শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কবে সচেতন হবে মানুষ

চট্টগ্রামে করোনা ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণেও উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

সিটি সার্ভিসের বাসে ঠাসাঠাসি যাত্রী। বেশ কয়েকজনের মুখে নেই মাস্ক। এক যাত্রী এর প্রতিবাদ করতেই ক্ষেপে যান তাদের একজন। তার যুক্তি পরিশ্রমী মানুষের করোনা হয় না। কঠোর পরিশ্রম করছি, মাস্ক পরার দরকার নেই। মাস্ক না পরে বাসে উঠা অন্যরাও তার সাথে তাল মেলালেন। এমন খোঁড়া যুক্তিতে হতবাক বাসের যাত্রীরা। তাদের প্রশ্ন মানুষ আর কবে সচেতন হবে। দেড় বছরেও মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে উঠেনি।

চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহন থেকে শুরু করে হাটবাজার, অফিস-আদালত, অলি-গলি, পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকান, পাড়ার আড্ডা, সর্বত্রই চলছে মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা, অহেতুক ভিড়-জটলা। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার সব লক্ষণ-উপসর্গ থাকার পরও লোকজন নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। অনেকে আবার করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও আইসোলেশনে না থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে চলেছেন। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণেও মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি। প্রশাসনের তরফে নির্দেশনা জারি করেই যেন দায়িত্ব শেষ। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নেই কোন তদারকি কিংবা অভিযান।

মহানগরীসহ চট্টগ্রাম জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৬৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন তিনজন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন। তাদের মধ্যে মহানগরীর বাসিন্দা ৪৪ হাজার ৫০৪ জন এবং জেলার বাসিন্দা ১২ হাজার ১২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগর এবং জেলায় সংক্রমণের হার ২২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় সংক্রমণ ৩৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় সেখানে গতকাল থেকে টানা আট দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। গেল ঈদের ছুটিতে হাটবাজার এবং গ্রামেগঞ্জে মানুষের ভিড়-জটলায় সংক্রমণ বেড়ে যায়। তা এখনও অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে ঘর থেকে বের হলেই মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক পরা এবং পারতপক্ষে ভিড়-জটলা এড়িয়ে চলা নিশ্চিত করা গেলেই সংক্রমণ নিম্নমুখী হবে বলে জানান তিনি।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মাস্ক পরা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। করোনা ভ্যাকসিন দুই ডোজ গ্রহণ করার পরও মাস্ক পরতে হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা নেই। সর্বত্রই লোকজন মাস্ক ছাড়াই ঘুরছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ লেখা শোভা পাচ্ছে।

কিন্তু বাস্তবে সেবা গ্রহীতাদের মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক না পরার পেছনে অজুহাতেরও অভাব নেই। কেউ বলছেন দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে অস্বস্তি লাগে। কেউ বলেন দম বন্ধ হয়ে আসে। হাত ধোঁয়া কিংবা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলারও বালাই নেই। ভিড়-জটলায় প্রকাশ্যে চলছে ধুমপান। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে হেলাফেলার কারণে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যায় নি। এজন্য প্রশাসনের অবহেলাকেই দুষছেন অনেকে। গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা অকার্যকর। ঠাসাঠাসি করে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী তোলা হচ্ছে। বেশিরভাগ যাত্রীর মুখে নেই মাস্ক। চালক-হেলপাররাও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। একইচিত্র নগরীর হোটেল-রেস্তোঁরা, মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র, হাটবাজারে।

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে চলছে বিয়ে-শাদিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান। সেখানে ব্যাপক লোকসমাগম হচ্ছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোও কাগজে-কলমে বন্ধ থাকলেও মানুষের ভিড়-জটলা থেমে নেই। হাটবাজারে উপচেপড়া ভিড়। অলিগলিতে মানুষ অকারণেই ভিড়-জটলা করছে। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা পাড়ায়-মহল্লায় অকারণ ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন নজরদারি নেই। কয়েক মাস আগেও মাস্ক পরা নিশ্চিতে নগরীতে ব্যাপকহারে অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। তাতে সুফলও পাওয়া যায়। এখন এ ধরনের অভিযান চোখে পড়েনা। এতে লোকজনের মধ্যেও গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। ফটিকছড়িতে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। গতকাল প্রথম দিনেই গণহারে যানবাহন চলাচল করেছে। ভিড়-জটলা ছিল উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। স্থানীয়রা বলছেন, কঠোর লকডাউনের মধ্যেও লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। মহানগরী ও জেলায় গতকাল থেকে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে।

করোনার শুরুতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনসচেতনতার লক্ষ্যে প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিরা মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু এখন কারও কোন তৎপরতা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনগণকে সচেতন করা ছাড়া মহামারির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় নেই। আর এ সচেতনতা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন জনপ্রতিনিধি এবং সামাজিক সংগঠনের নেতারা। অথচ এ কঠিন দুর্যোগেও তাদের কোন তৎপরতা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন