পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা
পঞ্চগড় শহরের তুলারডাঙ্গা এলাকায় প্রায় ৭ বছর আগে বয়স্কদের শিক্ষাদানের জন্য গড়ে ওঠে আয়েশা ঈশা কাশেম দাদা নামের বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র। প্রথমদিকে শিক্ষা কেন্দ্রটি ওই এলাকার নিরক্ষর বয়স্কদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠলেও কয়েক বছরের মাথায় প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জনির দুর্নীতি ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দাতার দেয়া লাখ লাখ টাকা লুটপাটের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটির পুরো কার্যক্রম। ফলে নিরক্ষর বয়স্কদের স্বাক্ষরতার আশা-নিরাশায় পরিণত হয়েছে। এদিকে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জনির বিরুদ্ধে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে এবং তার কুলখানির নামে অর্থ আদায়, সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে প্রতিষ্ঠানের অর্থ উত্তোলন, সভাপতি থাকা সত্ত্বেও নজরুল ইসলাম জনি তার স্ত্রীকে সভাপতি বানিয়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে দাতাদের দেয়া ১৫ লাখ টাকা গোপনে উত্তোলন, দাতা প্রতিষ্ঠানের দেয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ স্ত্রী ও নিজের নামে গোপন হিসেবে জমা করাসহ তার মা, ভাই, বোনকে নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন, নিজের নামে ভুয়া তথ্য দিয়ে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে আশার আলো নামে অনুরূপ আরেকটি এনজিওর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাতাদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ এনে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এনডিসি মো. মাসুদুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রকাশ, পঞ্চগড়ে নিরক্ষর বয়স্ক নারী-পুরুষদের জন্য ২০০৯ সালে জেলা শহরের তুলারডাঙ্গা এলাকায় স্থানীয় দু’জন নারী উদ্যোক্তা একটি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ওই শিক্ষা কেন্দ্রটির দায়িত্ব দেয়া হয় ওই এলাকার বেকার যুবক নজরুল ইসলাম জনিকে। প্রথম দিকে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম নিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হলে বিভিন্ন দাতা সংস্থা এগিয়ে আসে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রটির জন্য খাস জমি বরাদ্দ দেন। স্থানীয় প্রশাসন, পাকিস্তানি নাগরিক আয়েশা খান, বাংলাদেশের সমাজসেবক শাবানা আজমী, সেনাকল্যাণ সংস্থা, এপি কোম্পানি, লাইন এন্ড হোপসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় অল্প দিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। এ সময় এলাকার নিরক্ষর শতাধিক নারী-পুরুষ ভর্তি হয় কেন্দ্রটিতে। প্রথম দুই বছর ভালোভাবেই চলছিল ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। কিন্তু এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কবজা করতে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জনি কৌশলে মেধাবী শিক্ষকদের সরিয়ে দিয়ে নিজের মতো করে শিক্ষক নিয়োগ দেন। এমনকি বিভিন্ন দাতা সংস্থায় ৭০০ শিক্ষার্থীর ভুয়া তথ্য দিয়ে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে তা নিজে আত্মসাৎ করে। প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জনি তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তার স্ত্রী জেসমিন বেগম ও তার নিজের নামে ইসলামী ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকার কথা অকপটে স্বীকার করেন। পঞ্চগড়ে এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি সঠিক তদন্তের দাবি উঠেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন