বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ রাজা ম্যানশনে বিপর্যয় ঘটলে দায় নেবে না মালিক পক্ষ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২১, ৭:৫৮ পিএম

ভাড়াটে ব্যবসায়ীদের কবলে পড়েছেন সিলেট নগরের ঐতিহ্যবাহী মার্কেট ‘রাজা ম্যানশন’ এর মালিক পক্ষ। ভূমিকম্পের কারণে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় থাকা এই ভবনটি মালিক-পক্ষ ভাঙতে চাইলেও ভাড়াটে ব্যবসায়ীদের চাপে। এমনকি ক্ষয়ক্ষতি রোধে ভবনটি খালি করতে আইনি নোটিশ প্রদান করা হলেও তাতে পাত্তা দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে ভূমিকম্প বা কোনো কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি হলে তার দায়ভার মালিক-পক্ষ নেবে না বলে হুঁশিয়ারী জানান রাজা ম্যানশনের সত্ত্বাধিকারী দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী।

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুরে সিলেট নগরীর দরগা গেটস্থ নিজ বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। দেওয়ান শমসের রাজা চৌধুরী বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১০ দিন বন্ধ রাখার পর ফের মার্কেটটি খুলে দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে আমাদেরকে অবগত করা হয়নি। কার ইন্ধনে, কাদের চাপে মার্কেটটি খুলে দেওয়া হয়েছে তা আমরা জানি না। ১০ দিন বন্ধ থাকায় ভবনটি কি ঝুঁকিমুক্ত হয়ে গেছে- এমন প্রশ্ন রেখে শমসের রাজা বলেন, ঢাকার রানা প্লাজা ধসের পর সেই মামলায় মালিক-পক্ষ জেল খাটছে। কোনো ব্যবসায়ীকে কিন্তু জেল-জরিমানা গুনতে হয়নি। যদি রাজা ম্যানশনের বেলায় এমন কিছু হয়, তাহলে সেই দায়ভার আমাদেরকে নিতে হবে, কোনো ব্যবসায়ীকে নয়। তাহলে আমরা কোন স্বার্থে এই দায়ভার নেব ? সংবাদ সম্মেলনে শমসের রাজা চৌধুরী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবন যেহেতু সংস্কার করে ব্যবহার করা সম্ভব নয়, তাই আমরা এটিকে ভেঙে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি আধুনিক বিপনীবিতান নির্মাণ করব। সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার হিসেবে আমরা বর্তমানে ভবনের তালিকাভুক্ত ভাড়াটে ব্যবসায়ীদের নতুন ভবনের তিনতলা পর্যন্ত প্রদান করব। মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে ও আধুনিক ভবন নির্মাণ করতে সকলের সহযোগিতা চাই। এছাড়া
তিনি বলেন, রাজা ম্যানশন আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের প্রপিতামহ মরমী কবি দেওয়ান হাসন রাজার নামের শেষের অংশ যুক্ত করে আমার বাবা সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী ১৯৭৫ সালে ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে তিনতলা বিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণ করেন। অতি সামান্য ভাড়ায় ব্যবসায়ীদের বন্দোবস্ত করি। বর্তমানে আমি, আমার ভাই দেওয়ান শাহীন রাজা চৌধুরী ও চাচাতো ভাই দেওয়ান শাহবাজ রাজা চৌধুরী উত্তরাধিকারসূত্রে এই ভবনের মালিক হিসেবে ভোগ-দখল করে আসছি। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে আমরা সেই সময় থেকে কোনো ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করিনি। শমসের রাজা আক্ষেপ করে বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় তিনতলা ভবনের ১৮৭টি দোকান থেকে আমরা মাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ভাড়া পাই। অথচ এখনকার ব্যবসায়ীরা সাব-ভাড়া দিয়ে মাসে ২৫ লক্ষাধিক টাকা আদায় করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ভাড়াটে ব্যবসায়ীরা সাব-ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করলেও তা গোপন করে সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাজা পরিবারের এই সদস্য আরও বলেন, ২০১৬ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ভবনটি দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। বিষয়টি আমরা ব্যবসায়ীদের জানালে তারা ভবনটি সংস্কারের জন্য চাপ দেন। কিন্তু ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় আমরা ব্যবসায়ীদের ভবন খালি করার অনুরোধ করি। সেই থেকে ব্যবসায়ীরা আমাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে দোকানকোঠা ব্যবহার করে আসছেন। কেউ কেউ ভেতরে নিজেদের মতো নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। সম্প্রতি কয়েক দফায় ভূমিকম্পের পর রাজা ম্যানশন ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১০ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিশেষজ্ঞ দল ভবনটি পরীক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মতামত প্রদান করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতামত উপলক্ষে করে ভবনটি খুলে দেওয়া ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের অশনি সংকেত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন