বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহিলা

‘সেইন্ট’ খেতাবে ভূষিত হলেন মাদার তেরেসা

প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আর্তমানবতার সেবক মিশনারিজ অফ চ্যারিটি খ্যাত প্রয়াত মাদার তেরেসাকে ‘সন্ত’ (সেইন্ট) ঘোষণা করা হয়েছে। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন তিনি। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। তার মৃত্যুর পর পোপ দ্বিতীয় জন পল তাকে স্বর্গীয় আখ্যা দেন এবং তিনি কলিকাতার স্বর্গীয় তেরেসা নামে পরিচিত হন। সারা বিশ্বের দুস্থ মানুষের ভরসার ও মমতাময়ী মায়ের প্রতিমূর্তি ছিলেন মাদার তেরেসা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রোববার ভ্যাটিকান সিটির ক্যাথলিক চার্চ মাদার তেরেসাকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভ্যাটিকানের সেইন্ট পিটার্স স্কয়ারে এক অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিস মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করেন। মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করায় ভারতের কলকাতায় তার প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অব চ্যারিটিতেও অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। মৃত্যুর পর তার দুটি অলৌকিক ক্ষমতার ঘটনার কথা জানা যায়। দুজন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি মাদার তেরেসার নাম ধরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। উল্লিখিত দুই ঘটনায় মাদার তেরেসার সন্ত হওয়ার প্রক্রিয়া এক ধাপ এগিয়ে দেয়। সেইন্ট হওয়ার জন্য অন্তত দুটি অলৌকিক ঘটনা থাকতে হয়। তিনি যে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন তা আজ সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত হয়েছে শত শাখা-প্রশাখায়। আর্তমানবতার সেবার জন্য ১৯৭৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন মাদার তেরেসা। নোবেল পুরস্কারের ১৫ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য পুরস্কারের প্রায় এক কোটি টাকা সবই তিনি দান করেন মানবতার সেবায়। এই মহীয়সী নারী বৃদ্ধ বয়সেও সেবাব্রতের কাজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অক্লান্তভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ১৯৮০ সালে তিনি ভারতরতœ পুরস্কার পান। ২০০২ সালে প্রথমবার মাদার তেরেসার অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানায় ভ্যাটিকান। এতে বলা হয়, ভারতীয় এক নারীর দীর্ঘদিনের টিউমার সারাতে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তখন মাদার তেরেসার ছবি রেখে প্রার্থনা করতে করতে সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই নারী। গত বছর মাদার তেরেসার দ্বিতীয় অলৌকিক ঘটনা প্রকাশিত হয়। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্চুক এক ব্রাজিলীয় বলেন, ২০০৮ সালে তার টিউমার সেরেছে মাদার তেরেসার জন্য। ওই ব্যক্তি অবশ্য কোনো দিন মাদার তেরেসাকে দেখেননি।
অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট মাসে তেরেসা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহ ত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। স্কুলে পড়াতে তার ভাল লাগলেও কলকাতার দারিদ্র্যে তিনি উত্তরোত্তর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে লাগলেন। পঞ্চাশের মনন্তরে শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যু, ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও বহু মানুষ মারা যান। এই সব ঘটনা তেরেসার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৭০-এর দশকের মধ্যেই সমাজসেবী এবং অনাথ ও আতুরজনের বন্ধু হিসেবে তার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ম্যালকম মাগারিজের বই ও প্রামাণ্য তথ্যচিত্র সামথিং বিউটিফুল ফর গড তার সেবাকার্যের প্রচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তার সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরতœ লাভ করেন। ৮৭ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালে মাদার তেরেসার মৃত্যু হয়।
য় শাহনাজ বেগম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন