শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আয়াতুল কুরসী : আমল ও ফজিলত-১

মাওলালা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

আয়াতুল কুরসী। এই মোবারক আয়াত দিনে-রাতে বারবার পড়ার নির্দেশনা হাদীস শরীফে আছে। মুমিনের কর্তব্য, এই পবিত্র আয়াতকে প্রতিদিনের অজিফা বানিয়ে নেয়া। হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.)বলেছেন : প্রতি ফরয নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ী : ১০০)। এই হাদীস শরীফ থেকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পড়ার নির্দেশনা পাওয়া গেল।

শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়া প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে এক আশ্চর্য ঘটনা বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.)আমাকে রমজানে যাকাত (সাদাকাতুল ফিতরের খেজুর) দেখা-শোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। (রাতে) এক আগন্তুক এসে সেই (স্তূপিকৃত) খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে হাজির করব। সে বলল, দেখুন, আমি এক অভাবী, প্রয়োজনগ্রস্ত ও পরিবারের ভারগ্রস্ত লোক! আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকালে নবী (সা.) বললেন, আবু হুরায়রা! তোমার গত রাতের বন্দির কী হাল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার অভাব-অনটন ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলায় আমার দয়া জেগেছে। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি! নবী (সা.) বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে; সে আবারো আসবে।

ফলে আমার জানা হয়ে গেল, রাসূল (সা.) যখন বলেছেন আসবে, অবশ্যই সে আসবে। আমি তার অপেক্ষায় প্রস্তুত হয়ে রইলাম। ইতিমধ্যে সে এসে সেই স্তূপিকৃত খাদ্যবস্তু থেকে মুঠি ভরে নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, তোমাকে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর কাছে হাযির করবই। সে তখন বলতে লাগল, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তো অভাবী লোক, পরিবারের ভারগ্রস্ত, আর আসব না।

তার এ কথায় আমার দয়া হলো। ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার বন্দির কী খবর? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার প্রচণ্ড অভাবগ্রস্ততা ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলছিল, তাই আমার দয়া হয়েছে, তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, দেখ, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আবারো আসবে।
তাঁর এ কথায় তৃতীয় রাতেও আমি অপেক্ষায় রইলাম। একপর্যায়ে সে এসে মুঠি ভরে খাদ্য নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেলি এবং বলি, এবার তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাযির করেই ছাড়ব। এ নিয়ে তিনবার ঘটল যে, তুমি বল, আসবে না, কিন্তু আবারো আস। সে তখন বলল, আমাকে ছেড়ে দিন।

আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত করবেন। বললাম, কী সেই কথা? সে বলল, যখন বিছানায় যাবেন তখন আয়াতুল কুরসী পড়বেনÑ ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত আপনার জন্য একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে ভিড়বে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, গত রাতে তোমার বন্দি কী করল? বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে বলল যে, আমাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।

জিজ্ঞাসা করলেন, সে কথাগুলো কী? বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। সে বলল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত তোমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর (সকাল পর্যন্ত) কোনো শয়তান তোমার কাছে ভিড়বে না। সাহাবীগণ তো কল্যাণের ব্যাপারে খুবই লালায়িত ছিলেন। নবী (সা.) বললেন : শোন, সে তোমাকে সত্যই বলেছে, যদিও সে ডাহা মিথ্যুক। এরপর বললেন, আবু হুরায়রা! তুমি কি জান পরপর তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? তিনি বললেন, না। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন : সে ছিল এক শয়তান। (সহীহ বুখারী : ২৩১১)।

এই হাদীস থেকে শয়তানের বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য বিষয়েও অনেক কিছু জানা যায়। যেমন যেসকল খাদ্যবস্তু দ্বারা সদাকাতুল ফিতর আদায় করা যায় (খেজুর, যব, পনির, কিশমিশ, গম) ইত্যাদি ঈদের দিনের আগে সংগ্রহ করা এবং কাউকে তা সংরক্ষণ ও বণ্টনের দায়িত্ব দেয়ার বৈধতা। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, রাতে শোবার সময় আয়াতুল কুরসী পাঠের সুফল ও ফযীলত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
N. A. Shamim ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৮ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তৌফক দানকর (আমিন)
Total Reply(0)
Mir Irfan Hossain ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৯ এএম says : 0
পবিত্র আল কোরআনকে মহান আল্লাহ মানব জাতির হিদায়াত ও জীবন বিধান হিসেবে নাজিল করেছেন
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:২০ এএম says : 0
সুরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াত হলো আয়াতুল কুরসী। এ আয়াতটিতে ১০টি বাক্য রয়েছে। যার প্রত্যেকটিতে আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে মানব জাতির অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, বিভিন্ন বিপদ আপদ থেকে বাঁচা যায়।
Total Reply(0)
MD FOKHRUL ISLAM ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:২১ এএম says : 0
মুসলিম সমাজে আয়াতুল কুরসি নিয়ে আরেকটি কথা প্রচলিত আছে, তাহলো কোথাও যাওয়ার পূর্বে আয়াতুল কুরসি পড়ে বের হলে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
Total Reply(0)
Nazera Zahir Chowdhury ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:২১ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে বিশেষ বিশেষ কিছু আয়াত ও সূরা রয়েছে, যা খুবই ফজিলতপূর্ণ। তন্মধ্যে আয়াতুল কুরসি অন্যতম।
Total Reply(0)
Jahangir Alam ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:২১ এএম says : 0
নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠে দুষ্টু জিনদের কবল থেকে হেফাজতে থাকা যায়
Total Reply(0)
Zahangir Khan ৩ জুলাই, ২০২১, ৮:৩২ এএম says : 0
Allah... gives us the grace to act (Amen)
Total Reply(0)
Ashaduzzaman(Nur) ৩ জুলাই, ২০২১, ১:২০ পিএম says : 0
This is called AL- Quran.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন