নেইমার একবার বলেছিলেন, লিওনেল মেসির বাঁ পা ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ডান পা চাই তার। এই চাওয়া আসলে কল্পরাজ্যের চাওয়া। মেসির বাঁ পা ও রোনালদোর ডান পায়ের ঝলক দেখছে গোটা বিশ্ব। নেইমারের মতো তারকাও অমন দুটি পায়ের স্বপ্ন দেখবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। রোমেলু লুকাকু-ও এমন স্বপ্নবাজ। প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ছত্রখান করা রোনালদোর ড্রিবলিং-গুণ পেতে চান তিনি। এর পাশাপাশি তার খেলার বৈশিষ্ট্য থেকেও রোনালদো একটি কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন বলে মনে করেন বেলজিয়াম তারকা। কী সেটা? লুকাকুর শক্তি।
ইউরোর শেষ ষোলোর মঞ্চে সেভিয়ার লা কার্তুজায় বাংলাদেশ সময় আজ রাত একটায় শিরোপাধারী পর্তুগালের মুখোমুখি হবে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল বেলজিয়াম। স্বাভাবিকভাবেই এই ম্যাচে রোনালদো-লুকাকুর দ্বৈরথ দেখার আশায় আছেন অনেকে।ইউরোয় ৫ গোল নিয়ে পর্তুগিজ তারকা রোনালদো এর মধ্যেই সর্বোচ্চ গোলদাতা। ৩ গোল নিয়ে তার থেকে পিছিয়ে লুকাকু। ইতালিয়ান সিরি ‘আ’তে ক্লাব লড়াইয়ে রোনালদোর মুখোমুখি হওয়ায় খেলোয়াড় হিসেবে আরও উন্নতি করতে পেরেছেন বলে মনে করেন ইন্টার মিলান তারকা লুকাকু, ‘ব্যক্তিগতভাবে ধরলে হ্যাঁ, তা করেছে।’ সিরি ‘আ’তে সর্বশেষ মৌসুমে শিরোপা জয়ের উদাহরণ দিয়ে লুকাকু বলেন, ‘দল হিসেবে শিরোপা জেতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা তা করতে পেরেছি। বড় ম্যাচগুলোয় ভালো খেলেছি, মৌসুমটা অসাধারণ ছিল।’
জুভেন্টাসে খেলা রোনালদোর গোলক্ষুধা তার ৩৬ বছর বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়লেও ড্রিবলিংয়ের ধার আগের তুলনায় কমেছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকতে রাইট উইংয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ড্রিবলিংয়ে নাকানি-চুবানি খাইয়ে বক্সে ঢুকে পড়া সেই রোনালদোকে খেলার জায়গা বদলানোর কারণে এখন দেখা যায় খুব কমই। লুকাকু তবু রোনালদোর ড্রিবলিংয়ের গুণটা পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, ‘আমি তার ড্রিবলিংয়ের গুণটা পেতে চাই এবং যেভাবে বলে শট নেয়। সে হয়তো (শারীরিক) শক্তিটা চাইতে পারে।’
রোনালদো এবারের ইউরোয় দারুণ এক রেকর্ডের সামনে। আর মাত্র এক গোল করলেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন তিনি। ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের মধ্যে বড় টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতাও (২১) রোনালদো। এই বয়সেও তার ভালো করারক্ষুধা লুকাকুকে অবাক করে। জুভেন্টাসকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে না পারলেও গত লিগে সর্বোচ্চ গোল করেন রোনালদো। লুকাকু তার গোলক্ষুধা নিয়ে বলেন, ‘সংখ্যাগুলো দুর্দান্ত। যদি কেউ এসব রেকর্ড গড়তে পারে তাহলে সেটা সে-ই। তাকে কুর্নিশ জানাই। এখন তার বয়স কত, ৩৬? জুভেন্টাস চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার পর লোকে তার সমালোচনা করল। কিন্তু পরের ম্যাচেই সে হ্যাটট্রিক করল। লিগে এমন প্রেরণাদায়ক কেউ থাকলে আপনি তার মানের হতে চাইবেন, অন্তত যতটা কাছাকাছি যাওয়া যায়।’
তবে রোনালদোকে নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই রবের্তো মার্তিনেসের। কেবল পর্তুগিজ এই তারকাকে আটকাতে গেলে দলের বাকিরা সুযোগ নিতে পারে বলে সতর্ক বেলজিয়াম কোচ। তবে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে রক্ষণ অটুট রাখার পরিকল্পনা মার্তিনেসের। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, একজনকে বাড়তি গুরুত্ব না দিয়ে সবাইকে সমানভাবে দেখছেন তারা, ‘আমাদেরকে অবশ্যই রক্ষণে খুব ভালো করতে হবে। তবে নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে পরিকল্পনা করা হলে অন্যরা আঘাত হানতে পারে। অবশ্যই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এমন একজন খেলোয়াড় যে সঠিক সময়ে, সঠিক পাসে, সঠিক জায়গা খুঁজে নেয় এবং এজন্য সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সবাই জানি, সে বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন।’
এজন্য অন্যদের খাটো করে দেখার সুযোগ দেখছেন না এই স্প্যানিশ কোচ, ‘তবে আপনাকে বাকি ১০ খেলোয়াড়কেও সামলাতে হবে। পর্তুগাল যেভাবে খেলে, তাদের খেলায় সহজাত নৈপুণ্য ও বেশ গতি রয়েছে। পর্তুগালের একই ধরনের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছে এবং আমাদের আঁটসাঁট হতে হবে এবং জমাট থেকে দলগতভাবে রক্ষণ সামলাতে হবে। এই দল কেন সফল, কেন তারা ইউরো ও নেশন্স লিগ জিতেছে, এর কারণ, তারা অসাধারণ মানসিকতার এবং তারা জানে বড় ম্যাচ কীভাবে খেলতে হয়।’ পর্তুগালের প্রশংসার কমতি না রাখলেও বড় টুর্নামেন্টে বেলজিয়ামের এগিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে বলে মনে করেন মার্তিনেস, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর একটা দল, মোমেন্টাম আমাদের পক্ষে। কীভাবে উন্নতি করতে পারি এবং উপলক্ষটা কতটা উপভোগ করতে পারি আমরা তা দেখার অপেক্ষায়। দিন শেষে, যখন আমরা আমাদের ফুটবল উপভোগ করি তখন আমরা আমাদের সেরাটা খেলি।’
তার স্বাক্ষরও এবারের ইউরোয় রেখে চলেছে দলটি। গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচ জিতে নকআউট পর্বে উঠেছে বেলজিয়াম। পর্তুগাল এসেছে ছয় গ্রুপের চারটি তৃতীয় সেরা দলের একটি হয়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন