দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও নীতিতে তামাক কোম্পানিগুলোর অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পলিসি’র সুরক্ষায় ‘এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫ দশমিক ৩’ অনসারে গাইডলাইন প্রণয়ন বর্তমান সময়ের দাবী। একই সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী আইন ও নীতিগুলো যুগোপযোগী করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী’র প্রত্যয় অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।
বুধবার (২৩ জুন) ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র আয়োজনে ‘কোম্পানির প্রভাব: তামাক নিয়ন্ত্রণে কাক্সিখত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক লাইভ টকশোতে বক্তারা উক্ত মতামত ব্যক্ত করেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকর্তা আবু রায়হান এর সঞ্চালনায় টক শো-তে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর আহŸায়ক ফরিদা আখতার, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের পরিচালক (স্বাস্থ্য এবং ওয়াশ সেক্টর) ইকবাল মাসুদ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘দি ইউনিয়ন’ এর কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
ফরিদা আখতার বলেন, সরকার একদিকে তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে। আবার অন্যদিকে এ সকল পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করছে। এটা এক ধরনের দ্বৈতনীতি। ধোঁয়াবিহীন তামাক কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। একই সাথে তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করা উচিৎ।
ইকবাল মাসুদ বলেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবী ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনার পরেও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তামাক পণ্যের কর বাড়েনি কারণ, এর পেছনে কল-কাঠি নাড়ছে তামাক কোম্পানিগুলো। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ‘এমপাওয়ার পলিসি প্যাকেজে’ তামাকের কর বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বাপরোপ করা হয়েছে। সুতরাং, প্রকৃত অর্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আইন সংশোধন, কর সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যহত রাকতে হবে।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দ্রæত বদলি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি’, ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ রোডম্যাপ’, ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’সহ অনেকগুলো নীতি প্রণয়ন দীর্ঘদিন থেকে চলমান। কোন এক অজানা কারণে তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যত দ্রæত সম্ভব সেগুলো চ‚ড়ান্ত এবং এফসিটিসি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এর ধারা ৫ দশমিক ৩ অনুসারে ‘গাইডলাইন’ প্রণয়ন করা উচিৎ।
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, বাংলাদেশে এখনো এমন কয়েকটি আইন ও ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে যেগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে পুরাতন মান্ধাতার আমলের এ আইনগুলো জনবান্ধব ও যুগোপযোগী করতে হবে। এফসিটিসি অনুসারে বিশে^র বিভিন্ন দেশ তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষায় দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন