সেবা দিতে নির্মিত হবে বিআরটি
স্টাফ রিপোর্টার : স্বল্পব্যয়ে ও উন্নত সড়কনির্ভর বাসভিত্তিক গণপরিবহন সেবা দিতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ করা হবে। এ জন্য বিশেষ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ এবং আনুষঙ্গিক বিধান প্রণয়নে ‘বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বিল-২০১৬’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিলটি উত্থাপনের পর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলের বিধান অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার মধ্যে এই বিআরটি স্থাপন ও পরিচালনা করা হবে। বিআরটি পরিচালনার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তবে শতভাগ সরকারি কোম্পানিকে লাইসেন্স ফি দিতে হবে না। সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিআরটি স্থাপন, স্থাপনা ও পরিচালনার সুযোগ রাখা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া বিআরটি নির্মাণ, উন্নয়ন বা পরিচালনা করলে ১০ বছরের কারাদ- এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। অনুমোদন ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলেই একই পরিমাণ জরিমানা দিতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনটিতে বিআরটির ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল আইন ও পায়রা বন্দর আইনের মতো বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। বিআরটি নির্মাণ বা পরিচালনা হতে পারে এমন কোনো স্থানে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না। জমির শ্রেণী পরিবর্তন করলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ সাত কর্মদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে, বিআরটির ভাড়া নির্ধারণের জন্য নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। কমিটি বিআরটি পরিচালনা ব্যয় ও জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণের সুপারিশ করবে। বিআরটির প্রতিটি কোচে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু ও প্রবীণদের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক আসন সংরক্ষিত থাকবে। বিআরটি পরিচালনাকালে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে। বিআরটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সব যাত্রীর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বীমা না করলে ১০ বছরের কারাদ- এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।
বিলে আরো বলা হয়েছে, বিআরটি নির্মাণ ও পরিচালনায় বাধা দিলে এক বছরের কারাদ- ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি অনুমতি ছাড়া বিআরটির সংরক্ষিত স্থানে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে এক বছরের কারাদ- ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কোনো ব্যক্তি যদি বিআরটি বাস ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘœ ঘটায়, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের কারাদ- ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। আর বিআরটির টিকিট বা পাস জাল করলে এবং অননুমোদিতভাবে টিকিট বা পাস বিক্রি করলে ১০ বছরের কারাদ- ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া কারিগরি মান অনুসরণ না করলে লাইসেন্সধারীকে পাঁচ বছরের কারাদ- ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। শুরু থেকেই বিআরটিকে মোবাইল কোর্টের এখতিয়ারে নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে ওই বিলে।
উল্লেখ্য, বিআরটি পরিচালনা করতে ২০১২ সালে গঠিত হয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। গত ২৬ জুন বিআরটি নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত ৭ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত ‘বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বিল-২০১৬’ নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বিল : বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর গঠন ও তৎসম্পর্কিত বিধান প্রণয়নে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বিল-২০১৬’ সংসদে উত্থাপন করেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী (সংসদকার্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আনিসুল হক। এর আগে বিল উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিরোধীদলীয় সদস্য ফখরুল ইমাম। কিন্তু তার আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি পরীক্ষাপূর্বক রিপোর্ট প্রদানের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর পরিচালনার জন্য এ যাবৎ কোনো আইন প্রণীত হয়নি। সরকারের নির্বাহী আদেশে এ কোর পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের কার্যক্রমের পরিধি বহুলাংশে বিস্তৃত হওয়ায় এ কোরের জন্য একটি সময়োপযোগী আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
গত বছর ২৮ ডিসেম্বর বিলটির খসড়া মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়। প্রস্তাবিত বিলটি আইনে রূপান্তরিত হলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর আইনগত কাঠামোয় সংগঠিত হবে এবং এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
রিপোর্ট উত্থাপন : আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেজ (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলিজেজ) বিল-২০১৫’ সম্পর্কে সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা: মো: আফসারুল আমীন ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্ট (সংশোধান) বিল-২০১৬’ সম্পর্কে সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।
সংসদ অধিবেশন শুরু চলবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত
এর আগে গতকাল রবিবার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশন আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। অধিবেশন শুরুর আগে অনুষ্ঠিত সংসদের কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংসদ অধিবেশনের শুরুতে গত ২৭ জুলাই শেষ হওয়া বাজেট অধিবেশনের পর প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য শোক প্রস্তাব গ্রহণ ও মোনাজাত করা হয়। এর আগে সভাপতিম-লীর সদস্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। যারা স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদের বৈঠক পরিচালনা করবেন। সভাপতিম-লীর সদস্যরা হলেন- আবদুল মতিন খসরু, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, এনামুল হক, ফখরুল ইমাম ও আয়েশা ফেরদৌস।
অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবনে সংসদের কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চলতি অধিবেশন আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিদিন বিকেল ৫টায় অধিবেশন শুরু হবে। তবে প্রয়োজনে এ সময়সীমা স্পিকার বাড়াতে বা কমাতে পারবেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, আ স ম ফিরোজ এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অংশ নেন।
শোক প্রস্তাব গ্রহণ
সাবেক সংসদ সদস্য ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য এম আবদুর রহীম, ডা. এম এ মান্নান, আলী রেজা রাজু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কোরবান আলী, সাবেক এমপি ফজলুর রহমান পটল, আবদুর রাজ্জাক খান, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, সংসদ সচিবালয়ের গাড়ি চালক বিপ্লব হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। এছাড়া কবি শহীদ কাদরী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজমা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল, কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলী, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সিডনি শনবার্গ, শাবিপ্রবি সাবেক ভিসি ছদরুদ্দিন আহমেদ এবং কৌতুক অভিনেতা ফরিদ আলীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার বয়লার বিস্ফোরণে, বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীতে লঞ্চডুবিতে এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়। মুনাজাত পরিচালনা করে বজলুল হক হারুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন