শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চীনকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় নইলে মিত্র হারাবে যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আশাবাদীরা মনে করেন যে, চীনকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্বাগত জানানো হলে দেশটি একটি ‘দায়ীত্বশীল অংশীদার’ হয়ে উঠবে এবং রাজনৈতিক সংস্কার ঘটবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার প্রশাসন বিশ^াব্যাপী এ ধারণাটি ছড়িয়ে দিতে চান যে, চীন ‘সহাবস্থানে কম আগ্রহী এবং আধিপত্যের প্রতি বেশি আগ্রহী।’
যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো সাধারণ আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করতে ইচ্ছুক হলেও তাদের মূল লক্ষ্য হ’ল চীনের উত্থানকে ঠেকিয়ে দেয়া। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব শক্তিকে জোরদার করা এবং বিদেশে তার মিত্রদের সাথে কাজ করা, যা দেশটির অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত, ক‚টনৈতিক, সামরিক এবং পররাষ্ট্র নীতির পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে। তবে বাইডেনের চীনবিরোধী এসব পরিকল্পনা কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিপত্তি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র চাক, বা না চাক, একাধিক অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন ক্রমইে একটি প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠছে। চীন অচিরেই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং দেশটি ইতিমধ্যে আমেরিকার থেকে প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী অংশীদার। তাই বর্তমান বিশ^ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে অতি রঞ্জিত করে দেখানো যুক্তরাষ্ট্র চীনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সম্ভাব্য কতগুলি মিত্র হারাবে, সেই সংখ্যাটিকে খাটো করে দেখছে বাইডেন প্রশাসন।

ইউরোপের মূল রফতানি শক্তি জার্মানি চীনের সাথে বাণিজ্যিক সংযোগগুলি বজায় রাখান জন্য এমনকি রাজনৈতিক সংযোগগুলোও চাঙ্গা রাখছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য আমেরিকা এবং সমৃদ্ধির জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। এই দুই পরাশক্তির মধ্য থেকে পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করা হলে, অনেক দেশই সোজা চীনকে বেছে নেবে।
বিশ^ মোড়ল হিসাবে মার্কিন শক্তি বাড়ানোর পরিবর্তে বাইডেন প্রশাসন চীনকে হুমকি হিসেবে ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব এজেন্ডা আরও বাড়িয়ে তুলছে। বাইডেনের চীন বিরোধী মতবাদটি শিল্প নীতি, সরকারী হস্তক্ষেপ, পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রণে পূর্ণ, যা কথিত চীনা বৈশিষ্ট্যগুলিকেই অনুসরণ করে চলেছে।

গত মাসে প্রকাশিত সেমিকন্ডাক্টর, ব্যাটারি, বিরল পদার্থ এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের উপাদানগুলির জন্য ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ চেইনের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের প্রতিবেদনটি এই শিল্পগুলিতে কেবলমাত্র জাতীয়-নিরাপত্তার বিষয়গুলিকেই নয়, পাশাপাশি, ঐক্য, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আরও অনেক কিছুতেই সরকারী হস্তক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এটিকে আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করলেত চাইলে বাইডেনকে মার্কিন সীমান্তের ভেতরেই চাকরি এবং উৎপাদনগুলো নিশ্চিত করতে করতে হবে।
অনিবার্যভাবে, বাইডেনের অভিযোগ চীনের শিনজিয়াংয়ে জোর পূর্বক শ্রম ব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষত উইঘুরদের বিষয়ে। আবহাওয়া পরিবর্তন সম্পর্কিত তার নীতিমালার কেন্দ্রবিন্দুটি হ’ল, নবায়নযোগ্য শক্তিগুলোর ওপর নির্ভরশীল হওয়া। এদিক থেকেও চীনকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ শিনজিয়াং হ’ল বিশ^ব্যাপী সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত সিলিকনের ৪৫ শতাংশের উৎস।

অন্য সমস্যাটি হ’ল, বাইডেনের চীন-মতবাদ আমেরিকার মিত্রদের আরও সতর্ক করে তুলবে। যদি চীনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে আমেরিকাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, তবে মিত্রদের প্রশ্ন হবে যে, এতে তাদের লাভটা কোথায়?
আমেরিকা যদি চীনকে বৈশ্বিক আধিপত্য পুনর্র্নির্মাণ থেকে বিরত রাখতে চায়, তাহলে তার উচিত বিশ্বায়নের ধারাটিকে রক্ষা করা। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই চীনকে এশিয়ায় মোকাবেলা করতে চায়, তাহলে তার উচিত হবে ২০১৬ সালের প্যান-এশীয় বাণিজ্য চুক্তিতে পুনরায় যোগদান করা। এখন যদিও আর কোনও আশা নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত পরিবেশ এবং ডিজিটাল বাণিজ্যের বিষয়ে নতুন চুক্তি সন্ধান করতে পারে।
পশ্চিমা আধিপত্যকে শক্তিশালী করে এমন নতুন ধারণাগুলোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ঢালা উচিত, যেমন ভবিষ্যতের মহামারি, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, সাইবার-নিরাপত্তা এবং চীনের বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য একটি শক্তিশালী অবকাঠামো প্রকল্প। চীনের প্রযুক্তি-জাতীয়তাবাদকে নকল করার পরিবর্তে আমেরিকার উচিত পশ্চিমকে আরও আত্মবিশ্বাসী করার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন