বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পাকিস্তান আফগানিস্তানের শান্তির অংশীদার হতে প্রস্তুত : ইমরান খান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২১, ৭:১৯ পিএম

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তান আফগানিস্তানের শান্তির অংশীদার হতে প্রস্তুত, তবে আমরা কোন মার্কিন ঘাঁটি গড়তে দিব না।পাকিস্তান আমেরিকার সাথে আফগানিস্তানে শান্তির অংশীদার হতে প্রস্তুত - তবে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার সাথে সাথে আমরা আরও সংঘাতের ঝুঁকি এড়াতে পারব।সম্প্রতি মার্কিন টিভি চ্যানেল এইচবিও’র প্রামাণ্যচিত্রধর্মী সংবাদ কার্যক্রম অ্যাক্সিওসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। -এইচবিও, জিও টিভি, ডন

জোনাথন সোয়ানের নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ইমরান খান আরো বলেন, দীর্ঘ দুর্ভোগের শিকার এই দেশটির মতন আমাদের দেশেরও একই আগ্রহ রয়েছে: রাজনৈতিক নিষ্পত্তি, স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দানে অস্বীকৃতি। আমরা আফগানিস্তানের যে কোনও সামরিক অধিগ্রহণের বিরোধিতা করছি, যেটি কেবল কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করবে। কারণ, তালেবানরা পুরো দেশ জুড়ে জয়লাভ করতে পারবে না এবং তবুও এটি সফল হওয়ার জন্য যে কোনও সরকারে অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে। তিনি বলেন, অতীতে আফগানিস্তানে লড়াইরত প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্য থেকে একটিকে বেছে নিয়ে পাকিস্তান ভুল করেছে, কিন্তু আমরা সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি। আমাদের কোন পছন্দ নেই এবং যে দলই আফগান জনগণের আস্থাভাজন হবে, পাকিস্তান তার সাথেই কাজ করে যাবে। ইতিহাস প্রমাণ করে যে আফগানিস্তানকে কখনই বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানের যুদ্ধে আমাদের দেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৭০ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে ক্ষয়ক্ষতি যেখানে ১৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, সেখানে আমেরিকা ২০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। পর্যটন ও বিনিয়োগ কমে গেছে। মার্কিন কর্মকান্ডে যোগদানের পরে, পাকিস্তানকে তার সহযোগী হিসাবে টার্গেট করা হয়েছিল, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান এবং অন্যান্য গোষ্ঠী আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে আমি সতর্ক করেছিলাম, এর ব্যবহার তাদের জিতাতে পারে নি। বরং তা আমেরিকানদের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি করেছিল। যেটি আমাদের দুই দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে লালিত করেছিল।

আমি বহু বছর ধরে বলে আসছি যে, আফগানিস্তানে কোনও সামরিক সমাধান নেই। আমেরিকা প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী আঞ্চলিক উপজাতীয় অঞ্চলে আমাদের সেনা প্রেরণের জন্য পাকিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করেছিল। এই মিথ্যা প্রত্যাশায় যে, এটি বিদ্রোহের অবসান ঘটাবে। এটিতো হয়নি, উলটো এটি অভ্যন্তরীণভাবে উপজাতি অঞ্চলের অর্ধেক জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। শুধুমাত্র উত্তর ওয়াজিরিস্তানের ১ মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করেছিল। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগস্ত করেছে এবং পুরো গ্রাম কি গ্রাম ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আক্রমণে বেসামরিক লোকদের "সমান্তরাল" ক্ষতি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা চালাতে প্ররোচিত করেছে এবং আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের যত সৈন্যকে হত্যা করেছিল তার চেয়েও বেশি আমাদের সৈন্যকে হত্যা করেছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে আরও সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে। একমাত্র খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ৫০০ পাকিস্তানি পুলিশকে হত্যা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৩ মিলিয়নেরও বেশি আফগান শরণার্থী রয়েছে- রাজনৈতিক সমঝোতা স্থাপনের পরিবর্তে যদি গৃহযুদ্ধ হয়, তবে আমাদের সীমান্তের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে আরও অনেক শরণার্থী বৃদ্ধি পাবে, যা অস্থিতিশীলতা ও দারিদ্রতা বাড়াবে। বেশিরভাগ তালিবানরা পশতুন নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত- এবং অর্ধেকেরও বেশি পশতুন সীমান্তের আমাদের আধিকৃত অঞ্চলে বাস করেন। আমরা এখন ঐতিহাসিকভাবে উন্মুক্ত এই সীমানাতে প্রায় সম্পূর্ণ বেড়াতে চলেছি। যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বানাতে দিতে রাজি হয় পাকিস্তান, যেখান থেকে আফগানিস্তানে বোমা হামলা করা হবে এবং যদি আরেকটি আফগান গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে সন্ত্রাসীরা আবারো প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তানকে টার্গেট করবে। সহজভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এই সুবিধা দিতে সম্মত নই। এরই মধ্যে আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ২০ বছর আফগানিস্তানের ভেতরে অবস্থান করে যুক্তরাষ্ট্র তার সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক মেশিনপত্র ব্যবহার করে এই যুদ্ধে জিততে না পারে, তাহলে আমার দেশের ভিতর ঘাঁটি গেড়ে কিভাবে তারা সেই যুদ্ধ জয় করবে?

ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ একই। আমরা বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি শান্তি চাই, গৃহযুদ্ধ নয়। আমরা আমাদের উভয় দেশেই স্থিতিশীলতা চাই এবং চাই সন্ত্রাসের ইতি ঘটুক। গত দুই দশকে আফগানিস্তানে যে উন্নয়ন অর্জিত হয়েছে তা রক্ষার চুক্তিকে আমরা সমর্থন করি।আমাদের অর্থনীতিকে উন্নত করতে চাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মধ্য এশিয়ার সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সংযুক্তি বা কানেক্টিভিটি। যদি আরেকটি গৃহযুদ্ধ হয় তাহলে আমাদের সব অর্জন বিনাশ হবে। এ জন্যই আমরা তালেবানকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য বাস্তবসম্মত ব্যাপক কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছি। এ ক্ষেত্রে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এবং পরে আফগান সরকারের সাথে এই আলোচনা হয়েছে। আমরা জানি, তালেবান যদি সামরিক বিজয় ঘোষণার চেষ্টা করে, তাহলে অনন্ত এক রক্তপাতের সূচনা ঘটাবে। আমরা আশা করি, আলোচনার টেবিলে আফগান সরকারও অধিক মাত্রায় শিথিলতা দেখাবে, পাকিস্তানকে দোষ দেয়া বন্ধ করবে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আমরা যা পারি তার সবটাই করছি।

তিনি বলেন, এ জন্যই আমরা সাম্প্রতিক ‘এক্সটেন্ডেড ত্রয়কা’র যৌথ বিবৃতির অংশ হয়েছি। এরসাথে রয়েছে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এতে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, কাবুলে যদি একটি সরকার চাপিয়ে দেয়ার কোনো রকম প্রচেষ্টা নেয়া হয় তাহলে তার বিরোধিতা করব আমরা সবাই। একই সাথে আফগানিস্তানের জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশী সহায়তা বন্ধ করার চেষ্টা করব। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নিষ্পত্তি কী হবে সে বিষয়ে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ও অংশীদার চারটি দেশ প্রথমবারের মতো এমন যৌথ বিবৃতি দিয়েছে এক সুরে। এর ফলে এ অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের ওপর নতুন এক প্রভাব ফেলতে সহায়ক হবে। এর অধীনে উদীয়মান সন্ত্রাসী হুমকির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার এবং আফগান সরকারের সাথে তা মোকাবেলায় কাজ করতে সহায়ক হবে। আফগানিস্তান বা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেদের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে প্রতিবেশীরা। একই প্রতিশ্রুতি আফগানিস্তানকেও দিতে হবে। এসব মিলে আফগানদেরকে তাদের দেশ পুনর্গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে সহায়তা করবে।

পাক প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনৈতিক সংযুক্তি ও আঞ্চলিক বাণিজ্যকে অনুমোদন দেয়া। আরো সামরিক অভিযান নিরর্থক হবে। যদি আমরা এই দায়িত্ববোধকে শেয়ার করি তাহলে এক সময়ের ‘গ্রেট গেম’ ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে আফগানিস্তানের যে সমার্থক রয়েছে, তা আঞ্চলিক সহযোগিতার মডেল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন