২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে চলতি বছরেই বেসরকারী সংস্থা এবং যুবদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা জরুরি। এ লক্ষ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোকে যুক্ত ও সহযোগিতার মাধ্যমে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’র প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) ও ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট যৌথভাবে অনলাইন মিটিং প্ল্যাটফর্ম ‘জুম’ এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ এবং ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন করা হলেও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চূড়ান্ত না হওয়ায় এ খাতের অর্থ যথাযথভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। যা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসাবে দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায়, তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা অত্যন্ত জরুরি। একইসঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন, নীতিতে প্রভাব নিয়ন্ত্রণে গাইড লাইন প্রণয়ন এবং তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন, আমরা অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরকে বর্তমানে প্রচলিত জটিল কর কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি এক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ফল পাবো। এছাড়া এনটিসিসি’র মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স সক্রিয়, তামাক বিরোধী প্রচারণা বাড়াতে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে পরিকল্পনায় রেখে শীঘ্রই কিছু বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোকে নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, স্থানীয় সরকার বিভাগের গাইডলাইন বাস্তবায়নেও কাজ করা হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত গড়ে তোলা কোনো ব্যক্তিগত কাজ নয়। সুস্থ্য জাতিগঠনে এটি দেশের কাজ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ধূমপান ক্ষতিকর জেনেও যারা এ নেশায় আসক্ত তাদেরকে তামাক বিমুখ করতে হলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণে ‘রোডম্যাপ’ ও ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ “নীতিমালা” প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো চ‚ড়ান্ত হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনো সহজ হবে।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে ভাইটাল স্ট্রাটেজিস বাংলাদেশের হেড অব প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ব্যস্ত। কিন্তু সাধারণ স্বাস্থ্য এড়িয়ে গেলে হবে না। এক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই কাজগুলো এগিয়ে নিতে এনটিসিসি’র অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করা, লোকবল বৃদ্ধি ও অন্যান্য সংগঠনগুলোকে সংযুক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর বিএনটিটিপি’র কনভেনর ড. রুমানা হক বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে বর্তমানে প্রচলিত জটিল কর কাঠামো পরিবর্তন করে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ করতে হবে। কারণ বর্তমান কর কাঠামোর কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে যে সারচার্জ নেয়া হচ্ছে সেই অর্থ খরচের জন্য একটি রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে। সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের বিষয়টি যুক্ত করা যেতে পারে।
এসময় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, দেশে তামাক কোম্পানিগুলো গত দুই বছর যে হারে লাভবান হয়েছে তাতে স্পষ্ট হয়েছে তামাকের ভোক্তা বাড়ছে। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণে অতি দ্রুত জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চ‚ড়ান্ত করতে হবে। কর্মসূচীতে যুবদের ব্যাপক হারে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয়পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করতে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রবীন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নাটাবের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু এর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। এছাড়া অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন