শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

দাজ্জালের আগমন ও তার আস্ফালন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

কিয়ামতের বড় নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি নিদর্শন হলো দাজ্জালের আগমন ও তার ধ্বংস হওয়া। হাদীসের কিতাবসমূহে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে দাজ্জালের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেক নবীই তাঁর উম্মতগণকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) দাজ্জালের কতিপয় চিহ্ন বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসে মুতাওয়াতির ও উম্মতে মোহাম্মাদীর ‘ইজমা’ বা ঐক্যমত্য দ্বারা দাজ্জালের বিষয়টি প্রমাণিত।

এ পর্যায়ে ‘দাজ্জাল’ শব্দের আভিধানিক ও ব্যবহারিক অর্থ জানা একান্ত দরকার। নিম্নে এর বিশদ আলোচনা সন্নিবেশ করা হলো (ক) ‘দাজ্জাল’ শব্দের অভিধানগত অর্থ প্রতারক, মিথ্যাবাদী, সত্য মিথ্যার মিশ্রণকারী। অভিধানের এ দৃষ্টিকোণ থেকে উপরোল্লিখিত বিশেষণযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে দাজ্জাল বলা যেতে পারে।

(খ) ‘দাজ্জালুন’ শব্দের মূল অর্থ হলো মিশ্রিত করা। যেমন কোনো বস্তু মিশ্রিত ও খলত-মলত হলে আরবিতে ‘দাজ্জালা’ বলা হয়। এখানে দাজ্জাল বলতে মিথ্যাবাদী ও একচোখ কানা ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। সে মিথ্যা ও যাদুকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করে দিবে। (লিসানুল আরব : ১২/২৮৪-২৮৫)। (গ) দাজ্জাল অর্থ মিথ্যাবাদী। হাদীস শরীফে উক্ত হয়েছে : আপনি কি জানেন দাজ্জাল কি? দাজ্জাল হলো পথ ভ্রষ্টতা, কুফর ও ফিতনার উৎস। নবীগণ উম্মতদেরকে তাঁর সম্পর্কে সচেতন করেছেন ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন।

(ঘ) কেউ কেউ বলেন : দাজ্জাল যেহেতু মানুষের সামনে সত্য মিথ্যার মিশ্রণ ঘটাবে, তাই দাজ্জাল নাম তার জন্য নির্ধারিত। (ঙ) আবার কারো মতে ‘দাজলুন’ শব্দ হতে দাজ্জাল শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ সুদক্ষ মিশ্রণকারী। সে দক্ষতার সাথে মিথ্যা ও যাদুর সাথে সত্যকে মিশ্রিত করে দিবে। (শরহে আকিদায়ে সিফারানিয়্যাহ : ২/৮৬, ৯৯)।
মোট কথা দাজ্জাল হলো এক বিশেষ কাফির ব্যক্তি। হাদীসসমূহে বিশ^াস ও নির্ভরতার সাথে যার আলোচনা বর্তমান। এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি হলো এই যে, সে ইয়াহুদী বংশোদ্ভূত হবে। সে খোদা হওয়ার দাবি করবে। তার দু’চোখের মাঝে কাফ্, ফা, রা, অর্থাৎ কাফির বা কুফর লেখা থাকবে। তার ডান চক্ষু দৃষ্টিহীন হবে। তার ডান চোখে আঙ্গুরের ন্যায় উঠন্ত দানার মতো থাকবে। ভূপৃষ্ঠে সে চল্লিশ দিন বিচরণ করবে।

তবে সে চল্লিশ দিনের প্রথম দিনটি এক বছরের সমান লম্বা হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের সমান হবে। তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের সমপরিমাণ দৈর্ঘ হবে। বান্দাহগণকে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তার হাতে বিভিন্ন অলৌকিক বিষয় ও যাদুর কারিশমা প্রকাশ করবেন। সে মানুষকে হত্যা করে আবার জীবিত করবে। আসমান তার নির্দেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। সে ভূমিকে নির্দেশ দিলে ভূমি উদ্ভিদ, ফল-ফসল উদগিরণ করবে।

জনবসতিহীন, বিরাম স্থান দিয়ে গমনকালে সে স্থানের প্রতি সে নির্দেশ দিবে : তুমি তোমার গোপন সম্পদের ভাণ্ডার বের করে দাও। ভূমি তার সুপ্ত ভাণ্ডার বের করে দিবে। অতঃপর সম্পদের সে ভাণ্ডার মধু মক্ষিকার মতো তার পেছনে পেছনে গমন করতে থাকবে। এভাবে চলতে চলতে দাজ্জাল পূরা ভূপৃষ্ঠ মন্থন করে ছাড়বে। কেবল মক্কা-মদীনা ছাড়া পৃথিবীর এমন কোনো শহর নগর থাকবে না, যেখানে দাজ্জালের পদচারণা হবে না। শুধুমাত্র উক্ত দুটি নগরে ফিরিশতাদের প্রহরা থাকার কারণে সে প্রবেশ করতে পারবে না।

বস্তুত : দাজ্জালের ফিতনা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফিতনা হিসেবে বিবেচিত হবে। দাজ্জাল সম্পর্কে হযরত কাতাদাহ (রা.) বলেন; হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) আমাদেরকে হাদীস শুনিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : দাজ্জালের দু’চোখের মাঝে কাফ-ফা-রা অর্থাৎ কাফির লেখা থাকবে। (সহীহ মুসলিম-২/৪০০)।

বর্তমান সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে দাজ্জালের আগমন ঘটবে। প্রথমে সে নবুওয়তের দাবি করবে। সেখান হতে সে ইস্পাহান যাবে। ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইয়াহুদী তার অনুসারী ও অনুগামী হয়ে যাবে। এবার সে নিজের দল ভারী হয়ে গেছে বলে মনে করবে এবং তার পর সে খোদা বলে দাবী করতে থাকবে। সে নিজের বিশাল বাহিনী সঙ্গে করে ভূপৃষ্ঠে ফিতনা ও অশান্তি সৃষ্টি করবে। অনেক পথভ্রষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও রাষ্ট্র-শক্তি তার সাথী ও সহযোগী হয়ে যাবে। আল্লাহপাক দাজ্জালের ফিতনা হতে ঈমানদারগণকে হেফাজত করুন, আমিন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
নুরজাহান ৭ জুলাই, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
আল্লাহপাক দাজ্জালের ফিতনা হতে ঈমানদারগণকে হেফাজত করুন, আমিন
Total Reply(0)
MD Ratul Hasan ৭ জুলাই, ২০২১, ৩:১২ এএম says : 0
রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন যে, মান ছামিয়া বিদ দাজ্জাল ফালইয়ানা আনহু ফা ওল্লাহি ইন্নার রাজুলা লি ইয়াতিহি ওয়া হুয়া ইয়াহছিবু আন্নাহু মুমিনুন ফা ইয়াত্তাবাহু মিম্মা ইয়াবআছু বিহী মিনাশ শুবহাতি। অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি দাজ্জাল সম্পর্কে শুনবে সে যেন তার থেকে দূরে থাকে, আল্লাহর শপথ একজন মুমিন মানুষ নিজেকে মুমিন ভেবে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবে। কিন্তু দাজ্জালের সঙ্গে সংশয় সৃষ্টিকারী যে সকল বিষয় থাকবে তা দেখে সে তার অনুসরণ করে ফেলবে (আবু দাউদ)।
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ৭ জুলাই, ২০২১, ৩:১২ এএম says : 0
আদম (আ.) সৃষ্টির পর থেকে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত দাজ্জালের চেয়ে আর বড় কোনো ফিতনা নেই (অর্থাৎ দাজ্জালই একমাত্র সবচেয়ে বড় ফিতনা) (মুসলিম শরীফ)।
Total Reply(0)
হাসান সোহাগ ৭ জুলাই, ২০২১, ৩:১৫ এএম says : 0
আখেরী যামানায় কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
Total Reply(0)
তফসির আলম ৭ জুলাই, ২০২১, ৩:১৬ এএম says : 0
দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিন বান্দাগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে।
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ৭ জুলাই, ২০২১, ৩:১৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অভিশপ্ত দাজ্জালের আক্রমণ থেকে হিফাজত করুন। আমিন।
Total Reply(0)
শেখ আল হেলাল ৭ জুলাই, ২০২১, ৭:৩৬ এএম says : 0
বর্তমান সময়ে মানবসভ্যতার যে ধ্বস নেমেছে তাতে মনে হয় দাজ্জাল আগমনের সময় প্রায় কাছাকাছি
Total Reply(0)
Tayebur Rahman ৭ জুলাই, ২০২১, ৯:৪৪ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ লেখাটি খুবই উপকারী।জাযাকাল্লাহ
Total Reply(0)
Hadisquran ১১ মার্চ, ২০২২, ৮:১৬ পিএম says : 0
হাদীস কোরআন আপনার ওয়েব সাইট টি অনেক ভাল
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন