পৃথিবী তখন প্রথমবারের মতো দেখছে বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা। যুদ্ধের আগুনে জ্বলছে এশিয়া-আফ্রিকাসহ গোটা দুনিয়া। এই আগুন পৌঁছে গিয়েছে ইউরোপেও। জার্মান শক্তির মোকাবিলা করতে রীতিমতো ধরাশায়ী ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের যৌথ মিত্রশক্তি। ফ্রান্সের একদম উত্তর প্রান্তে আর্তোয়া শহরে পৌঁছে গিয়েছে দুর্ধর্ষ জার্মান সেনা। তাদের লক্ষ্য, বেলজিয়াম দিয়ে সরাসরি ফরাসিদের সীমানা প্রাচীর ভেদ করে ঢুকে পড়া। সেই একপেশে লড়াইয়ে মিত্রশক্তিকে নাকানিচুবানি দিয়েছিল জার্মানি। এই যুদ্ধে ফ্রান্স সীমান্তে মোতায়েন ব্রিটিশ সেনার কোনও অফিসার বেঁচে ফিরতে পারেননি। শুধু অফিসার নয়, এক তৃতীয়াংশ সেনাকেও মুখোমুখি লড়াইয়ে হত্যা করেছিল জার্মান সেনারা।
এরপর অ্যাডলফ হিটলারের নির্দেশে লন্ডন শহরের ওপর জার্মান বোমারু বিমানের হানা। ইংরেজদের শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়েছিলেন উইনস্টন চার্চিল। খেলার মাঠেও এই দুই প্রতিপক্ষ যখন মুখোমুখি, তখনই ফিরে আসে ইতিহাস। ফুটবল মাঠে ইংল্যান্ড বনাম জার্মানি মানেই আলাদা উত্তেজনা। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই চিরশত্রু। ইতিমধ্যেই মানসিক লড়াই শুরু করে দিয়েছে জার্মান শিবির।
কোচ জোয়াকিম লো জানিয়েছেন খেলা যেহেতু হবে লন্ডনে, তাই পুরো সমর্থনটাই থাকবে ইংলিশদের সঙ্গে। ফুটবলের দর্শক সমর্থন একটা দলকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। সেই সুবিধা পাবে ইংল্যান্ড। অল্পসংখ্যক দর্শক থাকবে জার্মানির। তাই এই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে অনেকটাই ফেভারিট মনে করেন জার্মান ম্যানেজার। ইংলিশ ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট অবশ্য এর পাল্টা কিছুই বলেননি। তবে ভেতর ভেতর কিমিচ, কাই, নাব্রি, হামেলসদের বিরুদ্ধে ট্যাকটিকস সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন ইংলিশ ম্যানেজার।
মাঠের লড়াইয়ে যেন বিশ্বযুদ্ধের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে এখন থেকেই। দুই চিরন্তন শত্রু বলে কথা! একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকবে ফুটবল বিশ্ব। জার্মানি শেষ ম্যাচে যেভাবে আটকে গিয়ে ড্র করেছিল হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে তাতে তাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা আবার প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড চেক রিপাবলিকের বিরুদ্ধে জিতে শীর্ষে থেকে নকআউটে উঠেছে। তাই মাঠের লড়াইয়ে কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও ছেড়ে দেবে না, এটা অনুমেয়।
এতো গেল কথার ও মনস্তাত্বিক লড়াইয়ের কথা। তবে মাঠের লড়াইয়ে জিততে হলে পারফর্ম করতে হবে মাঠেই। আর সে সমীকরণে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে হয় ইংল্যান্ডকে। চলতি আসরে ইংলিশরা যেখানে নকআউটে উঠেছে দাপট দেখিয়ে, সেখানে জার্মানরা উঠেছে কোনরকমে (বাদ পড়ারও শঙ্কা ছিল)। কিন্তু এখানেও একটি বিষয় কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে পারে ইংরেজ সমর্থকদের। তা হলো- গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের ম্যাচ। পুরো ম্যাচে দুর্বল দলটির বিপক্ষে তেমন কোন সুযোগই সৃষ্টি করতে পারেনি সাউথগেটের দল। সেখানেও একটি বিষয় ছিল গুরুত্ববহ। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটি দুই দেশের ফুটবলীয় ঐতিহ্য ও বৈরিতা। এ ম্যাচেও বর্তমান হিসেবে এগিয়ে থেকেও তাই একটি ভয় ব্রিটিশদের পেতেই হচ্ছে। নয়তো র্যাঙ্কিংয়ের চারে অবস্থান করা ইংল্যান্ডের জন্যতো ১২তম অবস্থানে থাকা জার্মানি তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষই!
জার্মানি
ইউরো কাপের অন্যতম সফল দল বলা চলে জার্মানিকে। এখনও পর্যন্ত তারা তিনবার (১৯৭২, ১৯৮০ ও ১৯৯৬) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৯২ ও ২০০৮ সালের ইউরো কাপে রানার্সআপ হয়েছিল জার্মানি। ১৯৮৮, ২০১২ ও ২০১৬ সালের ইউরো কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল থমাস মুলারের দল। শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ইউরো কাপে ৫২টি ম্যাচ খেলেছে জার্মানি। ২৭টি ম্যাচ জিতেছে, ১৩টি হেরেছে। ১২টি ম্যাচ ড্র করেছে জার্মানি। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত ৭৮টি গোল করেছে তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। ৫৩টি গোল জার্মানির বিরুদ্ধে করেছে প্রতিপক্ষ শিবির। ১৯৬০, ১৯৬৪ ও ১৯৬৮ সালের ইউরো কাপে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিল জার্মানি।
ইংল্যান্ড
ইউরো কাপে (এক সময়ের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ) মোট ৫বার নকআউট পর্বে উঠেছে ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্টের ১৯৬৮ সালের সংস্করণে তৃতীয় হয়েছিল ব্রিটিশ দল। ১৯৯৬ সালের ইউরো কাপের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ২০০৪ ও ২০১২ সালের ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল ব্রিটিশরা। ২০১৬ সালে রাউন্ড অফ সিক্সটিন থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ইউরো কাপে শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৪টি ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড। ১২টি ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি ১২টি হেরেছে। ১০টি ম্যাচ ড্র দিয়ে শেষ করেছে ইংল্যান্ড। ইউরো কাপে ৪২টি গোল করেছে ইংল্যান্ড। ৩৫টি গোল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দিয়েছে প্রতিপক্ষ দল। ১৯৬০, ১৯৬৪, ১৯৭২, ১৯৭৬, ১৯৮৪ ও ২০০৮ সালের ইউরো কাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি ইংল্যান্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন