বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চীন-মার্কিন চাপ ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন পুনঃস্থাপন

মোদি-শাহ নীতি ব্যর্থ : দিল্লিতে আলোচনা আজ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই নরেন্দ্র মোদির সরকার আজ নয়াদিল্লিতে কাশ্মীরের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য ডেকেছে। খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির সভাপতিত্বে কাশ্মীর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও উপস্থিত থাকবেন। যদিও সভার আলোচ্য বিষয়বস্তু ঘোষণা করা হয়নি, তবে মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের ভারত অঞ্চলে ইউনিয়ন টেরিটরি নীতি বা স্বায়ত্তশাসন পুনঃস্থাপন এবং নতুন সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ এ বছর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেল’ বা অনানুষ্ঠানিক গোপন আলোচনার ফলাফল হিসাবে প্রত্যাশিত ছিল।

মোদি সরকার ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে ৩৫ অনুচ্ছেদ এ দ্বারা প্রদত্ত সুরক্ষা এবং স্বায়ত্তশাসন রদ করে অঞ্চলটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন করে দেয় এবং কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মোদি এবং শাহের কাশ্মীর পরিকল্পনা যে দর্শনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল, তা গত বছর পরিষ্কার হয়ে যায়। তারা দুটি বড় কাশ্মীরি দলের কার্যকর বিকল্প তৈরিতে ব্যর্থ হয়। ফলে শীর্ষস্থানীয় কাশ্মীরি নেতাদের মুক্তি দেওয়া হয় এবং জেলা উন্নয়ন কাউন্সিলের তড়িঘড়ি নির্বাচনে এসব দলকে বাইপাস ও প্রান্তিকীকরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

মোদির ব্যর্থতার অন্যান্য উদাহরণের মধ্যে রয়েছে কাশ্মীরে প্রতিশ্রুত বিস্তৃত ব্যবসায়িক বিনিয়োগে ব্যর্থতা, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকাটিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রগতির অভাব। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিকভাবে চীন কাশ্মীর ইস্যুটি বহুজাতিক ফোরামগুলোতে উত্থাপন ও সমর্থন করে আসছে। লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে চীনা আধিপত্য ও ভারত জুড়ে করোনার ভয়াবহতা কাশ্মীরে মোদি সরকারের সমস্যাগুলো আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এসবের মধ্যে খুব সম্ভবত বাইডেন প্রশাসনের চাপের মুখে বিজেপি সরকার কাশ্মীরের ওপর থেকে ৪ জি মোবাইল ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যোগাযোগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

চীন ও পাকিস্তানের দ্বৈত-ফ্রন্টের সম্মিলিত সামরিক হুমকির সম্ভাব্যতার মুখোমুখি হয়ে মোদি সরকার ২০২০ সালে পাকিস্তানের সাথে ব্যাকচ্যানেলে আলোচনা শুরু করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে মার্চে দু’দেশের নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতি ঘটে। এটি খুব শীঘ্রই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্ততায় কাশ্মীর আলোচনায় মোদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ছাড় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী একটি ‘কার্যকর পরিবেশ’ তৈরির অন্তর্গত।

আল জাজিরার মতে, এই ‘কার্যকর পরিবেশ’ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: ১) কাশ্মীরে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন স্থায়ীভাবে রদ, ২) রাজনৈতিক ও অন্যান্য বন্দীদের মুক্তি, ৩) কাশ্মীরে যোগাযোগ এবং আন্দোলনের উপর অবরোধ অপসারণ, ৪) জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাষ্ট্রভিত্তিক অধিকার প্রদান, এবং ৫) কাশ্মীরে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর মোতায়েন হ্রাস।

এসম্পর্কে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার একটি বিবৃতির ভিত্তিতে ডন এ প্রকাশিত আরও বিশদ তথ্য থেকে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন যে, ব্যাকচ্যানেল আলোচনাগুলো দু’দেশের গোয়েন্দা নেতৃত্বের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডনের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানের প্রাথমিক আগ্রহ হল, ‘কাশ্মীরের রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরে পাওয়া এবং সেখানে জনসংখ্যাগত কোনো পরিবর্তন না আনতে ভারতের সম্মতি।’

কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণের পেছনে মোদির একটি দ্বিপক্ষীয় এবং মানবিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রস্থান নির্ধারিত হওয়ার কারণে এখানে একটি ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও সামনে এসেছে। পাকিস্তানের মাটিতে আমেরিকান ঘাঁটি স্থাপনের জন্য আমেরিকা এবং পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আমেরিকাও ভারতকে কাশ্মীর ইস্যুতে চাপ দিচ্ছে এবং লাদাখে চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত সঙ্কট অমিমাংসিত রয়ে গেছে।

এছাড়া, মোদির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে এবং শাহের ২০১৯ এর বাগাড়ম্বটি নীরবতার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ভারত ভয়াবহ করোনা বিপর্যয় এবং মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে। দেশটির পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এক অপমানজনক নির্বাচনী ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং একাধিক রাজ্যে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখোমুখি।

এদিকে, গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরে গণতন্ত্র বিষয়ক শুনানির সময় মাকিন সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া ডিন থম্পসন স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘কাশ্মীর এমন একটি অঞ্চল যেখানে আমরা তাদের(মোদি সরকার)কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে দেখেছি: বন্দীদের মুক্তি, ৪জি যোগাযোগ পুনরুদ্ধার, সেই প্রকৃতির জিনিস। সেখানে আমরা অন্যান্য নির্বাচনী পদক্ষেপগুলো নিতে দেখতে চাই এবং আমরা তাদের এটি করতে উৎসাহিত করেছি এবং তা অব্যাহত রাখব।’ সূত্র : দ্য ওয়্যার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Kamrul Hasan Pulak ২৪ জুন, ২০২১, ৫:১৪ এএম says : 0
তামাশা করে লাভ হবেনা, আজ অথবা কাল দিতেই হবে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা।
Total Reply(0)
Mohammad Zohurul Islam ২৪ জুন, ২০২১, ৫:১৪ এএম says : 0
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসছে বলে এ পরিকল্পনা নিতে পারে ভারত। তালেবানের সাথে ভারত সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী।
Total Reply(0)
Monirul Islam ২৪ জুন, ২০২১, ৫:১৪ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
মেঘদূত পারভেজ ২৪ জুন, ২০২১, ৫:১৪ এএম says : 0
শুধু মর্যাদা ফিরিয়ে দিলে হবে না, স্বাধীনতা দিতে হবে।
Total Reply(0)
দেওয়ান মাহদী ২৪ জুন, ২০২১, ৫:১৫ এএম says : 0
জম্মু ও কাশ্মিরকে স্বায়ত্ত শাসন ফিরিয়ে দেয়া হোক। নতুবা মোদিকে আরও ভুগতে হবে।
Total Reply(0)
গ্রিন রবি ২৪ জুন, ২০২১, ৫:১৫ এএম says : 0
উগ্রবাদি মোদি যতদিন ক্ষষতায় আছে ততদিন এর সামাধান হবে না।
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ২৪ জুন, ২০২১, ৫:১৫ এএম says : 0
ভালো খবর। মহান আল্লাহ কাশ্মিরের ভাই ও বোনদের হেফাজত করুন। ভারথীয় নিপীড়ন থেকে তাদের মুক্তি দিন।
Total Reply(0)
MD Shaheen ২৪ জুন, ২০২১, ৯:৩৮ এএম says : 0
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন নয় প্রয়োজন কাশ্মীরের স্বাধীনতা
Total Reply(0)
Azad mullah ২৭ জুন, ২০২১, ৬:৪২ এএম says : 0
বিসব মানুষের চাহাত হলো কাশ্মীরের সাদীনতা আর যত তাড়াতাড়ি সাদিন হবে ভারতের জন্য ততই মঙ্গল হবে এছাড়া এমনিতে ই মুদি সা বিজেপি ভারতের মতো দেশটাকে ধংস করে ফেলতেছে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন