শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

লড়াইটা এখন ঊনিশ আর বিশের

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:২২ এএম, ২ জুলাই, ২০২১

২৪টি দলকে ৬ গ্রুপে ভাগ করে শুরু হয়েছিল ইউরো ২০২০ এবারের আসর। অনেক উত্থান-পতণের মধ্য দিয়ে এবারের আসর আজ থেকে প্রবেশ করছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ইউরোপ সেরার মুকুট তোলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে নেদারল্যান্ড-জার্মানির মতো দলের। এ দলে আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল ও রানার্সআপ দল ফ্রান্স। টিকে আছে ৮টি দল। যেখান থেকে প্রতিটি দলের জন্য শিরোপাছোঁয়া আর মাত্র তিন ধাপ দূরে। এ মিশন সামনে রেখেই স্পেনের মুখোমুখি হবে ফরাসি কিলার সুইজারল্যান্ড। আরেক ম্যাচে বেলজিয়াম খেলবে অপ্রতিরোধ্য ইতালির সাথে।

চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এবারের ইউরোর অন্যতম সেরা দল। কিন্তু অনেকেই বলছেন, এখন পর্যন্ত ইতালিকে সত্যিকার অর্থে কঠিন কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রিয়া। তারা কিছুটা পরীক্ষা নিলেও প্রাপ্য জয়টাই পেয়েছে রবার্তো মানচিনির দল। শেষ আটে এসে ‘কঠিন’ পরীক্ষাই দিতে হবে আজ্জুরিদের। তাদের সামনে যে রোমেলু লুকাকুদের বেলজিয়াম!
শেষ আটের হাইভোল্টেজ ম্যাচটিকে অনেকেই দেখছেন ইতালি বনাম লুকাকুর লড়াই হিসেবে। ইন্টার মিলানে খেলা বেলজিয়ামের অন্যতম সেরা এ তারকা যে প্রতিপক্ষকে খুব ভালোই চেনেন। ইতালির সিরি ‘আ’র সেরা খেলোয়াড় এ মৌসুমে তিনি। ইন্টারকে ১১ বছর পর এনে দিয়েছেন সিরি ‘আ’র শিরোপা। বেলজিয়ামের ইউরো কোয়ার্টার ফাইনালটি যদি ইতালি বনাম লুকাকু হয়ে ওঠে, তাহলে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইতালি উড়ছে। টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থেকে তারা পেছনে ফেলেছে নিজেদের ৮৩ বছর আগের রেকর্ড। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পর্তুগালের কাছে হারের পর ‘পরাজয়’ যেন ভুলেই গেছে তারা। কিন্তু এত কিছুর পরও এ রেকর্ড ফুটবলপ্রেমীদের পুরোপুরি নিশ্চিত হতে দিচ্ছে না যে, ইউরোতে তারাই সেরা দল। কারণ তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, ওয়েলস আর অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা ইতালির যে সত্যিকারের পরীক্ষাই হয়নি।
যে দলে লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইন, ইডেন হ্যাজার্ড, টোবি অল্ডারভাইরেল্ড, ইয়ানিক ফেইরা-কারাসকো, থরগান হ্যাজার্ড, এক্সেল উইতসেল, দ্রিস মের্তেন্সদের মতো ফুটবলার আছেন, তারা ইতালির কঠিন পরীক্ষা তো নেবেনই। ফিফা তালিকায় বিশ্বের এক নম্বর দল বেলজিয়াম। সে কারণে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য দারুণ একটা রাতই অপেক্ষা করছে।
অন্যদিকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বিদায় করে দিয়ে ৬৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বড় কোন টুর্নামেন্টের কোয়ার্টারের টিকিট পেয়েছে সুইজারল্যান্ড। আজ শেষ আটে স্পেনের বিপক্ষেও একই পথ অনুসরণ করার চেষ্টা করবে সুইসরা। যদিও ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে স্পেনের পক্ষেই।
ভ্লাদিমির পেটকোভিচের ফ্রান্সের বিপক্ষে দল দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ ১০ মিনিটে দুই গোল করে দারুনভাবে ম্যাচে ফিরে আসে। নির্ধারিত সময়ের ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হবার পর অতিরিক্ত সময়ে আর কোন গোল হয়নি। টাইব্রেকারে সুইসরা সবকটি শটে সফল হলেও ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ী নায়ক কিলিয়ান এমবাপের মিসে ফ্রান্সের কপাল পুড়ে।
এখন সুইসদের সামনে স্পেনের কঠিন বাঁধা। গ্রুপপর্বে ধীর গতিতে শুরু করার পরেও গত দুই ম্যাচে ১০ গোল করে স্প্যানিশরা রয়েছে অন্যরকম আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আলভারো মোরাতার গোলে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে শেষ ১৬‘র ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে ৫-৩ ব্যবধানে জয়ী হয়ে শেষ আটে পৌঁছে স্পেন। কিন্তু রেকর্ড চতুর্থবারের মত ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জিততে হলে স্পেনকে গ্রুপপর্বের ভুলগুলো অবশ্যই শোধরাতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য স্পেনের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ২২ বারের মোকাবেলায় স্প্যানিশরা মাত্র একবার পরাজিত হয়েছে। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সুইসদের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন স্পেন। ঐ দলের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এবারের ইউরো স্কোয়াডে টিকে রয়েছেন অধিনায়ক সার্জিও বাসুকয়েটস। এছাড়াও ২০১২ ইউরো শিরোপা জয়ী দলের দুই খেলোয়াড় হিসেবে বাসকুয়েটসের সাথে আরো রয়েছেন বার্সেলোনা মিডফিল্ডার জোর্দি আলবা।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটি ছিল ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে সুইজারল্যান্ডের প্রথম জয়। সর্বশেষ ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ড বড় কোন টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। কিন্তু শেষ আটের ঐ ম্যাচে অস্ট্রিয়ার কাছে ৭-৫ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটাই কোন ম্যাচের সর্বোচ্চ গোল। প্রায় অর্ধশতক পাড়ি দিয়ে সুইজারল্যান্ড এখন প্রথমবারের মত সেমিফাইনালে খেলার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া কোচ পেটকোভিচের অধীনে দারুন এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্পেনের মোকাবেলা করতে নামছে সুইসরা। যদিও নিষেধাজ্ঞার কারনে দলে থাকছেন না অধিনায়ক গ্রানিত জাকা।
শক্তির বিচারে দলগুলোকে হয়তো উনিশ-বিশ বা আরও কম-বেশি করা যেতে পারে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের মাপকাঠিতে সবাই সমান। জিতলে সেমি, হারলে বাড়ি। নীরবে প্রতিটি দলই যেন অন্য দলকে বলছে, ‘আসো, খেলা হবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন