বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

একদিনে ৯০ শিশুর জন্ম ৪ বছরে সোয়া লাখ

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

রোহিঙ্গার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। পরিবারগুলোতে বাল্যবিবাহ ও পুরুষদের একাধিক বিয়ের প্রবণতাও বেশি। ফলে প্রায় ৪ বছরে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ আশ্রয় শিবির এবং ভাসানচর মিলিয়ে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে এক লাখ ২৪ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে। এ পরিসংখ্যান বেসরকারি। সরকারি পর্যায়ে নতুন শিশুদের তালিকা কিভাবে হচ্ছে তার সঠিক কোন তথ্য নেই। বেসরকারি এনজিও সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের পক্ষ থেকে শিশু জন্মহারের এ সংখ্যা জানানো হয়েছে।

উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ আশ্রয় শিবিরে লাখ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। জাতিসংঘের হিসাব মতে ওই সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। ইউএনএইচসিআরের পরিসংখ্যান মতে এ সংখ্যা ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৪ জন। অপরদিকে, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের নিবন্ধন অনুসারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৮৬ জন। এ দলটি আসার আগে এসেছে আরও বহু রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যাবাসনও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯২ সালে প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উখিয়া-টেকনাফের দুটি রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গার সরকারি পরিসংখ্যান দাঁড়ায় প্রায় ৩২ হাজারে। গত ২৫ বছরে ওই ৩২ হাজারের সঙ্গে নতুন ভূমিষ্ঠ শিশুর সংখ্যা যুক্ত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। এরা শিশু থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে যৌবন পেরিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন নতুন পরিবার গড়ে তুলেছে এবং সে পরিবারগুলোতেও এসেছে অসংখ্য শিশু।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, অধিকাংশ পুরুষ রোহিঙ্গার একাধিক স্ত্রী রয়েছে। প্রতি স্ত্রীর ঘরে আসছে নতুন শিশু। বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও সত্য। দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মাধ্যমে প্রচলিত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যাপারে তাদের আগ্রহী করা অসম্ভব একটি ব্যাপার। এরা মনে করে মিয়ানমারের এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যতই বাড়বে ততই তাদের লাভ। ফলে ধীরে ধীরে এ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। ২০১৭ সালের পর ১০ থেকে ১২ বছরের যেসব শিশু ও কিশোরী কেউ একা বা কেউ পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে এসেছিল এদের অনেকেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। অনেকেই এখন একাধিক সন্তানের জননী।

উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ শিবিরের ঝুপড়ি, কক্ষ, টাল (বস্তি) ইত্যাদিতে প্রতিনিয়ত ভূমিষ্ঠ হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশু। বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালের পর থেকে হালনাগাদ অর্থাৎ গত তিন বছর ১০ মাসে ৩৪ শিবিরে জন্ম নিয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ২শ’ রোহিঙ্গা শিশু। নতুন এবং পুরনো রোহিঙ্গাদের নিয়ে এদেশে জন্ম নেয়া শিশুসহ রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখে পৌঁছেছে। অপরদিকে, প্রায় চার বছরে ভারত থেকে স্থল, নৌ ও সাগর পথে এবং রাখাইন রাজ্য থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে এমন রোহিঙ্গার সংখ্যাও অর্ধলাখের কাছাকাছি।

শিশুদের নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিসংখ্যান ও কর্মকর্তাদের মতে, ৩৪ রোহিঙ্গা শিবিরে গড়ে প্রতিদিন ৯০ শিশু জন্ম নিচ্ছে। সে অনুযায়ী ৩৪ শিবিরে মাসে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে গড়ে ২ হাজার ৭শ’ শিশু। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩২ হাজার ৪শ’। এ গড়সংখ্যা মিলিয়ে ২০১৭ সালের পর হালনাগাদ অর্থাৎ গত তিন বছর ১০ মাসে রোহিঙ্গা শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ২শ’। এরসঙ্গে একদিন পার হলেই নতুন করে যোগ হচ্ছে আরও ৯০ জন।

কক্সবাজারে কর্মরত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) শাহ রেজোয়ান হায়াত জানিয়েছেন, উখিয়ায় একটি রেজিস্টার্ডসহ ২৬টি ক্যাম্প রয়েছে। এছাড়া টেকনাফে একটি রেজিস্টার্ডসহ ক্যাম্প রয়েছে ৮টি। ভাসানচরসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ শিবিরে মোট ৮ লাখ ৮০ হাজার আশ্রিত রোহিঙ্গা রয়েছে। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে জাতিসংঘের হিসাব মতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার নিবন্ধন রয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুদের বড় একটি অংশ বর্তমানে এদেশের জন্মনিবন্ধন ও তাদের পিতামাতার এনআইডি কার্ড প্রদর্শন করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নও করছে। অনেকে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেন ঘোষণা দিয়েছেন, রোহিঙ্গা শিবিরে জন্ম নেয়া শিশু এবং রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নতুন করে গণনা হবে।

রোহিঙ্গা নেতা আবু ছালেহ জানান, প্রতিবছর রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে সদস্য সংখ্যা যে বেড়েই চলেছে তা সত্য। আশ্রয় শিবিরে অনেক রোহিঙ্গা পরিবারে থাকার সঙ্কুলানও যে হচ্ছে না তাও সত্য। এছাড়া ৩৪ শিবির থেকে ইতঃপূর্বে বহু রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে বিদেশে। আবার বড় একটি অংশ এদেশের বিভিন্ন স্থানে বসতি গেড়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ সংখ্যা বেশি। এরা পার্বত্য চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন