শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দেবিদ্বারে টুং টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ৮:১৩ পিএম

কুমিল্লার দেবিদ্বারে টুং টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা, ছবিটি ফতেহাবাদ গ্রামের কামার পট্টি থেকে তোলা।


কুমিল্লার দেবিদ্বারে টুং টাং শব্দেই যেন জানান দিচ্ছে আর কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস সাইজ করতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ এবং প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এ উপকরণ তৈরি ও শান বা লবন-পানি দেয়ার কাজে প্রয়োজন কামারদের। পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই মানুষ কামারপাড়ায় ঢু-মারছেন। আবার কেউ কেউ পুরানো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন।

প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানায় কার্মকাররা। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠে এ শিল্প। শান দেয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। ভিতরে চলছে কাজ। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখে মুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। তবু থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কাজের ব্যস্ততা।

ঈদুল-আজহা সামনে রেখে উপজেলার কামার দোকানগুলিতে মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছে কর্মকাররা। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। পৌর এলাকার পুরাতন বাজার, ফতেহাবাদ, পোনরা ও বারেরা বাজারসহ ইউনিয়নগুলির বড় প্রতিটি বাজারেই আছে কামারের দোকান। তবে উপজেলার মধ্যে একমাত্র ফতেহাবাাদেই আছে প্রায় দশটি কামারশালার একটি কামার পল্লি। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সেখানে লোহা আর হাতুড়ির শব্দে এখন আকাশ-বাতাস মুখরিত। এ পেশার মানুষ সারা বছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ।

কামাররা জানায়, দা আকৃতি ও লোহাভেদে ২০০ থেকে ৫০০টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি প্রতিটি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং পুরানো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবন-পানি দিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত করোনার প্রভাবে এবং লকডাউনের বিধি নিষেধে অনিশ্চিত বাজার নিয়ে শংকার মধ্য দিয়েই কাজ করছে বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী জাত পেশার কারিগর কর্মকাররা।

দেবিদ্বার পৌর এলাকার ফতেহাবাদ গ্রামের শের আলী কর্মকার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিন-রাত কাজ করেও অবসর পাওয়া যায় না।

পোনরা বাজারের মনিরঞ্জন কর্মকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করছি। ঈদকে সামনে রেখে পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালই থাকে। তবে করোনার প্রভাবে এখনো পর্যন্ত সেই রকম কাজের চাপ না থাকলেও আশা করছি চাহিদা আরো বাড়বে। আগে এই সময়টা থেকেই চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হতো। কারিগররা আরো জানায়, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন