শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লকডাউনে পোয়াবারো

মহাসড়কে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনার সংক্রমণরোধে সারাদেশে সীমিত আকারে বিধি-নিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাতে শুধুমাত্র রিকশা ছাড়া সব ধরণের গণপরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার জন্য মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসসহ সিটি সার্ভিস, সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পু, হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ। এই সুযোগে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক মহাসড়ক দখলে নিয়েছে। লকডাউনে নিষিদ্ধ এসব যানের পোয়াবারো। তবে চালকদের দাবি, মহাসড়কে ওঠার জন্য তাদেরকে বাড়তি চাঁদা গুণতে হচ্ছে। চাঁদার টাকা না পেলে একদিকে নেতারা মহাসড়ক থেকে রিকশা বা ইজিবাইক নামিয়ে দেয়, মারধর করে, পুলিশও চলতে বাধা দেয়।

সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও গণপরিবহনহীন রাজধানীতেও দৌরাত্ম্য দেখা গেছে এসব রিকশার। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে শুরু করে মেঘনা সেতু পর্যন্ত চলাচল করছে অর্ধশতাধিক ব্যটারিচালিত রিকশা। যাত্রী বুঝে ভাড়া হাঁকছে চালকরা। একা গেলে ভাড়া একটু কম। দুজন বা তার চেয়ে বেশি গেলে ভাড়া বেশি। আসলাম নামে মধ্য বয়সী এক চালক বলেন, লকডাউনে গাড়ি বন্ধ। ব্যাটারির রিকশার তাই কদর বেশি। মোটরে চলে বলে ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়ে বহুদূর যাওয়া যায় দাবি করে ওই চালক বলেন, ভাড়া দিলে আমার যেতে অসুবিধা নাই। রশিদ নামে একজন যাত্রী বলেন, তিনি সোনারগাঁও পর্যন্ত যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। ব্যাটারির রিকশাতে চারশ’ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। তিনশ’ পর্যন্ত বলেছেন কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছে না।

রিকশা ছাড়াও আরেক নিষিদ্ধ যান ইজিবাইকও চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। একেকটা বাইকে ১০জন করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। ভাড়া বাসের দ্বিগুণ। জানতে চাইলে একজন চালক বলেন, আগে ডেমরার ভিতরে বাইক চালাতাম। সোমবার থেকে মহাসড়কে উঠেছি। নেতারাই উঠতে বলেছেন। এজন্য বাড়তি চাঁদা দিতে হচ্ছে। কতো টাকা চাঁদা দেন জানতে চাইলে ওই চালক বলেন, পাড়া মহল্লার রুটে দিনে ৩শ’ দিলেই চলতো। এখন দিতে হচ্ছে ৬শ’ টাকা। এই টাকা না দিলে তো মহাসড়কে উঠতে দিবে না। পুলিশ জায়গায় জায়গায় আটকাবে। প্রথম দিন বুঝতি পারিনি বলে কয়েক জায়গায় ধরা খেয়েছি। এখন সব সিস্টেমে চলে এসেছে। লকডাউনে তো তাহলে আপনাদের পোয়াবারো? এমন মন্তব্যের জবাবে ওই চালক বলেন, আপাতত ভালই যাচ্ছে দিন। তবে শুনছি এক তারিখ থেকে সব কিছু বন্ধ করে দিবে। তখন এলাকার মধ্যে চলতে পারলেই হলো। তিনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, অবশ্য ডেমরার ভিতরে লকডাউন-ফকডাউন নাই। ওখানে কোনো কিছু বন্ধ হয় না। পুলিশকে ম্যানেজ করতে পারলে সবই চলে।

জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগে সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশাকে ফের অবৈধ ঘোষণা করে। এই খবরে মোটেও চিন্তিত নন এসব যানের মালিক ও চালকরা। বরং সরকারের এমন ঘোষণায় অনেকটা নড়েচড়ে বসে ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক এবং শ্রমিকরা। ঘোষণার পরদিন থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মিছিল মিটিং করে আসছে তারা। তবুও অবৈধ এসব পরিবহন যান বন্ধের বিষয়ে অনড় অবস্থানে সরকার। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে পুলিশ উল্টো তাদেরকে মহাসড়কে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ এসব রিকশায় ঢাকা মহানগরীও এখন সয়লাব। এমনকি অভিজাত এলাকাগুলোতেও ঢুকে পড়েছে এসব রিকশা। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ধানমন্ডির বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় যে, রাজধানীর অভিজাত এলাকার রাস্তা এখন ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে। এগুলো এতো বেশি গতিতে চলে যে প্রাইভেট কারের আগে যেতে চায়। এ কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একটা রাজধানী শহরে অবৈজ্ঞানিক যান চলে কিভাবে?

এদিকে, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলতে দেখা গেছে। পোস্তগোলা থেকে যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যাচ্ছে এসব নিষিদ্ধ যান। অন্যদিকে, লকডাউনে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী এসব যানবাহনে থেমে নেই চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম। মহাসড়কে চলাচলরত ছোট কিংবা বড়, ট্রাক কিংবা মিনিবাস, হাইজ বা মাক্রোবাস, ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকেও পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন চিহিৃত চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি চলছেই। এক প্রকার প্রকাশ্যেই তারা পরিবহন শ্রমিক ও চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর, মদনপুর ও ডেমরা এলাকার স্টাফ কোয়াটারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক, মহাসড়কে চলাচলরত সকল ছোট বড় যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে দুই শ থেকে পাঁচ শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। যদি কোনো পরিবহন চালক চাঁদাবাজদের চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন তাহলে তাদের সাথে অসদাচারণসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন চালকরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় গিয়ে কথা হয় এক পরিবহন মালিকের সাথে তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাইনবোর্ড এলাকায় অর্ধশতাধিক পরিবহন থেকে প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এ চাঁদার ভাগ পায় ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন চাঁদাবাজরা। এ এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী মোটরচালক লীগের মহানগর শাখার দায়িত্বে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী মোটরচালক লীগের সভাপতি মামুন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মাসুম মিয়া। চালকদের অভিযোগ, তারা ওই সংগঠনের ব্যানারে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে পরিবহনগুলো থেকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Billal Hosen ৩০ জুন, ২০২১, ৮:৫৭ এএম says : 0
ওরা গায়ে খেটে অটো রিকশা চালালে অভাইজ্ঞানিক হয়ে যায় আর যারা দুর্নীতি করে বড় হয় তারা কোন ভাইজ্ঞানিক? জাতির কাছে আমার প্রশ্ন ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন