শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডোপ টেস্ট পজেটিভ হলে সরকারি চাকরি নয়

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ডোপ টেস্টে পাজেটিভ হলে সরকারি চাকরি মিলবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন যে, সরকারি চাকরি পেতে হলে প্রত্যেককে ডোপ টেস্টের আওতায় আসতে হবে। মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরকার ডোপ টেস্টের ওপর জোর দিয়েছে। এই টেস্ট সর্বস্তরে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশজুড়ে মাদক যেভাবে সবশ্রেণীর মানুষকে গ্রাস করছে, যেকোনো উপায়ে তার প্রতিকার প্রয়োজন। এখন অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে শিশু বাদে সমাজের তরুণ, যুবকসহ সর্বস্তরের মানুষ মাদকের ছোবলে নীল হচ্ছে। সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের বিষয়টি এক্ষেত্রে সাধুবাদ যোগ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে মাদক নির্মূলের আর কোনো উপায় থাকবে না। সর্ষের মধ্যে ভুত থাকলে সে ভুত কোনোভাবেই তাড়ানো যায় না। ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের সবার আগে মাদকমুক্ত হওয়া বাঞ্চনীয়। চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তের ফলে অন্তত প্রশাসনকে মাদকমুক্ত করা যাবে। তবে শুধু সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদেরই এ টেস্ট করালে চলবে না, কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত ডোপ টেস্ট করা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ।

বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে সেসব দেশের প্রশাসন অনেকটাই মাদকমুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশে মাদকের ভয়াবহতা এতটাই বিস্তৃত যে, প্রশাসনের লোকজনও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। কয়েক মাস আগে পুলিশের মধ্যে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে প্রায় ৭০-৮০ জন পজেটিভ হওয়ার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মাদকাসক্ত এসব পুলিশ সদস্যর বিভিন্নভাবে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এ কথা এখন ওপেন সিক্রেট পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য মাদকাসক্তি ও মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন সময় তাদের সংশ্লিষ্টতার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই অভিযোগও রয়েছে, পুলিশের একটি শ্রেণীর সাথে মাদক চোরাকারবারিদের সখ্য রয়েছে। তারা পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে অবাধে মাদক চোরাচালান করে যাচ্ছে। একদিকে মাদকের অবাধ চোরাচালান, অন্যদিকে মাদক দিয়ে নিরীহদের ফাঁসানোর ঘটনা ঘটছে। রাজধানীসহ দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মাদকের বিস্তার ঘটেনি। পাড়া-মহল্লার অলিগলি থেকে শুরু করে সর্বত্র মাদক ছড়িয়ে আছে। মাদক এতটাই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে যে, হাত বাড়ালেই তা পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ভাল করে জানে কোন এলাকায় কারা মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতেই অর্ধশতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে, যেখানে অবাধে মাদক বিক্রি হয়। অথচ জানা থাকা সত্তে¡ও মাদক চোরাকারবারিদের নির্মূলে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কিছু মাদক ব্যবসায়ী বা বহনকারীদের গ্রেফতারের খবর শোনা যায়। তাদের অনেককে ক্রসফায়ারেও দেয়া হয়। তাতে মাদক চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। এই বন্ধ না হওয়ার পেছনের কারণ হচ্ছে, মাদক চোরাচালানের যারা গডফাদার তাদের টিকিটি ধরতে পারছে না পুলিশ। এর সাথে জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী মহল জড়িয়ে আছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বহু আগেই ঘোষণা করেছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার মাদক নির্মূলের কথা বলা হলেও তা গতি না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের মধ্যেই গলদ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, সকল অপরাধের উৎস মাদক। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হেন কোনো অপরাধ নেই যা মাদকের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে না। মাদকাসক্ত স্বামী-সন্তানের কারণে বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনও দেখা গেছে, মাদকাসক্ত সন্তানকে অভিভাবকরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আবার মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে পিতা-মাতা খুনের ঘটনাও অহরহ ঘটছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদকাসক্তদের শতকরা ৮০ ভাগই কিশোর ও তরুণ। এ এক ভয়াবহ চিত্র। এতে বোঝা যায়, দেশের আগামী প্রজন্ম মাদকের করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে গালভরা উন্নয়ন, এত মেগা প্রকল্প দিয়ে কী হবে? আগে ভবিষ্যত প্রজন্ম, তারপর অন্য কিছু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতেগোনা কিছু খুচরা মাদক ব্যবসায়ী, বহনকারি ও সেবনকারিদের ধরে মাদক নির্মূল করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এর মূল উৎসে যেতে হবে। মাদকের গডফাদার, আমদানিকারক, উৎপাদনকারিদের ধরে শাস্তি দিতে না পারলে এর বিস্তার ঠেকানো যাবে না। মাদকের বিস্তার কতটা হলে সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে হয়, সেটা সহজেই অনুমেয়। আমরা মনে করি, এটি যুগোপযোগী, কার্যকর একটি সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ। ডোপ টেস্ট সূচারুরূপে বাস্তবায়ন করা হলে সমাজে, বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে তার শুভ প্রভাব পড়বে। এই টেস্ট নিয়মিত করতে হবে। যারা একাধিকবার পজেটিভি হবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যত বড় কর্মকর্তা হোক না কেন মাদক পজেটিভি হলে তাদের ছাড় দেয়া যাবে না। এতে অনেকে মাদক থেকে দূরে থাকবে। মাদক নির্মূলে সরকারের যে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে, তা বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেশের সর্বত্র মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। এর সাথে যত বড় প্রভাবশালী জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদক নির্মূলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানই নয়, পাশাপাশি গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অভিভাবকদের তাদের সন্তানের দিকে তীক্ষè নজর দিতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সাথে মিশে-এ ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতে হবে। জনপ্রতিনিধি ও সমাজের অভিভাবক শ্রেণীকেও সচেতন হতে হবে। স্ব স্ব এলাকায় কারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নীতি- নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমাজের সর্বত্র সঞ্চারিত করতে হবে। ইসলামে মাদকসেবন হারাম। কেউ মাদকসেবন করলে সে আর মুমিন থাকে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Fakhrul Islam ২৮ জুন, ২০২১, ৪:৪৩ পিএম says : 0
For all services should be drug test.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন