মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দৌলতপুরে পদ্মার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

হুমকির মুখে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ৩টি ওয়ার্ডের মানুষ

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ২:৪৭ পিএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের প্রায় ৪ কি. মি. এলাকাজুড়ে পদ্মার ভাঙ্গনে কয়েক হাজার একর আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন খুঁটি ও ৩টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসীর দাবি ভাঙ্গনরোধে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদীতে আকষ্মিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া, ভুরকাপাড়া ও কোলদিয়াড় এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে অনেকের বসতবাড়ি ও কয়েক হাজার একর আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন খুটি, সরকারী বিভিন্ন স্থাপনা, ভুরকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নদীভরাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় কান্দিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদ, জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জুনিয়াদহ বাজারসহ অসংখ্য ঘর-বাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছেন ফসলি জমি ও বসতবাড়ি পদ্মা গর্ভে চলে যাওয়ায় তারা এখন সর্বশান্ত ও আশ্রয়হীন। পদ্মার ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।

পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ ৯নং ওয়ার্ডের হাটখোলাপাড়া এলাকার এলাকার হাসানুজ্জামান রাজা জানান, হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে প্রায় ৪ কি. মি. এলাকা জুড়ে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পদ্মার ভাঙ্গনে তার আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অচিরেই তাদের ঘর-বাড়ি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন বানাত আলী, জাহিদ হোসেন, খলিলুর রহমান, আব্দুল মজিদ ও রাকিব হোসেনসহ অনেকে। তাদের প্রত্যেকের আবাদী জমির উঠতি ফসল বাদাম সহ বিভিন্ন ধরনের ফসলি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে দিন-রাত কাটছে তাদের।

মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান, পদ্মা নদীতে এবছর আগাম পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙ্গনও তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী ভঙ্গনে তার ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া, ভুরকাপাড়া ও কোলদিয়াড় ৩টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার বিঘা আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এরআগে ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি হারিয়েছে অসংখ্য পরিবার। বর্তমানে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে ৩টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন খুটি, সরকারী স্থাপনা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এভাবে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে দৌলতপুরের মানচিত্র থেকে মরিচা ইউনিয়ন নিশ্চিহ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভাঙ্গরোধে সরকার বাহাদুরের কাছে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শাহ আলমগীর।
পদ্মা নদীর ভাঙ্গন কবলিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শ করে ভাঙ্গরোধে স্থায়ী সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিন। এসময় কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আ. ক. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ জানান, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনরোধে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ ও স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভাঙ্গন ঠেকাতে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে জিও ব্যাগ ফেলে তা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও ওইসব এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, পদ্মার ভাঙ্গন রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করে ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে আশ্বাস নয়, সর্বগ্রাসী পদ্মার করাল গ্রাস থেকে এলাকাবাসীকে বাঁচাতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, এমনটাই দাবি ভুক্তভোগীসহ পদ্মা পাড়ের অসহায় মানুষের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন