শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

ইন্দোনেশিয়ায় মহামারি চরমে, ঘরে ঘরে লাশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২১, ১২:০৬ এএম

বাড়ির ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করছেন দমকল বাহিনীর কর্মীরা। অনেকেই মারা গেছেন অক্সিজেন সংকটের কারণে। মৃত্যুর সময় তাদের পাশে কেউ ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেশীরা উদ্ধার কর্মীদের খবর দিয়েছে আসার জন্য। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুতে ইন্দোনেশিয়ার পরিস্থিতি এখন এরকমই দাঁড়িয়েছে।

বিবিসির ইন্দোনেশিয়া সার্ভিসের সাংবাদিক ভালদিয়া বারাপুতরি লিখেছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে সম্প্রতি এশিয়ায় করোনাভাইরাস মহামারির নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া। ভারতে যেমন করোনা বিস্ফোরণের জেরে সারি সারি চিতা জ্বালানোর দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, অনেকটা সেভাবেই সারি সারি নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়ায়।

গত দেড় বছরের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে তিনি জানান। দেশটিতে এখনো পর্যন্ত ২৬ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপদের শুরুটা হয়েছিল ঈদুল ফিতরের ছুটির হাত ধরে। গত ঈদে ইন্দোনেশিয়ায় করোনাবিধি অমান্য করে অন্তত ১৫ লাখ লোক ছুটি কাটাতে বিভিন্ন শহরে ছুটেছিলেন। আজ তারই খেসারত দিচ্ছে দেশটি। তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
ইন্দোনেশিয়ায় এ পর্যন্ত ২৭ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। রোগীর চাপে ভেঙে পড়তে বসেছে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

মরদেহ বের করছে দমকল বাহিনী
জাকার্তায় দীর্ঘদিন ধরে দমকল কর্মীর কাজ করেন উইরাওয়ান। তবে গত বছর থেকে আগুন নেভানোর বদলে তাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুধু তিনিই নন, একই কাজ করছেন দমকল বাহিনীর আরও অনেক কর্মী।
উইরাওয়ান জানান, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে পুরোপুরি একাকী অবস্থায়। সম্ভবত চিকিৎসা না পেয়ে ঘরের ভেতর ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন তারা।
উইরাওয়ান বলেন, অনেক সময় প্রতিবেশীরা আমাদের কল দিয়ে বলেন, তারা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। পরে আবিষ্কার করেন, তিনি মারা গেছেন। এ ধরনের ঘটনা আমরা রোজ দেখছি।
সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির আগে দৈনিক দুই থেকে তিনটি মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করতে হতো এ দমকলকর্মীকে। এখন তিনি প্রতিদিন ২৪টির মতো কল পাচ্ছেন, যা তার ক্ষমতার বাইরে।

দায়ী সরকারের ঢিলেঢালা মনোভাবও
ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির পেছনে বড় দায় রয়েছে তাদের সরকারেরও। দেশটি কখনোই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করেনি। কেবল কোয়ারেন্টাইনের সময় আটদিন করা হয়েছে সম্প্রতি, এতদিন এর বাধ্যবাধকতা ছিল পাঁচদিনের। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত খোলা রেখে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
সরকারি হিসাবে, ইন্দোনেশিয়ায় করোনায় মৃত্যু ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে সেখানে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে এক হাজারের বেশি মানুষের। অবশ্য বিভিন্ন মহলের দাবি, দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়েও অনেক বেশি।

ইন্দোনেশিয়ার একটি স্বতন্ত্র তথ্য বিষয়ক সংগঠন বলছে, গত জুন থেকে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে চারশ মানুষ বাড়িতে মারা গেছেন, যারা হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে সেলফ-আইসোলেশনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

অক্সিজেন সংকট
ইন্দোনেশিয়ায় করোনা সংক্রমণের অন্যতম প্রধান হটস্পট জাভা দ্বীপ। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহান্তে ইয়োগাকার্তার একটি হাসপাতালে অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে ছটফট করতে করতে মারা যান ৬৩ জন করোনা রোগী। এ ঘটনা পুরো দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে নতুন রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয়।

ইন্দোনেশিয়ার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে, সেটি সরকার অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেজন্যই অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে।
অক্সিজেন সংকটের কারণে ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ অক্সিজেন স্টোর বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়েকটি অক্সিজেন স্টোর খোলা রয়েছে, সেখানে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অক্সিজেন সংকটের এই সময়ে অনেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। টাকা দিয়েও অক্সিজেন পাচ্ছেন না। সূত্র : বিবিসি বাংলা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
MD Sabbir Ahmed ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:২০ এএম says : 0
আমাদের দেশের মানুষ যে পরিমান অসচেতন ইন্দোনেশিয়া কিংবা ভারতের মত অবস্থা হওয়া সময়ের দাবি মাএ। আল্লাহ ভালো জানে কি হয়
Total Reply(0)
Lukan Ahmad ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:২০ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ ইন্দোনেশিয়া সহ সারা বিশ্বে করোনায় বিপর্যস্ত সমগ্র মানব জাতিকে রক্ষা কর মা'বুদ...আর এখনো আমাদের দেশের অনেক আম পাবলিক করনো নিয়ে ঠাট্টা - তামাশা করে তাদের হেদায়াত দাও।
Total Reply(0)
হাসিন ফাইয়াজ নুর ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:২১ এএম says : 0
শীঘ্রই হয়তো এই অবস্থা বাংলাদেশও দেখা যাবে। আবেগপূর্ণ বাঙ্গালী, জীবনের চেয়ে উৎসবের গুরুত্বই বেশি দেয়।
Total Reply(0)
Abul Mansur ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:২১ এএম says : 1
ঈদের কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশের লকডাউন শিথিল। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
Total Reply(0)
Sheikh Rajib ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:২১ এএম says : 0
ইন্দোনেশিয়ার থেকে বেসি পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ দেখুন খুব তারাতারি এমন হবে এই দেশেও ,এতো মানুষ মারাজাচ্ছে এখানে তার পরেও এদের ঈদ করতেই হবে মারকেট খুলতে হবে , কি জালা লকডাউন দিলেও দোস লকডাউন না দিলেও দোস ,এই দেশের মানুষ নিয়া সরকার পরছে বিপদে
Total Reply(0)
Anup Saha ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:২২ এএম says : 0
অনেকেই সরকারের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করেছেন। সরকার কোন পথে হাটবে? লক-ডাউন দিলে জনগণ হৈচৈ করবে তাদের রুটি-রুজিতে আঘাত হানা হচ্ছে আবার লক-ডাউন শিথিল করলে বলে সংক্রমণে সাহায্য করছে। উভয়সঙ্কট!
Total Reply(0)
Md Princh Khan ১৭ জুলাই, ২০২১, ৫:২৩ এএম says : 0
ইন্দোনেশিয়ায় কোনো বিপর্যয় নয়, এটা এখন স্বাভাবিক, বাংলাদেশে এখন গড়ে ১২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে,যদি এ-ই সংখ্যা দ্বিগুণ হয় তাতে বর্তমান অবস্থা দেখে বুঝতে পারি কোন বিপর্যয় হবে না ইনশাল্লাহ, করোনাকে করোনার মত চলতে দিন আর মানুষকে তার মত চলতে দিন, এটাই স্বাভাবিক, লকডাউন, সীমিত পরিসরে লকডাউন, লকডাউন শিথিল এগুলো কোন সমাধান নয়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন