শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির মধ্যেই ঈদ উপলক্ষে কঠোর লকডাউন শিথিল করে গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দিয়েছে সরকার। কোরাবানির ঈদে শপিংমলে তেমন ভীড় না থাকলেও কোরবানির পশুর হাট এবং শহর থেকে গ্রামমুখী মানুষের জনস্রোতকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছে সংঘবদ্ধ- পেশাদার অপরাধিচক্র। বুধবার পর্যন্ত কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনা সদস্যরা রাস্তায় থাকলেও সংবদ্ধ অপরাধিরাও সমান্তরালভাবে মাঠে নেমেছে। করোনাকালীন ঈদযাত্রায় বড় ধরণের সংক্রমণের ঝুকি সম্পর্কে যখন সর্ব মহলে উদ্বেগ আশঙ্কা ভর করেছে, তখন ছিনতাইকারি, মলমপার্টি ও অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা থেমে নেই। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছদ্মবেশ ধারণ করা একটি অপরাধিচক্রের চার সদস্যকে মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এসব অপরাধি সড়কে চেকপোষ্ট বসিয়ে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে রাস্তার গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি, জিম্মি ও ডাকাতি করে টাকা আদায় করতো। তাদের কাছ থেকে ডিবির জ্যাকেট, অবৈধ অস্ত্র, ওয়াকিটকি , ওয়্যারলেস সেট, খেলনা পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা আগেও একাধিকবার ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রেফতার হলেও আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আবারো একই কাজে লিপ্ত হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে জানানো হয়।

ঈদের সময় হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এই টাকার একটি অংশকে টার্গেট করে মাঠে নামে অপরাধিচক্র। এবারের এই করোনা লকডাউন পরবর্তী স্বল্প সময়ের ঈদ বাজার উপলক্ষে পকেটমার, প্রতারক, ছিনতাইকারী-ডাকাত, জালটাকার কারবারির পাশাপাশি আরেকটি চক্র সাধারণ মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে ডিবি পরিচয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এমনকি লকডাউনেও নির্জন রাজপথে ওত পেতে থাকা ছিনতাইকারিরা বিপদে পড়ে রাস্তায় বের হওয়া মানুষের সবকিছু ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এ ধরণের ছিনতাইয়ে জড়িত পুরো চক্রকেই নিজেদের কব্জায় নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে কোথায় কার নেতৃত্বে কোন চক্র সক্রিয় রয়েছে এমন রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও এরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। তবে এবার তালিকা ধরে ধরে সবগুলো চক্রের সদস্যদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। লোক দেখানো ও স্বল্পস্থায়ী অভিযান আগেও বিভিন্ন সময়ে চালানো হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য থেকেই বেরিয়ে এসেছে, গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে বেরিয়ে এসে তারা আবারো একই অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো হলে কোনোভাবেই অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়।

করোনাকালে কর্মহীন অনেক মানুষ যেমন নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, অন্যদিকে পেটের টানে বা বিপদে পড়ে রাস্তা বের হওয়া সাধারণ মানুষ এদের হাতে সর্বস্ব হারাচ্ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে, ব্যবসায়ী ও স্বচ্ছল লোকদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে আটক করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যের অপরাধমূলক বেপরোয়া তৎপরতার সুযোগে সংঘবদ্ধ অপরাধিরা ভুয়া পরিচয়ে অনুরূপ তৎপরতায় লিপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ও জিম্মি নাটকের সুযোগ পাচ্ছে। এ ধরণের তৎপরতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেআইনী তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি-ডাকাতির এই চক্র যেন আইনগত দুর্বলতা বা পুলিশের দুর্বল তদন্ত রিপোর্টের সুযোগে আর ছাড়া না পায় সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ঈদের বাজার তথা কোরবানির পশুর হাট ও সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারি মানুষদের টার্গেট করে মাঠে নামা ছিনতাইকারি, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, জালটাকার কারকবারিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হাট-বাজার, সড়ক-মহাসড়ক, বাস-ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চঘাটে ওত পেতে থাকা এসব অপরাধির পাশাপাশি রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের ফাঁকা বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের গ্রিল ও তালাভাঙ্গা চোরদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকতে হবে। প্রতিবেশির ফাঁকা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখলে অনেক অপরাধ ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নজরদারির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন