জিম্বাবুয়ে সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে রেকর্ড গড়া দিনে বিশ্ব রেকর্ডের আক্ষেপ নিয়েই অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ৪৬৮ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। গত পরশু টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করলে কাল দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সবার প্রশ্ন ছিল, আর কতদূর যেতে পারবেন মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদরা। সেই প্রশ্নের জবাব তারা দিলেন অসাধারণ ব্যাটিংয়ে। বলা চলে মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস ও তাসকিনরা খাদের কিনারা থেকেই টেনে তুললেন দলকে। বিশেষ করে মাহমুদউল্লাহ-তাসকিন জুটির চোখ জুড়ানো ব্যাটিংয়ে অভাবনীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত এই জুটি থামে বিশ্ব রেকর্ডের কাছাকাছি গিয়ে। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকলেন দেড়’শ রানে।
সাড়ে চার’শ টপকানো স্কোর, একটা সময় তা ছিল কল্পনারও বাইরে। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের লড়াইয়ে নায়ক মাহমুদউল্লাহ। প্রায় দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে তিনি অপরাজিত ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রান করে। আট নম্বরে নেমে এটি বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড গড়া ইনিংস। টেস্ট ইতিহাসে এই অবস্থানে যা পঞ্চম সর্বোচ্চ। নিজ ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস খেললেন তাসকিনও। ৭৫ রানের ইনিংসটি স্বীকৃত ক্রিকেটে তার প্রথম ফিফটি। এ দু’জনের দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রেকর্ড ছাপিয়ে এক সময় বিশ্ব রেকর্ডও ছিল নাগালের মধ্যে। কিন্তু মিল্টন শুম্বার বাঁহাতি স্পিনে তাসকিন স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হলে শেষ হয় সেই সম্ভাবনা। নবম উইকেটে দু’জনের জুটি থামে ১৯১ রানে। আগের বিশ্ব রেকর্ড অক্ষত থাকলেও বাংলাদেশের রেকর্ড অবশ্য দু’জন গড়েছেন ঠিকই। পেছনে পড়ে গেছে মাহমুদউল্লাহ ও আবুল হাসান জুটির ১৮৪ রান। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আবুল হাসানের সঙ্গে জুটি বেঁধে মাহমুদউল্লাহ গড়েছিলেন রেকর্ড। ওই ইনিংসে আবুল হাসান টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন দশ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে। বাংলাদেশের রেকর্ড তখন হয়ে গেছে। বিশ্ব রেকর্ডও নাগালে, সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সেই সময়টুকু থাকতে পারলেন না তাসকিন। দুর্দান্ত ব্যাট করেও হুট করে হারালেন ধৈর্য। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মিলে নবম উইকেটে টেস্ট ইতিহাসের সেরা জুটির কীর্তি গড়ার খুব কাছে গিয়েই তাকে থামতে হলো। অনিয়মিত বাঁহাতি স্পিনার মিল্টন শুম্বার বলে স্লগ করতে গিয়ে যখন বোল্ড হলেন তাসকিন, জুটি রান তখন ১৯১। আর মাত্র ৪ রান হলেই স্পর্শ করা যেত বিশ্বরেকর্ড। ১৯৯৮ সালে গড়া মার্ক বাউচার ও প্যাট সিমকক্সের রেকর্ড তাই অক্ষত থেকে গেল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুজন জোহানেসবার্গে গড়েছিলেন ১৯৫ রানের জুটি।
আগের মাহমুদউল্লাহ-আবুল হাসান জুটি ছাড়িয়ে তাসকিন ও মাহমুদউল্লাহ পেরিয়ে যান ১৯৬৭ সালে গড়া পাকিস্তানের ইন্তিখাব আলম ও আসিফ ইকবালের ১৯০ রানের জুটিও। কিন্তু পরের ধাপ আর পার হতে পারেননি তারা। লোয়ার অর্ডার হয়েও বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মতোই ব্যাটিং করা তাসকিন আউট হন ১৩৫ বলে ১১ চারের মারে ৭৫ রান করে। আট নম্বরে নেমে দেড়শ ছোঁয়ার নজির টেস্ট ইতিহাসে এর আগে আছে আর কেবল চারটি। ১৯৯৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেখুপুরায় ওয়াসিম আকরামের ২৫৭ রানের ইনিংস আটে নেমে সর্বোচ্চ। পাকিস্তানেরই সাবেক কিপার ইমতিয়াজ আহমেদের ২০৯ রানের ইনিংস আছে দুইয়ে, তিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেসন হোল্ডারের ২০২ এবং চারে পাকিস্তানের কামরান আকমলের ১৫৪।
কাল দিনের শুরুতে টিভি সাক্ষাৎকারে লিটন দাস বলেছিলেন, শেষ দুই জুটির কাছে দলের চাওয়া আর ৫০-৬০ রান। মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন প্রথম সেশনেই কোনো উইকেট না হারিয়ে তুলে ফেলেন ১১০! তাসকিন অবশ্য ৩২ রানে বেঁচে যান স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েও। লাঞ্চের আগেই মাহমুদউল্লাহ স্পর্শ করেন তার সেঞ্চুরি, তাসকিন পেয়ে যান ফিফটি। লাঞ্চের পর পর তাসকিনকে ৬৬ রানে রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করে জিম্বাবুয়ে। শেষ পর্যন্ত তাসকিন থামেন ১১ চারে ১৩৪ বলে ৭৫ করে। এই জুটি ভাঙার পর শেষ জুটি আর টেকেনি বেশিক্ষণ। মুজারাবানির চতুর্থ শিকার হয়ে শেষ ব্যাটসম্যান ইবাদত হোসেন প্যাভিলিয়নে ফিরেন শূন্য রানে।
মাহমুদউল্লাহ তখন অপরাজিত ২৭৮ বলে ১৭ চার ও ১ ছক্কায় ১৫০ রান করে। টেস্টে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৬। অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে ৩৫ বছর বয়সে টেস্ট দলে ফেরা সত্যিই অবাক কান্ড। নিজের ৫০তম ম্যাচে দেড়শ রানের ইনিংস খেলে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন মাহমুদউল্লাহ। টেস্ট দলে এই ফেরাটা তার স্মরণীয় হয়েই থাকবে।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : (আগের দিন ২৯৪/৮) ১২৬ ওভারে ৪৬৮ (মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, তাসকিন ৭৫, ইবাদত ০; মুজারাবানি ২৯-৪-৯৪-৪, এনগারাভা ২৩-৫-৮৩-১, টিরিপানো ২৩-৫-৫৮-২, নিয়াউচি ১৭-১-৯২-২, মায়ার্স ৩-১-১৩-০, শুম্বা ২১-৪-৬৪-১, কাইয়া ১০-০-৪৩-০)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন