বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

শিশুসন্তান নিয়ে পিতার বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন

সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েও রেহাই পায়নি ছিমকি

প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম


মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার নল কুড়িয়া গ্রামের সানজিদা আক্তার ছিমকির বিয়ের তিন বছর যেতে না যেতেই যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় দেড় বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে পিতার বাড়িতে মানবেতর দিনযাপন করছে। ছিমকির দায়ের করা মামলা তুলে নেয়ার জন্য স্বামী ও তার পক্ষের লোকজনের হুমকিতে ভিতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বন্যাপ্রসাদ গ্রামের আবু সাঈদ নান্নুর পুত্র মো. সাদ্দাম হোসেনের সাথে ৫ লক্ষ টাকা দেন মোহরানা ধার্যে নল কুড়িয়া গ্রামের মো. আলমগীর হোসেনের কন্যা সানজিদা আক্তার ছিমকির বিয়ে হয়। কন্যা পক্ষ বর পক্ষকে স্বর্ণালংকার এবং পালসার মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন উপঢৌকন প্রদান করেন। বিয়ের পর থেকে বিবাহের পণ হিসেবে ৫ লক্ষ টাকা ছিমকিকে এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে টাকা দিতে না পারায় মো. সাদ্দাম হোসেন তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার ছিমকির নিকট আরো ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে মাঝেমাধ্যেই মারপিট করতে থাকে। গত ১৭ নভেম্বর’১৫ তারিখে দিবাগত রাতে স্বামী মো. সাদ্দাম হোসেন, শ্বশুর মো. আব ুসাঈদ এবং শাশুড়ি-ননদসহ বেদম মারপিট করলে ছিমকিকে তার শ্বশুর বাড়ি হতে উদ্ধার করে ঘিওর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত ২৩ নভেম্বর’১৫ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) /৩০ ধারায় ঘিওর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ছিমকির বাবা মো. আলমগীর হোসেন। যা বর্তমানে থানা হতে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। মামলাটি নারী শিশু ট্র্যাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে। অপরদিকে আবু সাঈদের পুত্র মো. সাদ্দাম হোসেন অত্যন্ত চতুরতার সাথে প্রতারণা করে তার শ্বশুর মো. আলমগীর হোসেন দুই মামা সৈয়দ নুরুল হুদা রনো এবং সৈয়দ নাজমুল হুদাকে বিদেশে কানাডায় পাঠানোর নাম করে ৩০ লক্ষ টাকা গত ২৩ জুলাই’১৫ তিন শত টাকার নন জুডিশিয়্যাল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে মো. সাদ্দাম হোসেন হাতিয়ে নেয়। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের আর কানাডায় পাঠায়নি। গত ২৭ আগস্ট ২০১৬ রাত আনুমানিক ২টার দিকে সানজিদা আক্তার ছিমকির বড় মামা সৈয়দ নুরুল হুদা যিনি বিদেশি টাকা পাওনার মামলার বাদী তার দক্ষিণ দত্ত পাড়ার রাজ ফুলবাড়িয়া, সাভার বাসায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রথমে অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জন অস্ত্রধারী রুমে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ জনকে, তার বাসায় স্ত্রীর ব্যবহৃত স্বর্ণালংকার টাকা-পয়সাসহ মো. সাদ্দাম হোসেন বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ৩০ লক্ষ টাকা গ্রহণের যে মূল স্ট্যাম্প দিয়েছিল তার বাসা হতে ছিনিয়ে নিছে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সৈয়দ নুরুল হুদাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে সকল মামলা-মোকদ্দমা তুলে নেবে এই মমের্ ১ দিন ২ রাত আটকিয়ে রেখে মারধর করে বিরুলিয়া, পলো মার্কেটের সন্নিকটে আজিজ মেম্বারের বাড়ির পার্শ্বে জনশূন্য এলাকায় হাত-পা মুখ বেঁধে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সৈয়দ নুরুল হুদাকে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে সাক্ষী এবং থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা উদ্ধার করে সাভার উপজেলার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি পাঁচদিন হাসপাতালে চিকিসারত অবস্থায় ভর্তি ছিলেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাভার মডেল থানায় মামলা নং-৩০/২২৫ তাং ২৯/০৮/২০১৬ দায়ের করেছেন সৈয়দ নুরুল হুদা নিজে বাদী হয়ে। সানজিদা আক্তার ছিমকির মামা সৈয়দ নুরুল হুদা বাদী হয়ে বিদেশি পাওনা টাকা উত্তোলনের জন্য বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকায় গত ০৮/০২/২০১৬ ইং তারিখে পিটিশন মামলা নং ৩৫/২০১৬ দায়ের করেন। ফলে মো. সাদ্দাম হোসেন গংরা এলাকার প্রতিপত্তির দাপটে বিভিন্নভাবে সানজিদা আক্তার ছিমকির পরিবার পরিজনকে হয়রানি করতে থাকেন। মাঝখানে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলাও দায়ের করেন মো. সাদ্দাম হোসেন বাদী হয়ে যার পিটিশন মামলা নং-১৩৮/(ঘিওর)/২০১৫ বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-০৪, মানিকগঞ্জ যাহা বিচারাধীন আছে। এরপর কোনো ধরনের কোনো নোটিশ প্রদান না করে মানিকগঞ্জের কাজী মো. মনিরুজ্জামানের যোগসাজশে ব্যাগ ডেটে আসামি মো. সাদ্দাম হোসেন সানজিদা আক্তার ছিমকিকে খোলা তালাক (বাইনতালাক) প্রদান করেছেন গত ১১/০৮/২০১৬ ইং তারিখে। বিধি অমান্য করে নোটিশ প্রেরণ করেছেন একই দিবস ১১/০৮/২০১৬ ইং তারিখে যাহা মুসলিম বিবাহ আইনের পরিপন্থী। পরিশেষে সানজিদা আক্তার ছিমকি লোক মুখে তালাকের কথা শুনে গত ০৩/১০/২০১৬ ইং তারিখে মামলা নং-২৬/২০১৬ বিজ্ঞ ঘিওর উপজেলা পারিবারিক আদালত, মানিকগঞ্জ এ মোহরানা এবং খোরাকির দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন। এখন সানজিদা আক্তার ছিমকি তার ১৮ মাসের শিশু কন্যাসন্তান তানহাকে নিয়ে ভিতসন্ত্রস্ত অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন