বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সড়কের ওপরে সাঁকোই ভরসা

প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কাউখালী (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা

গ্রামের নাম দক্ষিণ পূর্ব জোলাগাতি। যে গ্রামের মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তিন দিকে কাউখালী উপজেলা হলেও একদিকে ভা-ারিয়া উপজেলার পশ্চিম ভিটাবাড়িয়া গ্রাম অবস্থিত। ওই গ্রামটিতে আজো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। ওই গ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। আজো যে গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ লণ্ঠন (কুপি) আর হেরিকেনের ওপর নির্ভরশীল। যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত করুণ। রাস্তা নামক সমতল ভূমির ওপর সাঁকো নির্মাণ করে চলতে হয়। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। কাউখালী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দক্ষিণ পূর্ব জোলাগাতী গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। ওই গ্রামে একটি বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা একটি হাফিজি ও কওমী মাদ্রাসা, ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এত লোক সংখ্যা আর প্রতিষ্ঠান সমৃদ্ধ গ্রামটি যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই করুন যা চোখে দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন। ওই গ্রামের সামান্য ব্যস্ত পাকা থাকলেও বেশিরভাগ এলাকায় সড়কের চিহ্ন থাকলেও নেই সড়কের অবয়ব। বর্ষা ও শরৎ কালে এলাকাটি জোয়ারে তলিয়েযায় আবার ভাটায় জেগে ওঠে। যে কারণে গ্রামের মূল সড়কটির গফুর মোল্লার বাড়ি থেকে দারুল উলুম কওমী ও হাফিজি মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের ওপর সাঁকো তৈরি করে চলাচল করতে হয়। অবশ্য ওই রাস্তার নমুনা থাকলেও কোন অবয়ব নেই। দক্ষিণ পূর্ব দারুল উলুম কওমী ও হাফিজি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা দিন মজুর (কাঠ মিস্ত্রী) মো. বেলায়েত হোসেন দুঃখ করে বলেন, তার পৈত্রিক জমির ওপর একান্ত নিজের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা, হেবজখানা, মসজিদ ও ইয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকার মানুষের মুষ্ঠি চাল, শাক সবজি সংগ্রহ করে, বিভিন্ন এলাকার অর্থশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভিক্ষা এনে তা চালিয়ে রাখছেন। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছ থেকে ছেলে-পুলেদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাাটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করাতে পারেননি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই এলাকার মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করে গাছের ডালপালা, সুপারী গাছ, বাঁশ এনে সাঁকো তৈরি করা হয়। ৫০ জনের অধিক ইয়াতিম থাকলেও মাত্র ৯ জনের অনুদান পান সমাজসেবা দফতর থেকে। মানুষের দানের অর্থে মালামাল কিনে নিজে শিক্ষক মন্ডলী ও এলাকার মানুষকে নিয়ে মসজিদটি ২তলা সম্পন্ন করে তিন তলার কাজও প্রায় শেষ করা হয়েছে। দেড় শতাধিক ছাত্রদের থাকার জন্য উপযুক্ত ছাত্রাবাস বানাতে পারেননি। মসজিদের তৃতীয় তলা করতে পারলে সেখানে হেফজখানা স্থানান্তর করতে পারলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে। এজন্য কোন সরকারি সাহায্যও পাননি। শ্রমজীবী আব্দুল মালেক বলেন এখানে চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। যতবড় রোগই হোকনা কেন কোয়াক ডাক্তার আর ওঝা ফকিরের ওপরই নির্ভর করতে হয়। কঠিন রোগীদের বিনা চিকিৎসায়ই মরতে হয়। সমাজ সেবক মো. এনামুল হক বলেন এখানের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন যার তদারকি না থাকায় খেযাল খুশি মত চলে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় প্রাইমারী থেকেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ে। সংগত কারণেই এখানে উচ্চ শিক্ষার হার খুবই কম। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাবনী চাকমা বলেন, যেহেতু ওই ইউনিয়নে নির্বাচন সম্পন্ন হয়নি। কেউই ওই এলাকা সম্পর্কে তাকে জানায়নি। এত অল্প সময়ে সব এলাকা পরিদর্শনেরও সুযোগ হয়নি। তিনি শীগ্রই ওই এলাকা পরিদর্শন করে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন