বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাদীস ও আসারের আলোকে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল-১

মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

পুণ্যময় যিলহজ মাস চলছে। পবিত্র এই মাস মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। ইসলামের পাঁচ রুকনের এক রুকন তথা হজ্ব-এর মতো শ্রেষ্ঠ ইবাদত এ মাসেই সংঘটিত হয়। সেইসাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কুরবানীÑ এ মাসেই আদায় করা হয়। কুরবানী কেবল ইসলামী শরীয়তেরই ইবাদত নয়। বরং পূর্ববর্তী সকল শরীয়তেই কুরবানীর বিধান ছিল, যদিও সকলের পন্থা এক ছিল না। মিল্লাতে ইবরাহীমীর সুন্নত এ কুরবানী ইসলামের শিআর বা অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এতে আছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্যের শিক্ষা এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ ও বিসর্জনের দীক্ষা। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে : অর্থাৎ, বলে দিন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। (সূরা আনআম : ১৬২)।

এই কুরবানী আমাদেরকে শেখায়, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেভাবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিস কুরবানী করতে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছেন, তেমনি আমরাও যেন আপন মনোবাসনা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করি। এবং সব অবৈধ মনোবৃত্তি ও পাপাসক্ত মনোভাব ঝেড়ে ফেলি।
ইসলামে কুরবানীর গুরুত্ব অনেক। নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এমন প্রত্যেক ব্যক্তির কুরবানী আদায় করা ওয়াজিব। কেউ ওয়াজিব কুরবানী না করলে তার ব্যাপারে হাদীসে কঠোর ধমকি এসেছে। মিখনাফ ইবনে সুলাইম রা. বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে আরাফায় অবস্থান করছিলাম, তখন আমি শুনলাম তিনি বলছেন, হে লোকসকল! প্রত্যেক ঘরওয়ালার ওপর প্রত্যেক বছর কুরবানী আবশ্যক। (জামে তিরমিযী : ১৫১৮)।

যেই ঘরে নেসাবের মালিক একাধিক ব্যক্তি থাকে, সেই ঘরে প্রত্যেক নেসাবওয়ালাকে কুরবানী করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও প্রত্যেক বছর কুরবানী করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় দশ বছর ছিলেন। প্রতি বছরই কুরবানী করেছেন। (জামে তিরমিযী : ১৫০৭)।

কুরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যারা কুরবানী করে না, তাদের ব্যাপারে অন্য এক হাদীসে এসেছে; আবূ হুরায়রা রা. বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার কুরবানীর সামর্থ্য আছে, তবুও সে কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ‘মুসল্লা’ (ঈদগাহ)-এ না আসে। ( সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১২৩)।

সমস্ত ইবাদতের ক্ষেত্রেই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত যেমন জরুরি, তেমনি সেই ইবাদত শরীয়তসম্মত পথ ও পদ্ধতিতেই করা আবশ্যক। মনগড়া পন্থায় তা আদায় করলে সওয়াবের পরিবর্তে উল্টো গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই খুব ভালোভাবে কুরবানীর মাসআলা-মাসায়েল জেনে নিতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে, যেন কুরবানী আদায়ে ভুল-ত্রুটি না হয়, অথবা না জানার কারণে ওয়াজিব কুরবানী ছুটে না যায়।

উট, গরু বা মহিষে এক থেকে সাত পর্যন্ত যেকোনো ভাগেই কুরবানী করা যায়। আর ভেড়া, দুম্বা বা ছাগলে একের অধিকজনে কুরবানী জায়েয নেই। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন : আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন, যেন আমরা প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি। (সহীহ মুসলিম : ১৩১৮)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পক্ষ থেকে কুরবানী করা : হানাশ রাহ. বলেন : আমি আলী রা.-কে দেখলাম, দুটি দুম্বা কুরবানী করছেন। আমি বললাম, দুটি কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে ওসীয়ত করেছেন, তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করতে। তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকেও কুরবানী করছি। (সুনানে আবু দাউদ : ২৭৯০)। আলী রা. প্রত্যেক বছর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন। সুতরাং সামর্থ্য থাকলে তাঁর পক্ষ থেকে নফল কুরবানী করা উত্তম।

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা : কুরবানীর পশু উটের ক্ষেত্রে ৫ বছর বয়সী, গরু বা মহিষের ক্ষেত্রে ২ বছর বয়সী হতে হবে। ভেড়া, দুম্বা বা ছাগলের ক্ষেত্রে অন্তত ১ বছর বয়সী হতে হবে, তবে ছ’মাস বয়সী হৃষ্টপুষ্ট ভেড়া বা দুম্বা হলেও চলবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা কুরবানীতে ‘মুছিন্না’ ছাড়া যবেহ করবে না। তবে সঙ্কটের অবস্থায় ছ’মাস বয়সী ভেড়া-দুম্বা যবেহ করতে পারবে। (মুছিন্না হল, ৫ বছর বয়সী উট, ২ বছরের গরু, মহিষ এবং ১ বছর বয়সী ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা -শরহুন নববী)। (সহীহ মুসলিম : ১৯৬৩)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মনিরুল ইসলাম ১৪ জুলাই, ২০২১, ২:০১ এএম says : 0
কোরবানি হলো মুসলিমদের একটি ইবাদত, যা প্রতি বছর বিত্তববানদের ওপর আরোপিত হয় নির্দিষ্ট সময়ে। এই ইবাদাতের মাধ্যমে মুসলিম মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করে থাকেন।
Total Reply(0)
Habib ১৪ জুলাই, ২০২১, ২:১৩ এএম says : 0
কুরবানী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বিশেষ অনুগ্রহ। কেননা বান্দাহ কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে
Total Reply(0)
Neamat Ullah ১৪ জুলাই, ২০২১, ২:১৪ এএম says : 0
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : «مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا» ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। [মুসনাদ আহমাদ, ইবন মাজাহ- ৩১২৩ হাদীসটি হাসান]
Total Reply(0)
নুর উদ্দিন ১৪ জুলাই, ২০২১, ২:৩৬ এএম says : 0
বিভিন্ন পরিসরে আমি খাসী করা পশু কোরবানী করা নিয়ে আমার সন্দেহের কথা ব্যক্ত করেছিলাম।এ ব্যপারে আমার সন্দেহ রয়েই গেছে।
Total Reply(0)
শেখ আল হেলাল ১৪ জুলাই, ২০২১, ৭:২৩ এএম says : 0
পশু কোরবানি করার জন্য আমাদের মধ্যে যে আগ্রহ উদ্দীপনা বিরাজ করে তা প্রশংসারযোগ্য। এমনিভাবে শুধু পশু কোরবানির মাধ্যমে নয়, দ্বীন-ইসলামের প্রতিটি ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল ইবাদত হালাল হারাম বিবেচনা পূর্বক আত্মার কুরবানী করার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা আবশ্যক। তবে হালাল-হারামের বিবেচনা আল কুরআন এবং আল হাদীসের আলোকে হতে হবে, "মনচাহি" মোতাবেক বিবেচনা করলে দুনিয়াও হারাতে হবে-আখিরাতও হারাতে হবে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন-আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন, আমীন।
Total Reply(0)
তুষার ১৪ জুলাই, ২০২১, ১২:২৪ পিএম says : 0
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পন্থায় কোরবানী দেয়ার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
আবদুল মান্নান ১৪ জুলাই, ২০২১, ১২:২৫ পিএম says : 0
হে আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ শর্ত ও নিয়ম মেনে কুরবানির পশু কেনার ও কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন