শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যিলহজ মাসের আমল ও তাৎপর্য-২

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

যিলহজ শুরু হয়েছে; নখ-চুল না কাটি, না ছাটি : এ দশকের একটি বিশেষ আমল হলো- যিলহজ্বের চাঁদ ওঠা থেকে নিয়ে কুরবানী করা পর্যন্ত নখ-চুল না কাটা। এতে একদিকে হাজী সাহেবানের সাথে একরকম সাদৃশ্য প্রকাশ পায়। পাশাপাশি এর জন্য রয়েছে বিশেষ ফজিলতও। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যখন যিলহজের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম : ১৯৭৭)।

অতএব যিলহজ আগমনের পূর্বেই নখ-চুল কেটে ছেটে পরিপাটি হয়ে থাকা বাঞ্ছনীয়। যারা কুরবানী করবেন তারা এ আমলের প্রতি তো যত্নবান হবেনই। আর বিভিন্ন বর্ণনা ও সাহাবা-তাবেয়ীনের আমলের নিরিখে এ-ও বুঝে আসে যে, যারা কুরবানী করবেন না তারাও এ ফজিলতপূর্ণ আমলে শরীক হতে পারেন। এমনকি এসময় বাচ্চাদের চুল-নখ কাটা থেকে বিরত থাকাও ভালো; যা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল থেকে বোঝা যায়। (দ্রষ্টব্য: সুনানে আবু দাউদ : ২৭৮৯)।

ইয়াওমে আরাফা; গুরুত্ব ও ফজিলত : যিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস হলো নয় তারিখ। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ীÑ ‘ইয়াওমু আরাফা’। এ দিনটি হজের মূল দিন। আরাফার ময়দানে হাজী সাহেবানের উকূফ-অবস্থান এ দিনেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা এ দিনকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন। দ্বীন-ইসলামকে পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন এ দিনেই। এ দিনেই নাযিল হয়েছে কোরআনে কারীমের সর্বশেষ আয়াত : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা: ৩)।

এ দিনে বান্দার দিকে রবের রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে থাকেন এ দিনে। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফিরিশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহীহ মুসলিম : ১৩৪৮)।

যে দিনের রোজায় মাফ হয় দুই বছরের গুনাহ : এ দিনের একটি রোজায় বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আরাফার দিনের (নয় যিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম : ১১৬২)। প্রকাশ থাকে যে, হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা দ্বারা যিলহজের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। অতএব যে এলাকা যখন যিলহজের নয় তারিখে উপনীত হবে সে এলাকায় তখন এ বিধান প্রযোজ্য হবে।

যিলহজের ফজিলতপূর্ণ প্রথম দশকের মাঝে যেহেতু ইয়াওমে আরাফা তথা নয় যিলহজ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিবসটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথেই আমলে নেয়া চাই। পুরো দশক সম্ভব না হলেও কমপক্ষে এ দিনে রোজা রাখার চেষ্টা করি। নেক আমলে আরো আগ্রগামী হই। যিকির, দুআ, ইস্তিগফার, সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি তাসবীহ বেশি বেশি পাঠ করি। যেহেতু এ দিবসে মহান মালিকের পক্ষ থেকে ব্যাপক ক্ষমার ঘোষণা এসেছে, বিশেষ করে হাজী সাহেবানের জন্য, সেখানে আমরাও দূরদেশ থেকে সেই ব্যাপক ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভ করতে উন্মুখ হই।

হাদীস শরীফে আরাফার দিনের দুআকে শ্রেষ্ঠ দুআ বলা হয়েছে। নবীজী বলেন : শ্রেষ্ঠ দুআ (যিকির) আরাফার দুআ। দুআ-যিকির হিসেবে সর্বোত্তম হলো ঐ দুআ, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হলো : ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদীর’ (জামে তিরমিযী : ৩৫৮৫)। অতএব আমরা এ দুআটির প্রতিও বিশেষ ইহতিমাম করতে পারি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Mohammad Sujonrafi ১২ জুলাই, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
১২ মাসে বছর হয়। কিছু মাস নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে আল্লাহর কিতাবে মাসের সংখ্যা ১২।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৬)
Total Reply(0)
Md. Mofazzal Hossain ১২ জুলাই, ২০২১, ২:০৫ এএম says : 0
জিলকদ মাসে নির্ধারিত ইবাদত না থাকলেও কিছু কিছু নফল ইবাদত করা বাঞ্ছনীয় ও শ্রেয়।
Total Reply(0)
Kamrul Hassan ১২ জুলাই, ২০২১, ২:০৭ এএম says : 0
প্রতি মাসের মতো জিলকদ মাসেও বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যেমন ১ তারিখ, ১০ তারিখ, ২০ তারিখ, ২৯ তারিখ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা পালন করা। চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদের সুন্নাত রোজা, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নাতে নববি রোজা রাখা। সলাতুত তাসবিহ নামাজ এবং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ-তাহাজ্জুত, ইশরাক, চাশত বা দুহা, জাওয়াল ও আউওয়াবিন পড়া। বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া ও দানখয়রাত করা। জিলহজ মাসের ৯টি সুন্নাত রোজা ও মহররম মাসের ১০টি রোজার প্রস্তুতি হিসেবে এই মাসে কিছু হলেও নফল রোজা রাখা। হজের ও কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়া।
Total Reply(0)
Nakib Khan ১২ জুলাই, ২০২১, ২:০৮ এএম says : 0
কুরআনুল কারিমের সুরা তাওবার এ ঘোষণায় সন্মানিত ৪ মাসের একটি জিলহজ মাস। এ মাসের মর্যাদা ও ফজিলতের অন্যতম কারণ আশারায়ে জিলহজ বা প্রথম ১০দিন। এ দশকে অনুষ্ঠিত হয় হজ এবং কুরবানি।
Total Reply(0)
Nazrul Islam ১২ জুলাই, ২০২১, ২:০৮ এএম says : 0
হজরে মাস জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমলের গুরুত্ব অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ মাসের মর্যাদাপূর্ণ প্রথম ১০ রাতের কসম করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَ الْفَجْرِۙ وَ لَیَالٍ عَشْرٍ ‘শপথ ফজরের; শপথ দশ রাতের’। (সুরা ফজর : আয়াত ১-২)
Total Reply(0)
Billal Hossain ১২ জুলাই, ২০২১, ২:০৯ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসের করণীয়গুলো যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন
Total Reply(0)
MD. ABDUL MANNAN ১২ জুলাই, ২০২১, ৬:৫৪ এএম says : 0
আসসালামুআলাইকুম, ইসলাম থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি, ইলেম শুন্য্আলেম হচ্ছে। আপনাদের এই চেষ্টা অনেক ভাল। ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Moazzam ১২ জুলাই, ২০২১, ১০:১১ এএম says : 0
জিলহজ মাসের ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে ১৩ জিলহজ আসার নামাজের সময় শেষ হবে তাকবিরে তাশরিক। মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়তে হয়। চাই নামাজ জামাআতে কিংবা একাকি পড়া হোক। আর তাকবিরে তাশরিক পুরুষরা উচ্চ স্বরে আর মহিলার স্বশব্দে নিচু স্বরে পড়বে। অর্থাৎ মহিলাদের তাকবিরের শব্দ যেন (গাইরে মাহরাম) অন্য লোকে না শোনে। তাকবিরে তাশরিক হলো-‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন