বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২১, ১২:০৫ এএম

২০২০-২১ অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছিল সরকার। আর যে কারণে করোনা মহামারির মধ্যেও অর্থের প্রবাহ বাড়ে, কিছুটা হলেও স্বাভাবিক ছিল অর্থনীতির চাকা। সংসদে দেয়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের তথ্য মতে, অর্থবছরের গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ১ হাজার ৩৮৬ কোটির বেশি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। যদিও অপর একটি সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৪০০ জন করদাতা অপ্রদর্শিত সম্পদ রিটার্নে প্রদর্শন করে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয়কর দিয়েছেন। ফলে, করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে পুঁজি প্রবাহ বেড়েছে। অর্থমন্ত্রীর দেয়া গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে ৩১১ জন করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৮ টাকা আয়কর পরিশোধ করেছেন। এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়েছে এবং পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়েছে। পাশাপাশি আবাসন খাতেও অনেকে বিনিয়োগ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগে আনতে চায় সরকার। আর তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটেও পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে। পূর্বের নিয়মে নিয়মিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে প্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করতে হবে। পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে টাকা বিনিয়োগ করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না- এ মর্মে আয়কর অধ্যাদেশেও সংশোধনী আনা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ৩ জুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলাসহ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আর এবারের বাজেটের সেøাগান ‘জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। বাজেট বাস্তবায়ন ও অর্থনীতির চাকা সচলে তাই কালো টাকা সাদা করার সুযোগটি আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরেও সরকার চালু রাখতে পারে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বর্তমানে অঘোষিত সম্পদের মালিকদেরকে বর্তমানে চালু থাকা ১০ শতাংশ কর দিয়ে সেটিকে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমান সুযোগটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। তবে এক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরে শতকরা ১০ শতাংশ জরিমানা ও ২৫ শতাংশ কর বসানো হতে পারে। নতুন এই উদ্যোগটি চালু হলে আয়কর রিটার্নে ঘোষিত সম্পদের ক্ষেত্রে কার্যকর করের হার হবে ২৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে কার্যকর করের হারটি হবে সর্বোচ্চ। কারণ, এ মুহূর্তে ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ।

বাজেট বক্তব্যে ‘শর্তহীনভাবে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়াটি জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরেও বজায় থাকবে কি না’ সে বিষয়টি সম্পর্কে কোথাও উল্লেখ করেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বর্তমানে যে সুযোগটি চালু আছে, সেটির মাধ্যমে ১০ হাজার ৪০৪ জন করদাতা প্রায় ১৪ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদকে এই অর্থবছরে বৈধ করেছেন। যদিও এই সুযোগের সমালোচনা করেছেন একাধিক অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের নাগরিকরা। তবে, সরকার এখনো কিছু পরিমাণ কর দেয়ার বিনিময়ে অঘোষিত সম্পদ ব্যবহার করে বাড়ি, জমি, দালান ও অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সুযোগ রেখেছে। এক্ষেত্রে করের হারটি নির্ভর করে সম্পত্তিটি কোন এলাকায় অবস্থিত, তার ওপর। এই নিয়মের আওতায় সরকারি সংস্থাগুলো চাইলে আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতকে চাঙা করতে কালো টাকা বিনিয়োগের নতুন বিধান করা হচ্ছে। এ দুই খাতে কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করদাতা যে হারে কর দেবেন, তাকে এর অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এতে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। চলতি বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ১৯এএএএ ধারায় ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগ রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক, শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও অন্য সিকিউরিটিজ এবং পুঁজিবাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য সব সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে এ সুযোগ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে বিশেষ সুবিধা বাতিল হচ্ছে। কিন্তু আগের ৩ পদ্ধতিতে টাকা সাদা করা যাবে। এ জন্য কোনো সংস্থা যাতে আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইতে না পারে সে জন্য আয়কর অধ্যাদেশে প্রভিশন রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা পুঁজিবাজার বা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করলে কোনো সংস্থা প্রশ্ন করবে না। এক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়, ঘোষণা দেওয়ার পর এক বছর বিনিয়োগকৃত অর্থ পুঁজিবাজার থেকে ওঠানো যাবে না। একইভাবে একই হারে কর দিয়ে ১৯এএএএএ ধারায় জমি-ফ্ল্যাট ও নগদ অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় একে ‘বিশেষ সুবিধা’ বলা হচ্ছে। এর বাইরেও আরো তিন পদ্ধতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ (কালোটাকা সাদা) করা যায়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতেই কালোটাকা বিনিয়োগ করা যায়। শুধু আবাসন খাতের জন্য ১৯বিবিবিবিবি নামে আয়কর অধ্যাদেশে আলাদা একটি ধারা আছে।

এ ধারা অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত হারে কর পরিশোধের মাধ্যমে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। ১৯ডিডি ধারা অনুযায়ী, ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করা যায়।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন