শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

জাটকা আহরণে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে মধ্যরাতে

ইলিশ সম্পদ সম্প্রসারণে ব্যাপক অবদান রাখবে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ৫:৪২ পিএম

পরিপক্কতা অর্জন সহ পূর্ণাঙ্গ ইলিশ সম্পদে পরিণত হতে দেশে জাটকা আহরণে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে আজ মধ্যরাতে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা বলবত হয়ে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যকর থাকছে। জাটকা আহরণে নিষেধাজ্ঞার এসময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত এবং মৎস্য বিভাগ নানা ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। পাশাপশি নৌবহিনী, কোষ্ট গার্ড, পুলিশ ও র‌্যাব সহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীও অভ্যন্তরীন নদ-নদী এবং উপক’লীয় এলাকায় যতটা সম্ভব নজরদারী করেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মতে এ গত ৮ মাসে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকায় প্রায় ৯ হাজারের মত অভিযান ছাড়াও দেড় সহশ্রাধীক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় অবৈধ মৎস্য আহরনের দায়ে ৮ শতাধীক জেলে ও মৎস্যজীবীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান করা ছাড়াও প্রায় ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৪শ টন আহরন নিষিদ্ধ জাটকা সহ বিভিন্ন অভয়াশ্রম থেকে আহরিত আরো প্রায় ৫০ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আটক করা হয়। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত প্রায় ১৬ লাখ মিটার কারেন্ট জাল সহ আরো প্রায় ৭ হাজারটি বেহুন্দি জাল ও বের জাল সহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জাল আটক করে ভ্রাম্যমান আদালত সহ মৎস্য অধিদপ্তরে আভিযানিক দল।

দেশে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ অন্যন্য ক্ষতিকর মৎস্য আাহরন উপকরনের সাহায্যে যে পরিমান জাটকা আহরন হয়, তার এক-দশমাংশ রক্ষা করা গেলেও বছরে আরো অন্তত ১ লাখ টন ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন। তবে নজরদারী বৃদ্ধির ফলে দেশে জাটকা’র উৎপাদন ২০১৫ সালে ৩৯,২৬৮ কোটি থেকে ২০১৭ সালে ৪২,২৭৪ কোটিতে উন্নীত হয়। যা পরবর্তি বছরগুলোতেও আনুপাতিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ইলিশের উৎপাদনও ২০০৮Ñ০৯ সালের ২.৯৮ লাখ টন থেকে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশে ইলিশের সহনীয় আহরন সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হবার আশা করছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগন।

মৎস্য অধিদপ্তরে মতে, জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এরও বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২%। সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৬০% এখন বাংলাদেশে উৎপাদন ও আহরিত হচ্ছে।
প্রতিদিন শ্রোতের বিপরিতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে সক্ষম অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপক’লের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে অশি^নের বড় পূর্ণিমায় মূক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হবার পরে ইলিশের লার্ভা, স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে বিচরন করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, নার্সারী ক্ষেত্রসমুহে ৭Ñ১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেব সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্কতা অর্জনে। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২Ñ১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই প্রজননক্ষম ইলিশ আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।

সমুদ্রে যাবার সময় পর্যন্ত যেসব এলাকায় ইলিশ পোনাÑজাটকা খাদ্য গ্রহন করে বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ নার্সারী ক্ষেত্র’ হিসেবে অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার এলাকা, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে ল²ীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার, মদনপুর থেকে ভোলার চর ইলিশা হয়ে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুুলিয়া নদীর ১শ কিলোমিটার এবং শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ নিম্ন পদ্মার ১২০ কিলোমিটার এলাকা এবং বরিশালের হিজলা, মেহদিগঞ্জ ও সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকার ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেব চিঞ্হিত করা হয়েছে। এসব অভয়াশ্রমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দু মাস করে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ থাকায় প্রতি বছরই আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।

পাশাপাশি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৯-এর ২৬জুন থেকে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজর্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
দক্ষিনাঞ্চল সহ উপক’লের ৬টি জেলায় জাটকা আহরনে নির্ভরশীল ৩২ হাজার ৭২ জন জেলেকে আহরন নিষিদ্ধকালীন সময়ে খাদ্য সহায়তা হিসেবে এবারো ফেব্রæয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত দু দফায় প্রায় ৩৪ হাজার ৬৫২ টন চাল বিনামূল্যে বিতরন করেছে সরকার । প্রতিটি জেলে পরিবার মাসে ৪০ কেজি করে এ চাল পেয়েছেন ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন