বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাদীস অস্বীকারকারীদের ফিতনা হতে বাঁচুন-৪

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২১, ১২:০৪ এএম

রাহমাতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস ভান্ডার সাহাবায়ে কেরামের জন্য যেমন হুজ্জত ও দলিল ছিল, তেমনি পৃথিবী বিলয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকল মুসলমানের জন্য তা’ হুজ্জত ও দলিল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এর কোনো অন্যথা হবে না। সুতরাং হাদীস শুধু সাহাবাদের জন্য হুজ্জত ছিল আমাদের জন্য নয় এমন মন্তব্যকারীরা মিথ্যাবাদী ও ভ্রান্ত। কেননা, উক্তরূপ মন্তব্যের ফলাফল এই দাঁড়ায়-(নাউজুবিল্লাহ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাবুওয়্যাত ও রিসালাত শুধু কেবল সাহাবায়ে কেরামের যুগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, পরবর্তী যুগের মানুষের জন্য নয়। তা একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ আল্লাহপাক স্বয়ং আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন : (ক) ‘হে মানবজাতি! অবশ্য আমি তোমাদের (মানব জাতির) সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল’। (সূরা আল আ’রাফ : ১৫৮)। (খ) (হে নবী) তোমাকে সকল মানুষের জন্য শুভ সংবাদ দানকারী ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি’। (সূরা সাবা : ২৮)। (গ) মহীয়ান সত্তা তাঁর প্রিয় বান্দাহর প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হন। (সূরা আল ফুরকান : ০১)।

(ঘ) পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের একটি দল আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। যারা তাদের বিরোধীতায় বা অপমানিত করার জন্য আত্মনিয়োগ করবে, তারা তাদের কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। এ অবস্থায় উপরই আল্লাহপাকের চরম নির্দেশ তথা কিয়ামত এসে যাবে’। (সহীহ মুসলিম :-২/ ১৪৩)।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস ভান্ডার ওই নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে অকাট্যভাবে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে, যে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য মাধ্যমে কোরআনুল কারীম পৌঁছেছে। সুতরাং যারা বলে হাদীস ভান্ডার আমাদের নিকট নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পৌঁছেনি, তাদের কথা সম্পূর্ণ ভুভুভভল ও মিথ্যা। এ ধরনের মন্তব্যে ও আকীদা যারা পোষণ করে তাদের কোরআনুল কারীমের উপর বিশ্বাস ও নির্ভরতা আছে কিনা তাতে প্রশ্নের উদয় হয়। (সহীহ মুসলিম : ২/১৪৩; ফাতহুলবারী শরহে বুখারী : ২/৪২)।

বস্তুত : কোরআনুল কারীম ও হাদীস ভান্ডার উভয়টিরই হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা গ্রহণ করেছেন। আল কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : ‘নিশ্চয়ই কোরআন আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর হেফাজত ও সংরক্ষণকারী’। (সূরা আল হিজর : ৯)। এই ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহপাক স্বয়ং আল কোরআনের হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী বা হাদীস সম্পর্কে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : ‘তোমাদের সঙ্গী (রাসূলুল্লাহ সা.) পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপদগামীও হননি এবং তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়, তা’ ওহী’। (সূরা নাজম : ২-৪)।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা.) যা বলেন, তা ওহী, অর্থাৎ ওহীয়ে গায়রে ‘মাতলু’। আল কোরআন ওহীয়ে মাতলু। আল কোরআন শব্দ এবং মর্ম দুটির সমষ্টির নাম। সুতরাং হাদীস কোরআনের মর্ম। এতে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, কোরআনুল কারীম ও হাদীস দু’টিরই হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেছেন। কেউ যদি বলে যে, আল্লাহপাক শুধু আল কোরআনের শব্দের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন, হাদীস ভান্ডারের হেফাজতের দায়িত্ব নেননি, এ কথা সঠিক নয়, বরং মিথ্যাচার।

এই বিশেষত্বটিকে আরো সহজ করে বলা যায় যে, আল কোরআন শব্দ ও অর্থ দুটির সমষ্টির নাম। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আল কোরআনের শব্দ ও অর্থ দুটিই হিফজের নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা, এটা নাবুওয়াতের দলিল। (আন নাফআতুল কুদসিয়্যাহ-৩০ ; আছারুত তানযিল : ১/২৪২)।

একবার হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে বললেন : তুমি একজন নির্বোধ লোক! তুমি কি আল্লাহর কিতাব কোরআনুল কারীমের কোথাও পেয়েছে যে জোহরের ফরয সালাত চার রাকাত। এটাও কি পেয়েছে যে, তাতে কিরাআত উচ্চস্বরে পড়তে হবে না। তারপর তিনি লোকটির নিকট সালাত, যাকাত ও অনুরূপ বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা তুলে ধরলেন। তারপর বললেন : তুমি কি আল্লাহর কিতাব বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ পেয়েছ? নিশ্চয়ই আল্লাহরবাণী সংক্ষিপ্ত। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস বা সুন্নাত হলো তার তাফসীর। (জামেউ বয়ানিল ইলম : ২/৩৬৫-৩৬৬)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Hasan Mohibul ২৫ জুন, ২০২১, ৬:১০ এএম says : 0
হাদীসের জ্ঞান ব্যতীত কোরআন মাজীদের জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব। হাদীসের জ্ঞান ব্যতীত কোরআন মাজীদের জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব যারা বলবে তারা জাহেল। রাসুল সাঃ বলেছেন যে,আমি তোমাদের কাছে দুইটি জিনিস রেখে গেলাম যতক্ষণ তোমরা তা অনুসরণ করবে পথভ্রষ্ট হবে না।
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ২৫ জুন, ২০২১, ৬:১০ এএম says : 0
কোরআনের সঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে হাদিসও দেওয়া হয়েছে, এই হাদিস যারা অস্বীকার করবে তারা কোরআনকে অস্বীকার করবে। আমরা কোরআন যে উৎস থেকে পেয়েছি, হাদিসও সে উৎস থেকে পেয়েছি
Total Reply(0)
Lokman Bin Harun ২৫ জুন, ২০২১, ৬:১১ এএম says : 0
আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর একটিও হাদিস যদি প্রমাণিত হয়, আর কেউ যদি সেটাকে অস্বীকার করে তবে সে কাফের হয়ে যাবে। এটা ওলামায়ে কেরামদের ঐকমত্যে সাব্যস্ত হয়েছে।
Total Reply(0)
Obaid Ullah ২৫ জুন, ২০২১, ৬:১১ এএম says : 0
হাদিস শরীয়াতের দলীল সরাসারি এই কথাকে অস্বীকার করা, হাদিসকে শরীয়তের অকাট্য প্রমাণ হিসাবে না মানা এবং তাকে অনুসরণযোগ্য মনে না করে ঠাট্টা, বিদ্রুপ করা- এটা একটা ভয়ানক গোমরাহি এবং ইসলামের বিকৃতির নামান্তর।
Total Reply(0)
Younus Foridy ২৫ জুন, ২০২১, ৬:১১ এএম says : 0
রাসুল [সা.]-এর হাদিস যে শরীআতের প্রমাণ এ কথা কুরআনের আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট বাণীর দ্বারা প্রমাণিত
Total Reply(0)
Ujjal Hasan ২৫ জুন, ২০২১, ৬:১১ এএম says : 0
বর্তমান সময়ের একটি বড় সমস্যা হলো ইনকারে হাদিস- হাদিস অস্বীকার করা। এই ফেতনা থেকে আল্লাহ রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ২৫ জুন, ২০২১, ৮:২৪ এএম says : 0
অনেকে বলে যা কুরানের সাথে মেলেনা তা মানবনা,তারা জাল হাদিস,সহিহ ,এ গুলো নিয়ে তর্ক করে,লক্ষ লক্ষ হাদিস থেকে মাত্র কিছু সহিহ, বাদ দেওয়া হাদিস তো তারাই বর্ননা করেছিলেন ।
Total Reply(0)
Dadhack ২৫ জুন, ২০২১, ৫:৫১ পিএম says : 0
হাদিস অস্বীকারকারী তারাতো মুরতাদ. তারা যদি তওবা করে ফিরে না আসে তবে তাদের শাস্তি হলো শরীয়ত অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড.....
Total Reply(0)
md zakir hossain ২৮ জুন, ২০২১, ৭:৪৫ এএম says : 0
quran and sunnah given by the rasul(sm).The full quran is the constition and the sunnah is the applied or practical.So it is very clear tropics.why we fight with hadith.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন