শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বেড়িবাঁধ-সড়ক ভেঙে যান চলাচল বন্ধ চরম দুর্ভোগে আনোয়ারা উপকূলবাসী

প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : উপকূলীয় জনসাধারণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ একটি বেড়িবাঁধ-সড়ক ভেঙে গিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে প্রায় এক মাস। আর যোগাযোগ বিপর্যস্ত অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে আনোয়ারা উপকূলবাসী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আনোয়ারা সমুদ্র উপকূলভাগে সিইউএফএল কারখানা থেকে সাপমারা খাল পর্যন্ত এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। সেই বেড়িবাঁধটি আনোয়ারার প্রত্যন্ত উপকূলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় একমাত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ‘বেড়িবাঁধ সড়ক’ হিসেবে স্থানীয় জনসাধারণ নিজেদের চলাচলে, সাগরে আহরিত মাছ এবং মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই বেড়িবাঁধ সড়কে ক্রমাগতভাবে ভাঙন সৃষ্টি হয়ে এখন তা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। বেড়িবাঁধ সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় বর্তমানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আনোয়ারা উপকূলবাসীকে। তাছাড়া এই বেড়িবাঁধ সড়কটি আনোয়ারার আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র পারকী সমুদ্র সৈকতের সাথে সংযুক্ত ছিল। তবে ভাঙনের কারণে পারকীতে পর্যটকদের আসা-যাওয়া গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, সিইউএফএল থেকে সাপমারা খাল পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি আনোয়ারা উপকূলবাসীর বিরাট অংশের যাতায়াত সুবিধার জন্য বেড়িবাঁধ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। বাঁধের আশপাশের বাসিন্দাদের যোগাযোগ ও আহরিত সামুদ্রিক মাছ পরিবহনের জন্য এই বাঁধ সড়কটিই অন্যতম মাধ্যম। বেড়িবাঁধের এ সড়ক দিয়ে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও চলাচল করে ভ্যান, অটোরিকশা ও রিকশা। কিন্তু সম্প্রতি বেড়িবাঁধ সড়কে আরও ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে সবধরনের যানবাহন চলাচল ও মালামাল পরিবহন।
এলাকাবাসী জানান, বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে বেড়িবাঁধ। বারো আউলিয়া, মালিয়াপাড়া ও গলাকাটা ঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধ সড়কটি ভেঙে অনেক সংকুচিত হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন এসব জায়গা পার হতে হচ্ছে পায়ে হেঁটে। গলাকাটা ঘাট এলাকার দক্ষিণে কোন ধরনের যানবাহন আর চলাচল করছে না। পারকী সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে দক্ষিণে বারো আউলিয়া পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে চলাচল করে আনোয়ারা উপকূলের বাসিন্দারা। অভ্যন্তরীণ ভাল সড়ক না থাকায় এ বাঁধ দিয়ে সামুদ্রিক মাছ পরিবহন ছাড়াও আনোয়ারা সদর এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় ছিল।
এদিকে গতবছর সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে জালোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ সড়ক আরও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর যানবাহন চলাচল কমে যায়। এবারের বর্ষা মৌসুমে বেড়িবাঁধ সড়কটি আরও ভেঙে যায়। ফলে গত একমাস যাবত সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকাবাসী পড়েছে চরম বিপাকে। জনসাধারণের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম বেড়িবাঁধ সড়কটিতে এখন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ৫/৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় পায়ে হেঁটে। চট্টগ্রাম শহর থেকে স্থানীয় দোকান-পাটে মালামাল আনাও বন্ধ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯১ সালে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়-জালোচ্ছ্বাসের পর চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) থেকে সাপমারা খাল পর্যন্ত এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মিত হয় বিশ্বব্যাংকের সহায়তায়। আর পরবর্তী সময়ে উক্ত বেড়িবাঁধই হয়ে ওঠে আনোয়ারার প্রত্যন্ত সমুদ্র উপকূলবর্তী জনসাধাারণের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একমাত্র অবলম্বন হিসেবেই। এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি উক্ত বেড়িবাঁধ সড়ক অনতিবিলম্বে সংস্কার-মেরামতের ব্যাপারে জোরালো তাগিদ দিয়ে বলেছেন, এই বেড়িবাঁধ সড়কটি মজবুতভাবে সংস্কার করা হলে মালামাল পরিবহন ও স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলে বর্তমান দুর্ভোগের অবসান হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন