শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এক যুগ ক্ষমতায় থাকলেও স্থবির আ.লীগের কার্যক্রম : বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে গতবারের মতো এবারও তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করছে সীমিত কর্মসূচির মাধ্যমে। টানা এক যুগ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে দলটি, তবে এখন ৭২ বছরের প্রাচীন এই আওয়ামী লীগ এবং সরকার একাকার হয়ে গেছে কিনা - আওয়ামী লীগের ভেতরেও এমন প্রশ্ন উঠছে।

দলের নেতাদের অনেকে বলেছেন, সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য হারিয়ে ফেলার কারণে তাদের দলীয় কর্মকান্ড এখন দিবস-ভিত্তিক কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব তা কতটা বিবেচনায় নিচ্ছে, দলটির মাঠ পর্যায়ে সেই প্রশ্নও রয়েছে।

স্থানীয় পর্যায়ে দলের মধ্যে প্রকট কোন্দল : সা¤প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত হয় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জাকে ঘিরে কর্মকান্ড। জনাব মির্জা এবং তার পাল্টা গ্রæপের মধ্যে কোন্দলের জেরে সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষ, অস্ত্রের ব্যবহার, হতাহতের ঘটনাও ঘটেছিল। এর পেছনে ক্ষমতা এবং গোষ্ঠীগত স্বার্থ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুধু কোম্পানীগঞ্জেই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলটিতে কোন্দল প্রকট হয়েছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে যে, দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার কারণে ‘কিছু পাওয়া না-পাওয়ার’ প্রশ্নে আওয়ামী লীগে স্বার্থের দ্ব›দ্ব বেড়েছে। ‘ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন’ : বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী জিনাত সোহানা চৌধুরী বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থ বা সুবিধা পাওয়ার প্রশ্ন যখন সামনে আসছে, তখন মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ‘নিস্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন’। তিনি আরো বলেছেন, সুবিধা পাওয়ার জন্য দলের বাইরে থেকেও অনেকে তাদের দলে আশ্রয় পাচ্ছেন। তারাই বেশি ক্ষতি করছে বলে তিনি মনে করেন।

‘বিভিন্ন সময় ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে বিভিন্ন দল থেকে যারা তাদের দল পরিবর্তন করে, এরকম কিছু সুবিধাবাদী মৌসুমী পাখির মতো লোকজন আমাদের দলে ঢোকার জন্য অপচেষ্টায় আছেন। তাদের অনেকে এ দলে এসেছেন’ - বলেন জিনাত হুদা চৌধুরী। তিনি উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার ছাত্রদলের একজন নেতার সেখানে ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার ঘটনা। ‘কিছু দিন আগে ছাত্রদলের একজন ছাত্রলীগেও পদ পেয়েছে। তাকে ছাত্রলীগ থেকে পরে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই জিনিসগুলো তো হচ্ছে’।

‘কিছু পাবার চেষ্টা’ : বভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ‘কিছু পাওয়ার চেষ্টায়’ ব্যস্ত রয়েছে তাদের দলের একটা অংশ। অনেক এলাকায় মন্ত্রী এবং এমপিকে ঘিরে একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তারা এলাকার উন্নয়নসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে দিবস পালন করা ছাড়া দলের সাংগঠনিক তৎপরতা সেরকম কিছু নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনাত হুদা ওয়াহিদ মনে করেন, প্রাচীন দলটি যে ক্ষতির মুখে পড়ছে-সেটা তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের বিবেচনায় নেয়া উচিত। ‘১২ বছর ধরে তো আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে। দল হিসাবে আওয়ামী লীগ কোন অবস্থায় আছে - সে প্রশ্নটি কিন্তু এখন উঠে যাচ্ছে। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, দলের যারা ডেডিকেটেড নেতা-কর্মী আছে, তাদের অনেকেই তো এখন প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে। অনেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন’ - বলেন জিনাত হুদা ওয়াহিদ।

‘প্রতিদ্ব›দ্বী নেই, তাই দল ও সরকার একাকার’ : বিশ্লেষকদের অনেকে আবার বলেছেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে অকার্যকর করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রবল দাপটের মুখে তাদের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপিও রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর হয়ে রয়েছে। সংসদে বিরোধীদল হিসাবে জাতীয় পার্টি থাকলেও তারা সরকারের অনুগত বলে মনে করা হয়। ফলে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের সামনে কোন চ্যালেঞ্জ নেই। সে কারণেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বলে মনে করেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। ‘সরকার এবং রাষ্ট্রে এই দল (আওয়ামী লীগ) বিলীন হয়ে গেছে। আর যেহেতু মাঠে কোন প্রবল প্রতিপক্ষ দৃশ্যমান নেই, ফলে বাইরে থেকেও কোন চ্যালেঞ্জ আসছে না’ - বলেন জনাব আহমদ।

তিনি আরো বলেন, ‘এখন রাষ্ট্রের সঙ্গে এবং অন্যান্য সামাজিক শক্তি যারা রাষ্ট্রে স্টেকহোল্ডার, তাদের সাথে একটা রসায়ন তৈরি করে আওয়ামী লীগ যেভাবে ক্ষমতায় আছে, এখানে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি হয়ে গেছে। এখানে আর জনগণ কেন্দ্রিক রাজনীতিটা নেই’।

বিভিন্ন সময় সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য তৈরির কথা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকেই বলা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। শেখ হাসিনা একইসাথে সরকার প্রধান এবং দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ নেতাদের অনেকে মন্ত্রী এবং দলের পদে রয়েছেন।

দলের নেতারা মনে করেন, কোন সঙ্কট নেই : তবে দল কোন সঙ্কটে পড়েছে এবং সরকার ও দল একাকার হয়ে গেছে-এসব বক্তব্য মানতে রাজি নয় দলটির নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, দলীয় সরকার হলে কোন পার্থক্য থাকার প্রয়োজন নেই বলে তারা মনে করেন। ‘দলীয় ব্যক্তিরা যখন এমপি হন, তখন তারা মন্ত্রী হবেন। সেই সরকার তো দলীয় সরকারই হবে’।

‘যেহেতু আমরা ১২ বছর ক্ষমতায়, সেজন্য আমাদের মধ্যে হয়তো নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণে কোন কোন জায়গায় কিছুটা দ্ব›দ্ব পরিলক্ষিত হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা কখনও ছিল না এবং এখনও নাই’- বলেন জনাব হানিফ।

আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে যাই বলুন - বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য নেই। তারা বলেন, প্রাচীন দল আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে এই সঙ্কট। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
মোঃ+দুলাল+মিয়া ২৫ জুন, ২০২১, ১২:৫৫ এএম says : 0
সময় আসলে সব দলই রাস্তায় আসবে,হয় নিরপক্ষে সরকার হয়ে নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতি বহাল থাকবে,যদি তাহা না মানতে চায় আওয়ামী লীগ সবাই রাসতায় নামবে এবং এই দরনের জোর জবরদস্তি সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল করা হবে। আবার সংবিধান সংশোধন আবার রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি চালু করবে জনগন,মাত্র সময়ে বেপার জনগণ এখন আর বোকা নয়,জনগন বুঝতে পেরেছে সংসদীয় পদ্ধতি দলীয় আমলা তন্ত্র নিজের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন এইটা কি হয়,যদি সংসদীয় পদ্ধতি থাকতে হয় তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকবে,তার পর যেই ক্ষমতায় আসবে জনগণ যাকে ভোট দিবে সেই সংসদ গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন,পতি পাঁচ বছর পর পর তাই হবে,নিজের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া নিজের বাহাদুরি দেখানে জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকা এই টি হবে না,জনগনকে বোকা বানাইয়া সংসদীয় পদ্ধতি করেছে ,আবার নিজের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন। এইটা কি জনগণ মেনে নিবে অসম্ভব ,এখন থেকে দেশের বিশিষ্ট জনেরা এবং বিশেজ্ঞরা ও রাজনৈতিক বিশ্লশকেরা এই বেপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ,বাকী আর দুই বসর রাজত্ব করতে পারবেন ,আর এই ভাবে নিজের হাতে ক্ষমতা রেখে ক্ষমতায় থেকে রাজত্ব করতে চান ,আপনাদের লজ্জা নাই যদি আপনারা ভালো হয়ে থাকেন জনগণ আপনাদের ভোট অবশ্যই দিবে আপনারা আপনারা বাঘ বগ এর কবিতার মতে শুরু করেছেন,রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বাতিল করে সংসদীয় পদ্ধতি করে এখন আর জনগণের দরকার নাই,গলা থেকে হাড় বাহিরের পরে এখন জনগণ কে বকশিশের নামে গাঢ় চিপাইয়া খাইতেছেন,আচ্ছা দেখি বাহাদুরি ক্ষমতা নিরপক্ষে সরকার কে দিন দেখবে জনগণ আপনাদের সাথে আছে কি না,জোর করে চাপা বাজি করেইননা বুকে সাহস থাকলে ক্ষমতা হাতে রেখে নির্বাচন করবেন না,নিজের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন দেওয়া এইটা আপনাদের কাছে কেমন লাগে ,জনগণের কাছে মনে হয় আপনাদের হায়া সরম নেই এগুলো যারা করে এদের কে আমরা (ওসতা )বলি যেমন আগের দিনে সুননাহ করতে (ওসতা)চোখ বন্ধ করে খাতনা করতেন।আপনাদের এই অবস্থা আচ্ছা দুই বসর রাজত্ব করেন,সংবিধান পাঁচ বসর জনগণ না চাইলেও আপনারা পাঁচ বছর শেষ করবেন ।
Total Reply(0)
Kafil Uddin ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৩ এএম says : 0
প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে আছে সরকার।আর নেতা কর্মিরা দুর্নীতিতে ব্যাস্ত। আর আমজনতা মাঝখানে পড়ে পিষ্ট যাঁতাকলে।
Total Reply(0)
MD Oli Ahmed ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৪ এএম says : 0
জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ এখন তাদের ভোট লাগে না।
Total Reply(0)
Abdul Ahad ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৫ এএম says : 0
দলের জন্য নেতাকর্মীদের তেমন দায়িত্ব এখন দেখা যায় না, নতুন কর্মী দলে নিতে চায় না, শুধু গ্রপিং করে, কর্মী বাড়াচ্ছে না, ভাগে কম পরবে বলে অথচ অনেক মানুষ এখনো আছে যাঁরা দল কে ভালোবাসেন অথচ তাঁদের কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, যে-মন বিএনপি ও এমন করেছিলো যাঁর কারণে বিএনপির কর্মীরা বিপদের সময় আসেনি, BNP নেতারা নিজেদের পেট ভরে রাখছে কর্মীদের অবহেলা করছে তা-ই আজ BNP ধ্বংস, সেই একি পথে হাঠছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি গাড়ী করে ফেলছে খুব আয়েসি জীবনে চলছে আর কর্মীগুলি সেই আগের মতোই আছে মিটিং মিছিল হলে ডাকে নয় তো কেউ ইজিবাইক চালাচ্ছে কেউ বাস চালাচ্ছে কেউ গার্মেন্টেসে কাজ করে খাচ্ছে সুযোগটা বেশী পাচ্ছে না দল থেকে।।
Total Reply(0)
Clear Man ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৫ এএম says : 0
এই সরকার সব আছে শুধু সাধারণ জনগণ নাই,,যা আছে ,দুর্নীতিবাজ আর চোর বাটপার।
Total Reply(0)
Ripon Tripura Babu ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৬ এএম says : 0
বর্তমানে দল চলছে, আত্মীয়, চাম্চা, হাইব্রিড, পাপীয়াদের নিয়েই, দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের দেখে কে? বর্তমানে ত্যাগী নেতার চাইতে ভোগী নেতার সংখ্যাই বেশী,
Total Reply(0)
Abdullah Al Maruf ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৬ এএম says : 0
বাংলাদেশ অনেক মহান অর্জন এই আওয়ামীলীগের হাত ধরেই এসেছে আবার অন্যদিকে বাংলাদেশকে অথর্ব ও গণতন্ত্রহীন করার জন্য এই আওয়ামীলীগ এককভাবে দায়ী!!
Total Reply(0)
Sheikh Muhammad Jewel ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৭ এএম says : 0
কিছু অতি উৎসাহী হাইব্রিড গোছের পাতি নেড়ি গোছের নেতা আওয়ামিলীগের যে ক্ষতি করেছে আগামী ২০-২৫ বছরে আওয়ামিলীগ তা পুষিয়ে নিতে পারবে না। ওদের কারনেই যারা সত্যিকারের আওয়ামিলীগের ত্যাগী নেতা ও আওয়ামিলীগ কে সত্যিকারেই ভালোবাসত তারা ধীরে ধীরে অভিমান করে দূরে সরে গেছে। অবশ্য আওয়ামিলীগের দুর্দিনে আবার এই ত্যাগীরাই সবার আগে সামনের লাইনে আসবে।
Total Reply(0)
MD Kiron ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৪৭ এএম says : 0
বর্তমান আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন