শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতায় কঠোর লকডাউন

| প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

সরকার ঘোষিত সাতদিনের কঠোর লকডাউনের দুইদিন পার হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা গেছে, লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ইত্যাদি অসাধারণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। অন্য যেকোনো সময়ের লকডাউনের তুলনায় এবারের লকডাউন আক্ষরিক অর্থেই কঠোরভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে। যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে সফল হতে পারে, এবারের লকডাউন দেখে তা প্রতীয়মাণ হয়েছে। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। কঠোর এই লকডাউনে মানুষের মধ্যে আইনভাঙ্গার প্রবণতাও কম দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবকিছু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রথম দিন বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া এবং যথাযথ কারণ দেখাতে না পারায় ৭৫৫ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কাউকে বুঝিয়ে, কাউকে জরিমানা করে ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এতদিন লকডাউন কেবল নামে ছিল, বাস্তবে তা প্রতিপালিত হয়নি। এবার সরকারের সকল পক্ষ সক্রিয় ও কঠোর অবস্থান নেয়ায় প্রথমদিন থেকেই লকডাউনের আসল রূপ দেখা গেছে। এজন্য, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিকতা প্রণিধানযোগ্য। যেহেতু মূল কাজটি পুলিশকে করতে হয়, তাই তারা তাদের কাজটি যথাযথভাবে পালন করছে। এজন্য পুলিশের আইজিপি ও পুরো বাহিনী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তাদের আমরা মোবারকবাদ জানাই। অন্যান্য বাহিনীকেও অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।

দেশে বিগত দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে যেভাবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে কঠোর লাকডাউন দেয়া ছাড়া বিকল্প আর কিছু ছিল না। গত বৃহস্পতিবার এ যাবৎকালে রেকর্ড ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকেও সর্বোচ্চ। ৮৩০১ জন আক্রান্ত হয়েছে। আগের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সেসব স্থানে বেড, আইসিইউ ও অক্সিজেন সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা ও ফেনীতে অক্সিজেন সংকটে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, কঠোর ও জিরো টলারেন্সের লকডাউন দেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। অনন্যোপায় হয়েই সরকারকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, অন্য সময়ের মতো এবারের লকডাউনও অনেকটা ঢিলেঢালাই হবে। তা হয়নি। সরকার লকডাউনের পলিসি ও পরিকল্পনা করে দিয়েছে, তা আন্তরিকভাবে বাস্তবায়ন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আশা করা যায়, দেশব্যাপী সাতদিনের কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে করোনার ঊর্ধ্বমুখিতায় কিছুটা হলেও রাস টানা যাবে। এর মধ্যে সুখবর হচ্ছে, বিদেশ থেকে টিকা আসা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানার ২৫ লাখ এবং চীনের সিনোফার্মের ২০ লাখ টিকা আসছে। গতকাল রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মর্ডানার ২৫ লাখ টিকার মধ্যে ১২ লাখ এসেছে। আজ বাকি ১৩ লাখ টিকা আসবে। একই সঙ্গে সিনোফার্মের ১১ লাখ টিকা এসেছে। আজ ভোরে এসেছে ৯ লাখ ডোজ। এছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে টিকা আনার কার্যক্রম জোরোসোরে শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহ থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। লকডাউন ও গণটিকা প্রদান কার্যক্রম একসঙ্গে শুরু হলে আশা করা যায়, ঈদের আগে করোনা নিয়ন্ত্রণের সুফল পাওয়া যাবে। তবে কঠোর লকডাউনে দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ যে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের খাদ্যসংস্থান করা জরুরী। তা নাহলে, অনেকে বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসবে। বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় নেয়া দরকার। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন চলাকালে অনতিবিলম্বে দরিদ্রদের খাদ্যসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

আমরা আশা করি, এবারের লকডাউন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন করছে তা শেষ অবধি ধরে রাখবে। কোনো অবস্থাতেই শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। লকডাউনের পাশাপাশি অতি সত্বর গণটিকা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। টিকা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। সরকারকে সম্ভাব্য সব উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ অব্যাহত রাখতে হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, যত অর্থ লাগুক টিকা সংগ্রহ করা হবে। তাঁর এই দৃঢ়তা থেকে আমরা আশাবাদী, টিকা সংগ্রহ এবং প্রদানের কাজটি বেগবান হবে। চলমান লকডাউন বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। কষ্ট হলেও কিছু সময় ধৈর্য ধরে করোনার ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে বের হলেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dadhack ৩ জুলাই, ২০২১, ৫:৪০ পিএম says : 0
লকডাউন দিলেতো প্রধানমন্ত্রী আমলা গামলা তাদের তো কোন অসুবিধা হবে না অসুবিধা হচ্ছে তো আমাদের মতো মানুষদের আমরা যারা মধ্যবিত্ত ছিলাম এখন আমরা হয়ে গেছি ফকির আজকে মানুষের খাওয়া নাই কি করে খাবে সরকার তো সব টাকা মেরে খেয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে...উন্নত বিশ্বে সরকার যারা গরিব মানুষ তাদের সবাইকে পয়সা দিয়েছে যাতে তারা না খেয়ে মারা যায়.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন