শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আয়াতুল কুরসী : আমল ও ফজিলত-২

মাওলালা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত, তাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিলো।

তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন্ জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিলো। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরো বলল, জিনেরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সূরা বাকারার এই আয়াতটি- ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’।

যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী (সা.)বললেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহ ইবনে হিব্বান : ৭৮৪)।

গত আলোচনা ও আজকের আলোচনার দুই ঘটনায় নবী (সা.) এর সমর্থনসূচক উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দুবৃর্ত্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আয়াতের আমল কত ফলপ্রসূ। এ পর্যন্ত আয়াতুল কুরসীর ফজিলত সংক্রান্ত মোট তিনটি হাদীস উল্লিখিত হয়েছে। এই হাদীসগুলো থেকে প্রতিদিন আটবার এই আয়াত পাঠ করার নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে- সকাল-সন্ধ্যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর ও শোওয়ার সময়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কেউ যদি এই মোবারক আয়াতের অর্থ-মর্ম স্মরণ রেখে উপলব্ধির সাথে তা পাঠ করে তাহলে তা তার জন্য অত্যন্ত বরকতের বিষয় হবে।

কোরআন মাজীদের তিলাওয়াত যেহেতু একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত তাই অর্থ না বুঝলেও তা অর্থহীন নয়। অর্থ না বুঝলেও তিলাওয়াতের সওয়াব অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু এই মাসআলার অর্থ কিছুতেই এই নয় যে, কোরআন মাজীদের অর্থ বোঝার চেষ্টা না-করা কাম্য বা অর্থ বোঝার চেয়ে অর্থ না-বোঝাই শ্রেষ্ঠ! কোরআন মাজীদের বহু আয়াতে এই মোবারক কালামের অর্থ-মর্ম বোঝার এবং গভীর অভিনিবেশ সহকারে তা পাঠ করার নির্দেশ আছে। তাই কোরআন মাজীদের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিক্ষার মতো কোরআনে কারীমের অর্থ-মর্ম বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা এবং চিন্তা-ভাবনার সাথে তা তিলাওয়াত করা কাম্য।

এতে যেমন মুমিনের জ্ঞান ও ঈমান বৃদ্ধি পায় তেমনি তার মন-মস্তিষ্ক, আত্মা ও হৃদয় কোরআনের নূরে নূরানী হয়ে ওঠে। কোরআনে কারীমের একটি আয়াত- আয়াতুল কুরসীর অর্থ-মর্ম সম্পর্কেও আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব, কী স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন ভাষায়, কী অসাধারণ প্রতাপান্বিত উপস্থাপনায় এ আয়াতে মহান আল্লাহর পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার মা‘রিফাত ও পরিচয় লাভের চেয়ে বড় জিনিস মানুষের জন্য আর কী হতে পারে? এই জ্ঞানই তো সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান, আর এ বিষয়ে অজ্ঞতাই সবচেয়ে ভয়াবহ অজ্ঞতা।

যে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে তার কাছে তার নিজ সত্তার, তার চারপাশের সৃষ্টিজগতের এবং এখানে ঘটে চলা সকল ঘটনার সূত্র স্পষ্ট হয়ে যায়। জীবন-মৃত্যুর তাৎপর্য বোঝা সহজ হয়ে যায়। জীবনের লক্ষ্য নিখুঁতভাবে জানার এবং সেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার সকল পথ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা জেগে ওঠে। এভাবে আল্লাহর স্মরণ ও পরিচয় মানুষকে দান করে তার আত্মপরিচয়। তাকে সচেতন করে তার নিজের লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে।

আল্লামা ইবনে কাছীর রাহ.-এর বক্তব্য অনুসারে এই মহিমান্বিত আয়াতে দশটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাক্য রয়েছে। এই দশ বাক্যের মূল বিষয়বস্তু, তাওহীদ। আল্লাহ তাআলার মহান গুণাবলি এ আয়াতে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তা উপলব্ধি করার পর মুমিনের সর্বসত্তা থেকে ঐ পরম সত্যের ঘোষণাই উৎসারিত হয়, যার মাধ্যমে এই মহিমান্বিত আয়াতের সূচনা- ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হু’ আল্লাহ- তিনি ছাড়া কোনো মা‘বুদ নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন ৪ জুলাই, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এমন ফজিলতপূর্ণ কিতাব, যার প্রতিটি অক্ষর পাঠে আছে সওয়াব। তবে কোরআনের বেশ কিছু আয়াত ও সুরা এমন আছে, যেগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্যের কথা রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষভাবে ইরশাদ করেছেন। এমনই একটি আয়াতের নাম ‘আয়াতুল কুরসি’।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ৪ জুলাই, ২০২১, ১:৫৯ এএম says : 0
নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠে দুষ্টু জিনদের কবল থেকে হেফাজতে থাকা যায় বলে হাদিসে বর্ণনা এসেছে
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ৪ জুলাই, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো- ‘আয়াতুল কুরসি’।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ৪ জুলাই, ২০২১, ২:০০ এএম says : 0
অন্য একটি হাদিসে আবু ইমামা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তাকে মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু বেহেশতে যেতে বাধা দেয় না।
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ৪ জুলাই, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের নিয়মিত আমল করার তৌফিক দিন। আমিন
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৪ জুলাই, ২০২১, ২:০২ এএম says : 0
মুসলিম সমাজে আয়াতুল কুরসি নিয়ে আরেকটি কথা প্রচলিত আছে, তাহলো কোথাও যাওয়ার পূর্বে আয়াতুল কুরসি পড়ে বের হলে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন