বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

প্রত্যাবর্তন ওয়ানডেতে হতাশ ব্যাটিং

প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : আফগানিস্তানকে পিষে মারতে চেয়েছিলেন মাশরাফি। আক্রমণাত্মক খেলে প্রতিপক্ষের পিলে চমকে দেয়ার ঘোষণাই দিয়েছিলেন। তবে মাশরাফির পাশে বসে সংবাদ সম্মেলনে একটু ডিফেন্সিভই ছিলেন হেড কোচ হাতুরুসিংহে। একে তো বছরের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ, তার উপর ১০ মাস বিরতি শেষে হোমে ওয়ানডে। সে কারণেই প্রথম ম্যাচের প্রথম ঘণ্টাকে নিয়েই ভয় ছিল হাতুরুসিংহের। তবে আন্তর্জাতিক টি-২০’র ব্যস্ততা ছেড়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে শিষ্যদের উদ্দেশে দিয়েছিলেন যে সতর্কবার্তা, তার সেই ধারণারই প্রতিফলন ঘটেছে ম্যাচে। ইনিংসের ৫ম বলে ফিরে গেছেন সৌম্য। আড়মোড়া ভেঙে ম্যাচে নামা মাশরাফিরা ¯েøা উইকেটে ব্যাটিংয়ের সুবিধা নিতে পারেননি। তিন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৯ হাজারী ক্লাবে তামীমের সদস্যপদের দিনে বাংলাদেশ থেমেছে ২৬৫/১০-এ।
দিনের শুরুটা হয়েছে বাঁ হাতি ওপেনার সৌম্য সরকারের ভুলের ফাঁদে পা দেয়ার মধ্য দিয়ে। গত বছরে নিজেকে অন্য উচ্চতায় উঠিয়ে আনা এই বাঁ হাতির এই বছরটা কাটছে খুবই বাজেভাবে। ১৬ টি-২০-তে ২৫৫ রানে নিজেকে ধরতে পারেননি মেলে। এই অফফর্ম থেকে ১০ মাস বিরতির পর ওয়ানডেতেও খেলতে এসেও বেরিয়ে আসতে পারেননি সৌম্য। টি-২০ ক্যারিয়ারে ২ বার ০-তে ফিরেছেন, সেই দু’বারই এই বছরে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারেও প্রথম ০’র অপবাদটি পেতে হলো এ বছর এবং তা গতকাল। দৌলত জাদরানকে পুল করতে যেয়ে করেছেন ভুল, মিড উইকেটে ক্যাচ প্র্যাকটিসে ফিরে এসেছেন দিনের ৫ম বলে। তারপরও শঙ্কা করেনি ভর। মাইলস্টোনের ম্যাচে আর এক বাঁ হাতি ইমরুল কায়েসকে নিয়ে ২য় উইকেট জুটিতে ৮৩ রানে ম্যাচে ফেরার আবহ তৈরি করেছেন তামীম ইকবাল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দৌলত জাদরানকে দর্শনীয় ফ্লিক শটে বাউন্ডারিতে ১৫ রানের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিন ভার্সনের ক্রিকেটে রানের সমস্টি ৯ হাজারে নিয়ে গেছেন। স্কোয়ার লেগ,ব্যকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে দুর্দান্ত খেলতে খেলতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৩তম ফিফটি উদযাপন করেছেন। ১০ মাস আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই মিরপুরে থেমেছিলেন তিনি ৭৩ এ, ১০ মাস পর ওয়ানডে প্রত্যাবর্তন ম্যাচেও ফিফটি। গতকাল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা দেখিয়ে থেমেছেন ৮০তে। মিরওয়াইজ আশরাফকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়ে তামীম নিজেই প্রকাশ করেছেন হতাশার অভিব্যক্তি। তামীমের সঙ্গে ১০ মাস আগে ৭৩-এ থেমেছিলেন ইমরুল আফগানিস্তানে। প্রত্যাবর্তন ম্যাচে ফিফটি হাতছাড়া করেছেন এই বাঁ হাতি। ৫৩ বলে তার ৩৭ রানের ইনিংসে ইমরুল আসলেই ভাগ্যবান। দু’দুবার সহজ সুযোগ দিয়েছেন, ৯ রানের মাথায় দৌলত জাদরানের বলে ¯িøপের ফিল্ডার মোহাম্মদ নবী নিতে পারেননি তার ক্যাচ। ১৩ রানের মাথায় নবীর বলে কভারে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি রশিদ খান।
দিনটিতে আলো ছড়িয়েছেন মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। মিরওয়াইজ আশরাফকে লং অনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কায় দারুন দিনের আভাস দিয়েছিলেন। দৌলত জাদরানকে এক ওভারে ২ বাউন্ডারি এক ছক্কায় মাতিয়েছেন শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। তামীমের মতো প্রত্যাবর্তন ওয়ানডে ইনিংসে উদযাপন করেছেন ফিফটি। তবে ৬৫তম বলে এসে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৫তম ফিফটি উপহারেও আক্ষেপটা নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। উইকেটে থাকলেই রান,অথচ তিনিই কিনা নবীকে সুইপ করতে যেয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে দিয়ে আসলেন ক্যাচ (৭৪ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৬২ রান)। শ্লগের প্রথম ওভারে তার ওই আউটটিই প্রত্যাশিত স্কোরে গড়েছে প্রতিবন্ধকতা।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে লেগ স্পিন নিয়ে ভয় পাবার কথা নয়। তবে লেগ স্পিনে খেলতে অনভ্যস্ত বলে ফতুল্লায় আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানকে দেখে,তাকে সতর্ক হয়ে খেলার পরামর্শ টীমমেটদের দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক সৈকত। কিন্তু সে সতর্কবার্তায় আমল দেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। রশিদ খানের ২ ওভারের শেষ স্পেলে (২-০-৮-২) গুগলিতে মুশফিকুর রহিম (৬) বোল্ড, আম্পায়ার সৈকতের ভুল সিদ্ধান্তে সাব্বির রহমান রুম্মান (২) এলবিডাবøু। জানেন, এই লেগিই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন (১০-০-৩৭-২)। দ্রæত রান তোলার চেস্টায় ফিফটির সম্ভাবনা দেখিয়ে সাকিব থেমেছেন ৪৮-এ, ফিফটির জন্য তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে দৌলত জাদরানের শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচে নিজেকে দিয়েছেন সঁপে এই বাঁ হাতি মিডল অর্ডার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখলেন আফগান পেস বোলার দৌলত জাদরান ৪ উইকেটের মুখ। দু’বারই আইসিসি’র পূর্ন সদস্য দেশের বিপক্ষে। প্রথম ৪ উইকেটের দেখা পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে (৪/২২), গতকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ৪ উইকেটের ইনিংসে খরচা তার ৭৩ রান। শেষ স্পেলে ৩ উইকেটে (৩-০-২১-৩) ধন্যি তিনি।
১৯ মাস আগের সেই ক্যানবেরাই যেনো মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ দল! ক্যানবেরায় টসে জিতে ব্যাটিং, মিরপুরেও তাই। ক্যানবেরায় শেষ বলে অল আউট বাংলাদেশ, মিরপুরেও সে দৃশ্য মঞ্চস্থ হয়েছে। ক্যানবেরায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্কোর বাংলাদেশের ২৬৭/১০, মিরপুরে সেখানে ২৬৫/১০। বাংলাদেশ ইনিংসের পারফরমারদের নামগুলো শুধু এদিক হয়েছে। সেই ম্যাচে অতি সাবধানী ইনিংসে শ্লগের ৬০ বলে বাংলাদেশ যোগ করেছে ৭৩ রান, এই ম্যাচে সেখানে শ্লগে বাংলাদেশের রান সেখানে ৬৯। তাড়াহুড়ো ব্যাটিংয়ে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হারিয়েছে শ্লগে ৬ উইকেট,সেখানে গতকাল শ্লগে হারিয়েছে ৭ উইকেট। চেনা মিরপুরে ওয়ানডে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে শ্লগের ব্যাটিংই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে মাশরাফিদের। প্রথমে ব্যাট করে গতবছর যে ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৯, ভারতের বিপক্ষে ৩০৭’র অতীত আছে, সেই মিরপুরে আইসিসি’র সহযোগী সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৬৫।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন