বিধিনিষেধ শিথিলের খবরে রাজধানীতে রাস্তাঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ১৫ তারিখ থেকে শপিং মল, দোকানপাট খোলা এবং গণপরিবহন চালুর খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় দৃশ্যপট। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। ফুটপাতের দোকান খুলেছে। মানুষজন রাস্তায় হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করছে বেশি। তবে অযৌক্তিক হলেই মামলা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, সরকারি নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫৫২ জনকে গ্রেফতার করা হযেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১১৯ জনকে ২ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ৬৯৬ গাড়িকে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, লকডাউনে আদেশ অমান্য করে অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হওয়ার অভিযোগে গত ১২ দিনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় ৭ হাজার ৮৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর গাবতলী চেকপোস্টে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে রাজধানী থেকে বাইরে যাচ্ছেন এবং ঢুকছেন অনেকেই। করোনা সংক্রমণের হার প্রতিনিয়ত বাড়লেও দেখে মনে হয় না যে, কারও মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। অপ্রয়োজনেই অনেকে প্রাইভেটকার নিয়ে বের হচ্ছেন, কেউবা মোটরসাইকেলে একাধিক যাত্রী পরিবহন করছেন। ট্রাফিক পুলিশের তল্লাশিতে পড়লে ঠুনকো যুক্তি দেখাচ্ছেন।
গাবতলী চেকপোস্টে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সৌরভ আহমেদ বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে এখনও অনেকের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই বাইরে বের হচ্ছেন। অযৌক্তিক কারণে অনেকেই বাইরে বের হচ্ছেন, বিষয়টি প্রতীয়মান হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে।
দায়িত্বরত আরেক ট্রাফিক সার্জেন্ট জহির বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা মাঠে রয়েছি। জরুরি প্রয়োজনে যেসব গাড়ি রাস্তা বের হচ্ছে, সেগুলো যেন নির্বিঘ্নে যেতে পারে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। রোদ-বৃষ্টি মাথায় রেখে আমরা ডিউটি পালন করে যাচ্ছি। ট্রাফিক সার্জেন্ট হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিটি গাড়ি তল্লাশি করছি। বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাইছি। তবে আজকে (গতকাল) যানবাহনের চাপ অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি।
শুধু গাতবলী এলাকা নয়, রাজধানীর অন্য চেকপোস্টগুলোতেই একই অবস্থা দেখা গেছে। শিথিলের খবরের পর থেকেই ঢিলেঢালাভাবেই পালন করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুর, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়ক ধরে অন্যান্য সব স্বাভাবিক দিনের মতোই কর্মমুখী মানুষ কর্মস্থলে ছুটেছেন যে যার মতো। অনেকেই ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত গাড়ি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের অফিস যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে। অনেকেই আবার রিকশাযোগে যাচ্ছেন গন্তব্যে, কেউ যাচ্ছেন মোটরসাইকেলে। চলছে জরুরি সেবার (ওষুধসহ নিত্যপণ্য) গাড়িগুলো। তবে সড়কে গাড়ি কম থাকায় সিগন্যালে খুব একটা থামতে হয়নি যানবাহনগুলোকে।
অন্যদিকে, গতকালও মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট চোখে পড়েছে। রাস্তায় টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও পুলিশের প্রিজন ভ্যানকে। কোনো গাড়িকে সন্দেহ হলেই তার গন্তব্যে যাওয়ার কারণ এবং কাগজপত্র খতিয়ে দেখছেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লায় যাচ্ছিলেন জাবেদ। তিনি একটি রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত রাস্তায় চলাচলে কোনো বাধা আসেনি। কয়েক জায়গায় আইনশৃংখলা বাহিনী যাতায়াতের কারণ জানতে চেয়েছে, বলার পরেই ছেড়ে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো কোনো সিগন্যালে দাঁড়াতে হচ্ছে না। রাস্তায় সকালের দিকে গাড়ি কম থাকায় দ্রুত গন্তব্যে চলে যেতে পারছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন