বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে ভারতে

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণে স্বাভাবিক জীবন হারাচ্ছেন আক্রান্তরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ভারতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কিছুটা কমতে দেখা গেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ হাজার ৬৯ জন। একই সময়ে মারা গেছে ১ হাজার ৩২১ জন। একদিন আগেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছে এক হাজার ৩৫৮ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৮২ লাখ ৭৭৮। একদিন আগেই সংক্রমণ তিন কোটি ছাড়িয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ছাড়াল। এর আগে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই এই সংখ্যা ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ভারতে করোনা সংক্রমণে মারা গেছে ৩ লাখ ৯১ হাজারের বেশি মানুষ। দেশটিতে সংক্রমণে হার গত কয়েকদিন ধরেই কিছুটা কমেছে। গত ১৭ দিন ধরেই সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে। অপরদিকে গত কয়েকদিনে সুস্থতার হার বেড়েছে কিন্তু সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ১৩৭। বর্তমানে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৬ লাখ ২৭ হাজার ৫৭। ভারতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখন পর্যন্ত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে কেরালা এবং তামিলনাড়ু। কেরালায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ১২ হাজার ৭৮৭, মহারাষ্ট্রে ১০ হাজার ৬৬ এবং তামিলনাড়ুতে ৬ হাজার ৫৯৬। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের ৩০কোটি বেশি ডোজ সরবরাহ করেছে ভারত। এখন পর্যন্ত ভারতের মহারাষ্ট্র, কেরালা এবং মধ্যপ্রদেশে ডেল্টা প্লাস শনাক্ত হওয়ায় ইতোমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়া আশঙ্কার বিষয় হলো, এতদিন যে পদ্ধতিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হয়ে এসেছে, ডেল্টা প্লাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তা কাজ করছে না। এ নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এদিকে, ভারতের মহামারী করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪ লাখের মতো মানুষ। সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৯০ লাখের মতো মানুষ। তবে সুস্থ হওয়া সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তাদের অনেককেই ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে। বø্যাক ফাঙ্গাসের কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি ঘোলা হয়ে যায়, চোখের পাতা নিচের দিকে ঝুঁকে পড়া বা নাক দিয়ে তরল নিঃসরণ হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এরইমধ্যে বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে ২১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি। ওয়াশিংটন পোস্ট দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডায়াবেটিস আছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল- এমন ব্যক্তিরা বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। বø্যাক ফাঙ্গাস থেকে মুক্তির একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে আক্রান্ত স্থান থেকে ফাঙ্গাসকে কেটে ফেলে দেওয়া। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই আক্রান্ত স্থানটি হচ্ছে চোখ। ফলে অনেককেই বেঁচে থাকতে চোখ বাদ দিতে হচ্ছে। এতে রুটি-রুজি হারিয়ে অনেককে দুর্দশায় পড়তে হচ্ছে। ভারতের করোনা রোগীদের মধ্যে বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভারতের যেসব প্রদেশে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি তার একটি মহারাষ্ট্র। প্রদেশটির রাজধানী মুম্বাইয়ের ওকুলোপ্লাস্টিক সার্জন অক্ষয় নায়ার মিউকোরমাইকোসিস রোগের চিকিৎসা দেন। তিনি বলেন, বø্যাক ফাঙ্গাসে মাংসপেশীকে গ্রাস করে, টিস্যুগুলো ধ্বংস করে দেয়। অক্ষয় নায়ার বছরে এ ধরনের ১০ টি রোগী পেতেন। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে তিনি অন্তত ১০০ জনের চিকিৎসা করেছেন। তিনি জানান, বø্যাক ফাঙ্গাসে যদি সাইনাসে আক্রমণ করে তাহলে তা পরিষ্কার করতে হবে। চোখে আক্রমণ করলে চোখের মণি, পাতা, আশেপাশের পেশি বাদ দিয়ে দিতে হবে। বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে চোখ হারানো খুরশিদা বানু নামের এক নারী জানান, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর তিনি বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হন। পরে তার এক চোখ ফেলে দেওয়া হয়। বø্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুস্থ হওয়ার পর তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এতে তার স্বাভাবিক জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় মরতে বসেছিলেন অনিল বাবুরাও। তার ডান চোখ বাদ দেওয়া হয়েছে। তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো অকার্যকর হয়ে যাচ্ছিল। পরে তার ডান চোখ বাদ দেওয়া হয়। অনিলের কাছে পুরো পৃথিবীটাই অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কাজে ফিরতে পারবেন কী না - তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অনিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস, টিওআই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন