শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টিকা কেনার বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা যাবে না : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কৌশলগত সমস্যার কারণে চীন থেকে করোনা টিকা কেনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আপনারা যদি প্রশ্ন করেন, আমরা আগে একবার পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম। আবারও পড়ার সম্ভাবনা আছে। এ পারচেজগুলো সিলেকটিভ পারচেজ। এগুলোর সম্পর্কে টেকনিক্যাল ডিটেইলস বলা সম্ভব হচ্ছে না। এগুলো সম্পর্কে ফর টেকনিকাল রিজন আমরা আপনাদের ডিটেল বলতে পারি না। আমার বিশ্বাস আপনারা এটা বুঝবেন এবং আমার সাথে একমত পোষণ করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠকে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা আগে যে প্রাইসে পেয়েছিলাম তার চেয়ে কমে পাচ্ছি। তবে, টিকার আগের ও বর্তমান মূল্য জানাননি তিনি। কতদিনের মধ্যে এই টিকা আসবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংসহ সবকিছু করা হয়েছে। দিনক্ষন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলতে পারবেন। ভারত বা চায়না থেকে পাঁচ ডলার ও ১০ ডলারে টিকা কেনা হয়েছে। কিন্তু, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে প্রতি ডোজ টিকা তিন হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। এখানে তাহলে তিন হাজার টাকা প্রতি ডোজে খরচ হলো? একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা আজকে যে প্রকল্প তার সম্পর্কে আলাপ করবো যতদূর করা যায়। বাকিটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জেনে নিতে হবে।

বৈঠক শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার কর্তৃক চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল থেকে চুক্তিবদ্ধ ১৫ মিলিয়ন ডোজের মধ্যে অবশিষ্ট ১৩ মিলিয়ন ডোজ এবং নতুন প্রস্তাবিত দুই মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনসহ মোট ১৫ মিলিয়ন ডোজ আগের চুক্তিপত্রে উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে সিনোফার্ম ভ্যাকসিন সাপ্লিমেন্ট এগ্রিমেন্ট-১ এর আওতায় সরবরাহ এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ১৫ মিলিয়ন ডোজ অতিরিক্ত টিকা প্রয়োজন হলে, সরবরাহের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এর আগে, গত ২৭ মে চীনের সিনোফার্মের তৈরি দেড় কোটি ডোজ করোনা টিকা সরাসরি ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছিল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

ইতোমধ্যে চীন থেকে কেনা ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছেছে। এ ছাড়া, উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে গতকালের সভায় ভ্যাকসিন ক্রয় ছাড়া ৪টি ক্রয় প্রস্তাবে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৭৫১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া দর সংশোধনের একটি প্রস্তাবে ব্যয় কমেছে ৩ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের জানান, ‘সিনোফার্ম ভ্যাকসিন সাপ্লিমেন্টাল এগ্রিমেন্ট-১’-এর আওতায় চীনা প্রতিষ্ঠান ‘সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল’ থেকে চুক্তিবদ্ধ ১ কোটি ৫০ লাখ ডোজের মধ্যে অবশিষ্ট ১ কোটি ৩০ লাখ ডোজ এবং নতুন প্রস্তাবিত ২০ লাখ ডোজসহ সর্বমোট দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতায় কেন্দ্রীয় ঔষধাগার এই ভ্যাকসিন আমদানি করবে। ইতোপূর্বে চুক্তিপত্রে উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে বৈঠকে জানান তিনি।

কতদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন আসবেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আছে, তারা বলতে পারবে ঠিক কোন সময়ে আসবে। এটা নিয়ে সবকিছু করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক করা হয়েছে, এখন এটার ডিটেইলস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানতে পারবেন।

অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কার্গো আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কার্গোটি আমদানি করবে পেট্রোবাংলা। এতে এলএনজি’র পরিমাণ ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ‘এওটি ট্রেডিং এজি’ এই কার্গো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৪৩৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

শামসুল আরেফিন জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ‘বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘রাইটস লিমিটেড’ ও ‘আরভী এসোসিয়েটস আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন জানান, বৈঠকে বিসিআইসি থেকে নরসিংদী জেলায় অবস্থিত ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ প্রকল্প বাস্তবায়নে যৌথভাবে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছেÑ মিশরের ‘আরব কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স মোহররম বাখুয়াম’ ও ‘ন্যাশনাল মেইন্টেন্যান্স কো-অপারেশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস’ এবং দেশিয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড’। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

তিনি জানান, বৈঠকে বিসিআইসি থেকে ‘ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড’ (ডিএপিএফসিএল)-এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দশ হাজার মেট্রিক টন করে তিনটি লটে দুবাই ভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান এই এসিড সরবরাহ করবে। এর মধ্যে ১ম ও ৩য় লটটি (মোট ২০ হাজার মেট্রিক টন) সরবরাহ করবে ‘জেনট্রেড এফজেডই’ (স্থানীয় এজেন্ট: মেসার্স দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন, ঢাকা)। দ্বিতীয় লটটি (১০ হাজার মেট্রিক টন) সরবরাহ করবে ‘সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই’ (স্থানীয় এজেন্ট: মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা)। তিনটি লটে মোট ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন জানান, এছাড়া ‘এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানী লিমিটেড’-এর তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপনে ব্যয় হ্রাস হওয়ায় এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি সংশোধনের (ভেরিয়েশন) প্রস্তাব বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা কমে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। কারখানা স্থাপনের কাজটি করছে ‘মেসার্স বাংলাদেশ ফাউন্ড্রি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড’।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন