকল্প কেন বাধাগ্রস্ত করছে।
Total Reply(0)
নূরুজ্জামান নূর ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫৬ এএম says : 0
প্রকল্পটি শেষ হলে একদিকে ময়লা দূর হবে। আরেকদিকে সুন্দর ‍দৃশ্য তৈনি হবে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২২ জুন, ২০২১, ১২:৫৭ এএম says : 0
প্রকল্পের আরডিপিপি পাস হলে ডিএনডি’র প্রায় ৩০ লাখ বাসিন্দার দুই যুগের কৃত্রিম পানিবদ্ধতা আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান মিলবে।
Total Reply(0)
Mominul+Hoque ২২ জুন, ২০২১, ১০:০১ এএম says : 0
নিচু করে ব্রীজ তৈরী করলে ময়লায় আবার পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হবে সেই ক্ষেত্রে পানি উন্নয়নবোর্ড টাকা কামানোর ফন্দি বাহির করবে। তার চাইতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার চার পাশে নৌকা চলাচলের উপযোগী করে প্রকল্প সম্পন্ন করাই উচিত।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন