শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

১৪ মাস ধরে পায়ে হেঁটে, গাড়িতে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন ভুটানের রাজা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২১, ৯:০১ পিএম | আপডেট : ৯:১৬ পিএম, ২৫ জুন, ২০২১

গত ১৪ মাস ধরে কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো গাড়িতে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে সাপ-জোঁকে ভরা দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে চলছেন হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। কারণ একটাই, প্রায় সাড়ে ৭ লাখ অধিবাসীর ছোট্ট দেশ ভুটানকে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না, তা তদারকি করা।

৪১ বছর বয়সী রাজার এই ভ্রমণের ফলাফলও চমকপ্রদ ও স্পষ্ট। হিমালয়ের পূর্বদিকে ভারত ও চীনের মাঝামাঝি অবস্থিত হলেও ভুটানে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ১!
'রাজা যখন মাইলের পর মাইল ভ্রমণ করেন এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মহামারি সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক করেন, তার কথা মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং সম্মান করে', বললেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

শেরিং রয়টার্সকে আরও বলেন, 'শ্রদ্ধেয় রাজার উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যবিধি জারির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তার উপস্থিতি মানুষকে বুঝিয়ে দেয়, মহামারির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে তারা একা নয়।'

শেরিং একজন পেশাদার ইউরোলজিস্ট। তিনি প্রায়ই ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জায়গাগুলোতে অক্সফোর্ড থেকে পাস করা রাজার ভ্রমণসঙ্গী হন। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আঘাতে তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে গত দুই মাসেই মৃত্যুহার দ্বিগুণের বেশি দাঁড়িয়েছে।

ভুটান সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয় ২০০৮ সালে; যেখানে রাজা তার সকল ক্ষমতা ত্যাগ করেন। কিন্তু রাজকীয় পরিবারের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার বিষয়টি এখনো দেশটির সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলে।

সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে রাজা দুর্গম অঞ্চলে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে পাঁচদিন ধরে পাহাড়ি পথ-জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে ১৪,২৫০ ফুট পথ পাড়ি দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সাক্ষাৎকারের জন্য আবেদন করা হলে রাজার কার্যালয় সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের পেজে তার করোনাকালীন এই ভ্রমণ ও কাজের ছবি পোস্ট করা হয়েছে।

রাজপ্রাসাদের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, 'আমাদের রাজার সবচেয়ে বড় ভয় এটাই, যদি মহামারি এখানে বনে আগুন ধরার মতো করে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমরা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব।'

দুই সন্তানের জনক এই রাজা প্রতিটি ভ্রমণ শেষেই রাজধানী থিম্পুর হোটেলে কোয়ারেন্টিন বিধি মেনে থেকেছেন। নিজের অধিকাংশ প্রজার মতো তিনিও ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভুটান প্রতিনিধি রুই পাওলো ডি জেসাস বলেন, 'রাজা সবগুলো ঝুকিপূর্ণ সীমান্তে গিয়েছেন এবং সব জায়গার কোভিড সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। নিজেদের সামান্য যা আছে, তা নিয়েই সেরা সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন।'

১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিদেশিদের জন্য নিষিদ্ধ থাকা রাষ্ট্র ভুটানে প্রতি ২০০০ জন মানুষের জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছে।

এই মুহূর্তে করোনা মহামারির জন্য আবারও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ভুটানের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে কিছু স্থানে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। কোভিড পরীক্ষাও এখনো চলছে দেশে।

প্রধানমন্ত্রী শেরিং জানিয়েছেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষকে ইতোমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দিয়েছে ভুটান। কিন্তু সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা বিভিন্ন ভ্যাকসিন সমন্বিতভাবে মিক্স-ম্যাচ করে প্রয়োগ করতে আগ্রহী।

প্রথম ডোজের ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময়সীমা রয়েছে। তাই ভুটান সরকার তাদের ঘাটতি মেটাতে নতুন চুক্তির পথ খুঁজছে। সূত্র: রয়টার্স

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন